দুই দিনেই ২৮ উইকেট, কামিন্সের কীর্তির পর রাবাদা–এনগিডির তোপ
Published: 12th, June 2025 GMT
দক্ষিণ আফ্রিকার ভরসা হয়ে ছিলেন ডেভিড বেডিংহাম। প্যাট কামিন্স তাঁকে নিজের পঞ্চম শিকারে পরিণত করার পর লর্ডসের ব্যালকনি থেকে হাসিমুখে করতালি দিতে শুরু করলেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। হয়তো ১৭ বছর আগের স্মৃতি মনে করে...
নিউজিল্যান্ডের সাবেক স্পিনার ভেট্টোরি এখন অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচ। লর্ডস টেস্টে কামিন্সের আগে ২০০৮ সালে সর্বশেষ অধিনায়ক হিসেবে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব তাঁরই। কামিন্সকে নিয়ে মোট চার অধিনায়ক এমন কীর্তি গড়লেন।
বেডিংহামের পর কাগিসো রাবাদাকেও আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস মুড়িয়ে দিয়েছেন কামিন্স। ৩২ বছর বয়সী এই পেসার ২৮ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট, যা লর্ডসে ১৪১ বছরের টেস্ট ইতিহাসে কোনো অধিনায়কের সেরা বোলিং। সেটাও কিনা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে!
কামিন্সের তোপেই দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩৮ রানে গুটিয়ে গেছে। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া নিয়েছে ৭৪ রানের লিড। আজ ফাইনালের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়াও স্বস্তিতে থাকতে পারেনি। কামিন্সদের দলকে কড়ায় গণ্ডায় জবাব দিয়েছেন কাগিসো রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিডি। তাতে অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে ১৪৪ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে।
দুই পেসার রাবাদা–এনগিডি সমান ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন। বাকি দুই শিকার অন্য দুই পেসার মার্কো ইয়ানসেন ও উইয়ান মুল্ডারের। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার কেউ এখন পর্যন্ত ফিফটির দেখা পাননি। সর্বোচ্চ ৪৩ রান এসেছে উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারির ব্যাট থেকে।
৭৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে এক রকম ধুঁকছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর অষ্টম উইকেটে মিচেল স্টার্কের সঙ্গে ৬১ রানের জুটি গড়ে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছেন ক্যারি। দিনের একদম শেষ ভাগে তিনিও আউট হয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার কিছুটা স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে।
লর্ডসে যেন দিনভেদে সমান্তরালে উইকেট পড়েছে। কাল প্রথম দিনে পড়েছিল ১৪ উইকেট, আজ দ্বিতীয় দিনেও আউট হয়েছেন ১৪ ব্যাটসম্যান। তবে দুই ইনিংস মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া ২১৮ রানের লিড নিয়ে ফেলেছে। আগামীকাল নাথায় লায়নকে (১*) নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করবেন স্টার্ক (১৬*)।
ইতিহাস বলছে, লর্ডসে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একবারই টেস্ট জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সেই ১৯৯৮ সালে। ওই বছরই ঢাকায় অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (তখনকার নাম আইসিসি নকআউট ট্রফি) জিতেছিল প্রোটিয়ারা, যা এখন পর্যন্ত তাদের একমাত্র বৈশ্বিক শিরোপা।
তবে লর্ডসে চতুর্থ ইনিংসে কখনো ১১৯ রানের বেশি করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।
রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।
নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।
আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।
রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।
‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।
একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।
রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।
যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।
পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার
আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩