বান্দরবানে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তা ঢালাই, কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের উদ্বেগ
Published: 21st, June 2025 GMT
বৃষ্টির মধ্যেই বান্দরবানে দুইদিন ধরে চলছে সড়ক উন্নয়নের আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জেএসএস গলিতে এই কাজ চলমান রয়েছে, যেখানে একপাশে রয়েছে বান্দরবান সরকারি গার্লস হাইস্কুল এবং অন্য পাশে ট্রাফিক মোড় হয়ে উজানী পাড়ার সংযোগ সড়ক।
দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন এই গলিতে কাজ শুরু হলেও এখন বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই চলায় কাজের গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী জানান, গত তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে বান্দরবানে। এমনকি রাতে ভারী বর্ষণে সড়কে পানি জমে থাকলেও শ্রমিকরা থেমে নেই। গতকাল শুক্রবার ও শনিবার (২১ জুন) ভেজা পরিবেশে সকাল থেকে চলছে সিমেন্ট, বালু ও কংক্রিট ঢালাই। তাদের অভিযোগ, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করাই ঠিকাদারদের মূল লক্ষ্য, তাই প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
নড়াইলে ভারী বৃষ্টিতে আঞ্চলিক সড়কে ধস
লক্ষ্মীপুরে ৬ দিনে ২০৭.
সংশ্লিষ্ট অফিসের তথ্য বলছে, বান্দরবান পৌরসভার অধীনে সড়কটির কাজ হচ্ছে। সড়কটি প্রায় ১৫০ মিটার দীর্ঘ। সড়কটিতে আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬০ লাখ টাকা। কাজটি ইউটিং মং মারমার লাইসেন্সে হলেও প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন করছেন সায়ন চৌধুরী নামে আরেক ঠিকাদার।
স্থানীয় বাসিন্দা মংক্যপ্রু মার্মা বলেন, “এই রাস্তাটি অনেক বছর ধরে সংস্কার করা হয়নি। চলাচলে সাধারণ মানুষদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক দাবির পর, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ আসে। আশা করেছিলাম, মানসম্মত কাজ হবে। বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই করে যে কাজ হচ্ছে, তা খুব বেশিদিন টিকবে না।”
অপর বাসিন্দা সুইক্য মং মার্মা বলেন, “মানুষের ট্যাক্সের টাকায় যদি এভাবে কাজ হয়, তাহলে উন্নয়ন না করাই ভালো ছিল। অন্তত টাকাটা অপচয় হতো না।”
স্থানীয় এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কংক্রিট ঢালাইয়ের জন্য আবহাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টিতে ঢালাই করলে কংক্রিটের অনুপাত নষ্ট হয়, ফলে পরে ফাটল, গর্ত বা দেবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা ঠিকাদারের প্রকৌশলগত ভুল সিদ্ধান্ত।
বৃষ্টির মধ্যে ঢালায়ে বিষয়ে প্রকল্পের কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সায়ন চৌধুরী বলেন, “কাজটা ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে। না হলে জামানতের টাকাসহ কাজের বিলের সবটাকা আটকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই বাধ্য হয়েই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই করছি।”
বান্দরবান পৌরসভার অফিসের মাঠে কাজে তদারকির দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী (ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট) সত্যজিত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় ঢালাই করার কথা ছিল না। নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের ফোন পেয়ে এসে দেখি বৃষ্টির মধ্যে কাজ চলছে। স্যারের নির্দেশে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
বান্দরবান পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বলেন, “আমাদের ওপর জুন ক্লোজিংয়ের চাপ থাকে, তাই অনেক সময় ঠিকাদারদের কাজ অনুমোদন করতে হয়। তবে বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরো বলেন, “গত সপ্তাহেও এ রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে কাজ করার চেষ্টা করেছিল, তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারি ছুটির দিন, তাই কাজ করার অনুমতি ছিল না। যদি প্রমাণ হয়, বৃষ্টির মধ্যেই ঢালাই করা হয়েছে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও লাইসেন্সধারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বান্দরবান আবহাওয়া অধিদপ্তরের অফিসার ইনচার্জ সনাতন কুমার মন্ডল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আজ (শনিবার) সকাল ৯টা পর্যন্ত বান্দরবানে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
ঢাকা/চাইমং/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ ব ন দরব ন ঢ ল ই কর প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
এক সময় ছিলেন এক গুরুর শিষ্য, দ্বন্দ্বে জড়িয়ে খুন দুজনই
বিদেশে বসে চট্টগ্রামের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ। চাঁদাবাজি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে তাঁর ডানহাত হিসেবে কাজ করতেন ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন বাবলা ও আকবর আলী ওরফে ঢাইকাইয়া আকবর। ১০ বছর আগে সাজ্জাদের দল থেকে বেরিয়ে নিজেরাই পৃথক দল গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা। প্রায় ছয় মাসের ব্যবধানে দুজনই খুন হলেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠায় নিজের এক সময়কার দুই শিষ্যকে সরিয়ে দিয়েছেন সাজ্জাদ আলী।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নগরের পাঁচলাইশ চালিতাতলী এলাকায় বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগের সময় ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন বাবলার ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে ২৩ মে আরেক শিষ্য আকবর আলী ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকেও গুলিতে খুন হন।
পুলিশ জানায়, চাঁদা না পেলেই গুলি ছোড়েন সাজ্জাদের অনুসারীরা। নগরের চান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামী ও পাঁচলাইশ এবং জেলার হাটহাজারী, রাউজানসহ পাঁচ থানার পাঁচ লাখের বেশি মানুষকে সাজ্জাদের বাহিনীর কারণে আতঙ্কে থাকতে হয়। ৫ আগস্টের পর থেকে নগর এ জেলায় জোড়া খুনসহ ১০টি খুনে সাজ্জাদের অনুসারীদের নাম উঠে এসেছে। তাঁরা কখনো আধিপত্য বজায় রাখতে নিজেদের প্রতিপক্ষকে খুন করছেন, আবার কখনো ভাড়াটে খুনি হিসেবেও ব্যবহার হয়েছেন। তবে বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
যেভাবে উত্থান বড় সাজ্জাদের
নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর চালিতাতলী এলাকার আবদুল গণি কন্ট্রাক্টরের ছেলে সাজ্জাদ আলী। ১৯৯৯ সালের ২ জুন পাঁচলাইশ ওয়ার্ড তৎকালীন কাউন্সিলর লিয়াকত আলী খান বাড়ির সামনে খুন হন। লিয়াকত হত্যায় সাজ্জাদ জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ থাকলেও কেউ আদালতে সাক্ষ্য না দেওয়ায় ওই হত্যা মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়ে যান। লিয়াকত হত্যার পর অপরাধজগতে সাজ্জাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে।
২০০০ সালের ১২ জুলাই। মাইক্রোবাসে করে একটি দলীয় সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মী। পথে বহদ্দারহাটে ওই মাইক্রোবাস থামিয়ে ব্রাশফায়ার করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থলেই ওই ছয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ আটজন মারা যারা যান। ‘এইট মার্ডার’ নামে পরিচিত আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডে সাজ্জাদ নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ২০০০ সালের ১ অক্টোবর একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বড় সাজ্জাদ। ২০০৪ সালে জামিনে বেরিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান।
বড় সাজ্জাদের সহযোগী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ