রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ: আড়াই ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু
Published: 11th, June 2025 GMT
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী রেলস্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় লোকজন। এতে ঈদের ফিরতি যাত্রায় সারাদেশের সঙ্গে রাজশাহীর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আড়াই ঘণ্টা ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর ৮টা ৪৫ মিনিটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নন্দনগাছী স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই লাল কাপড় টাঙিয়ে খুলনাগামী সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস থামিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। তারা স্টেশন চত্বরে অবস্থান নিয়ে স্টেশন সংস্কার ও আন্তঃনগর ট্রেন থামানোর দাবি-সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন তুলে ধরেন।
এদিকে সকাল সাড়ে ৬টায় নন্দনগাছী স্টেশনে সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস আটকে পরার পর রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস ও মেইল ট্রেন পথে আটকা পড়ে। আড়াই ঘণ্টা পর ট্রেন চালু হলেও শিডিউল বিপর্যয় শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে আটকা পড়া সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেসের যাত্রী নোমানুর রহমান বলেন, রাজশাহীতে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে পরিবার নিয়ে যশোরে নিজ বাড়িতে ফিরছি। আন্দোলনের কারণে ট্রেন আটকা পড়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরা তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছে। সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে আন্দোলন না করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।
আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে আছে- সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও ঢালার চর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি এবং নন্দনগাছী স্টেশনের সংস্কার।
জানা গেছে, ১৯২৯ সালে চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়নে নন্দনগাছী স্টেশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শতবর্ষী স্টেশনটি দিয়ে প্রতিদিন ১৬টি ট্রেন যাতায়াত করলেও কোনো আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রাবিরতি দেয় না। শুধু দুইটি লোকাল ট্রেন থামে। নিয়ম অনুযায়ী এই স্টেশনে স্টেশনমাস্টার, টিকিট মাস্টার, পোর্টারম্যান, পয়েন্টসম্যান, গেটম্যানসহ জনবল ছিল ১২ জন। বর্তমানে শুধু পোর্টারম্যান পদে একজন কর্মরত আছেন। গত এক যুগ ধরে স্টেশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এর আগে, গেল ১ মে একই দাবিতে ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করেছিল রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া উপজেলার হাজারও মানুষ। এ সময় রাজশাহী থেকে চিলাহাটিগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও লোকাল মেল ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এতে প্রায় চার ঘণ্টা সারাদেশের সঙ্গে রাজশাহীর রেলযোগাযোগ বন্ধ ছিল। পরে রেল কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি ১ জুনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন বন্ধ করেছিলেন তারা।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরেও দাবি মেনে না নেওয়ায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে আবারো রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনের সমন্বয়কারী তারিকুল ইসলাম জনি বলেন, তিন উপজেলার ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র স্টেশনটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এখন ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে স্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। বিগত সরকারের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেননি। গতদিন আন্দোলনের পর রেল কর্তৃপক্ষ একইভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি। এবারও আড়াই ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ সাহেব দায়িত্ব নিয়ে ট্রেন চালু করেছেন।
জিআরপি ইশ্বরদী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, অবরোধের কথা শুনে আমরা নন্দনগাছী এসেছি। স্থানীয়রা বিভিন্ন দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেছে। এখন ঈদের ফিরতি যাত্রা চলছে, এজন্য ট্রেনে অনেক চাপ। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আমরা কাজ করছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক লিয়াকত শরীফ খান বলেন, ঈদের ছুটি শেষে মানুষ কর্মস্থলে ফিরছে। এ সময় অবরোধ করে রেল যোগাযোগ বন্ধ করা হলে তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। আমরা রেল সেবা নিশ্চিত করতে ঈদের ছুটিতে না গিয়ে কাজ করছি। কিন্তু উনারা এখন আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এখন আন্দোলন না করে ঈদের ছুটির পর অফিস খুললে সেখানে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র লপথ অবর ধ র লপথ অবর ধ য গ য গ বন ধ স গরদ
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।