যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানগুলো দেশটির মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। টানা প্রায় ৩৭ ঘণ্টা উড়ে গিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানান যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তিনি তাঁর নাম প্রকাশ করতে চাননি।

যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা বলেন, হামলায় অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানগুলো মাঝ আকাশে একাধিকবার জ্বালানি নিয়েছে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের হামলা চালানো ইরানের সেই ৩ পারমাণবিক স্থাপনা কোথায়, কী আছে ১ ঘণ্টা আগে

ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় গতকাল শনিবার বোমা হামলা চালায় মার্কিন যুদ্ধবিমান। এগুলো হলো—ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান।

এই হামলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সরাসরি ইরান যুদ্ধে জড়াল।

হামলার পর হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরান কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় না ফিরলে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মার্কিন বিমানবাহিনী এই প্রথম কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাংকারবিধ্বংসী বোমা জিবিইউ-৫৭ ব্যবহার করল।

আরও পড়ুনমধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে জড়ালেনই ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগে

একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৬টি বি-২ বোমারু বিমান ইরানের ভূগর্ভস্থ ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের এক ডজন বাংকারবিধ্বংসী বোমা ফেলেছে। অন্যদিকে মার্কিন নৌবাহিনীর সাবমেরিন থেকে ইরানের নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় ছোড়া হয়েছে ৩০টি টিএলএএম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।

একই মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেন, একটি বি-২ বোমারু বিমান নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় দুটি বাংকারবিধ্বংসী বোমা ফেলেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা ধ্বংস করা। ইরান যে পারমাণবিক হুমকি তৈরি করেছে, তা বন্ধ করা।

হোয়াইট হাউস থেকে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণভাবে, চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ নয়, কিছু ছাড় দিতে পারে ইরান১০ ঘণ্টা আগে

ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তেহরান। তবে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সেগুলো আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল। তাই সেখানে এমন কিছু ছিল না, যা বিকিরণ সৃষ্টি করে নাগরিকদের ক্ষতির কারণ হতে পারত।

আরও পড়ুনইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা: ট্রাম্পের ‘দুই সপ্তাহ’ সময় কি তবে ফাঁকি দেওয়ার ছল ছিল৩০ মিনিট আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

সরাসরি: ইরানের ফোরদো কী? যুক্তরাষ্ট্রের বোমায় এটি কি ধ্বংস হয়ে গেছে?

রবিবার ভোরে ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, সেগুলো ‘সম্পূর্ণ’ ধ্বংস হয়ে গেছে।

হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জ, যেখানে ইসরায়েলও ১৩ জুন তাদের বর্তমান বোমাবর্ষণ অভিযানের শুরুতেই আঘাত করেছিল। ইসফাহানে ও ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় পারমাণবিক জ্বালানি পরিশোধন করা যায়; এই দুই স্থাপনাতেও হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে ইসরায়েলও এই দুই স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।  

আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ১৩ জুন ফোরদোতে ইসরায়েল আঘাত করেছিল, তবে নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের মতো তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ফোরদো মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত এবং নাতাঞ্জের তুলনায় অনেক শক্তিশালী তার পরিকাঠামো।

আরো পড়ুন:

এক্সপ্লেইনার: ইরানে হামলার ‘ইসরায়েলি বাহানা’ আন্তর্জাতিক আইনে ‘অবৈধ’

ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি ফোরদো হামলার জন্য ইসরায়েলের অনুরোধ বিবেচনা করছেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই ফোরদো ধ্বংস করার মতো বাঙ্কার বাস্টার বোমা আছে।

তারপর তিনি নিজের জন্য দুই সপ্তাহের সময়সীমা নির্ধারণ করেন, যার মধ্যে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন ইরানে হামলা করবেন কি না। রবিবার বিষয়টি স্পষ্ট হলো, ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তার উত্তর ছিল, “হ্যাঁ”।

হামলার পর ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে লিখেছেন, “ফোরদো শেষ।”

ফোরদো সম্পর্কে কী জানা যায় এবং এটি ধ্বংস করা সম্ভব কি না?
ফোরদো মূলত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (ইসলামী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী) জন্য একটি সামরিক স্থাপনা হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। এটি ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কোম শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। বলা হয়, এটি একটি পাহাড়ের গভীরে দুইশ মিটার নিচে স্থাপিত।

ইরান ২০০৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আইএইএ-কে চিঠি দিয়ে ফোরদোকে পারমাণবিক স্থাপনায় রূপান্তর করার বিষয়টি জানায়। কারণ তারা জানতে পেরেছিল, পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই এর খবর পেয়েছে।

কয়েকদিন পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে যে, তারা ফোরদোতে একটি গোপন জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ প্ল্যান্টের বিষয়ে অবগত ছিল। ২০০৯ সালের শুরুতে পাওয়া নিশ্চিত গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ইরান সেখানে প্রায় ৩ হাজারটি সেন্ট্রিফিউজ বসানোর চেষ্টা করছিল। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফোরদোর রূপান্তর প্রায় সম্পন্ন হয়েছিল।

ফোরদো ইরানের একমাত্র স্থাপনা যেখানে আইএইএ পরিদর্শকরা অস্ত্র-গ্রেডের খুব কাছাকাছি বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের কণা পেয়েছেন। এটি ২০২৩ সালে অঘোষিত পরিদর্শনের সময় এই প্রমাণ পেয়েছিলেন তারা।

আইএইএ জানিয়েছে, ফোরদো সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭৬টি ঘূর্ণায়মান সেন্ট্রিফিউজ থাকার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা নাতাঞ্জের প্রায় ৫০ হাজারটির তুলনায় অনেক কম। নাতাঞ্জ হলো ইরানের প্রধান পারমাণবিক কেন্দ্র, যেখানে ইসরায়েল ইরানে বোমা হামলা শুরু করার দিনেই আঘাত হেনেছিল।

রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ফোরদো ধ্বংস হয়েছে কি?
আলজাজিরা লিখেছে, তারা নিরপেক্ষ সূত্র থেকে এটি নিশ্চিত হতে পারেনি।

যদিও ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই স্থাপনাটি ধ্বংস হয়েছে। ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফোরদোর ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ করেনি। যদিও তারা হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ফোরদোর আশপাশের বাসিন্দারা কোনো বড় ধরনের বিস্ফোরণ অনুভব করেনি।

সংস্থাটি বলেছে, “অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সরকারি বিশেষজ্ঞরা পরে জানাবেন।”

কোম প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সদর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “কোম এবং আশেপাশের মানুষের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই।”

এর আগে ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফের উপদেষ্টা মেহদি মোহাম্মাদি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে বলেছিলেন, ইরান হামলার আশঙ্কায় ফোরদো থেকে বেশ আগেই পারমাণবিক অবকাঠামো সরিয়ে নিয়েছিল। স্থাপনাটি দীর্ঘদিন ধরে খালি ছিল এবং হামলায় কোনো অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হয়নি।

১৬ জুন ইসরায়েলের হামলার পর আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, “ফোরদো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট বা নির্মাণাধীন খন্দাব হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টরে কোনো ক্ষতি দেখা যায়নি।”

ফোরদো পারমাণবিক উন্নয়ন সম্পর্কে কী জানা যায়?
২০০৯ সালে ফোরদোর অস্তিত্ব প্রকাশ্যে আসার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান তাদের মধ্যে ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা শুরু করে।

আইএইএ বলেছি, “এই আলোচনার লক্ষ্য হলো একটি পারস্পরিক সম্মত দীর্ঘমেয়াদি সমাধান, যা নিশ্চিত করবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যের জন্য থাকবে।”

ইরান ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে ফোরদো সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে দিরেও এর নকশা, নির্মাণকাল ও প্রাথমিক উদ্দেশ্য সম্পর্কিত সময়রেখা জমা দিতে অস্বীকার করে। তারা বলেছিল, এই তথ্য-উপাত্ত জাতিসংঘের সঙ্গে করা সুরক্ষা চুক্তির আওতার বাইরে।

দুই বছর পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তখনকার আইএইএ মহাপরিচালক ইয়ুকিয়া আমানো বলেছিলেন, ইরান ফোরদোতে সেন্ট্রিফিউজ বসিয়েছে এবং তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, তারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের লক্ষ্য ঠিক করেছিল।

২০১২ সালের মার্চে আমানো রিপোর্ট করেন, ফোরদোতে ২০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মাসিক উৎপাদন তিন গুণ বেড়ে গেছে, কারণ চারটি সেন্ট্রিফিউজ ক্যাসকেড একসঙ্গে চালু রয়েছে, যা প্রথমবারের মতো ঘটে।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হলো প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামে থাকা ইউরেনিয়াম-২৩৫ আইসোটোপের ঘনত্ব বাড়ানোর প্রক্রিয়া, যেখানে সাধারণত মাত্র ০.৭ শতাংশ ইউ-২৩৫ থাকে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়ামকে প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে হয়। এই মাত্রায় পৌঁছালে ইউরেনিয়ামকে ‘অস্ত্র-গ্রেড’ বলা হয়।

২০১৫ সালে ইরান, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) চুক্তি সই করে। এই চুক্তি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এবং এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

২০১৫ সালে ধারণা করা হয়, ফোরদোতে ইরানের প্রায় ২ হাজার ৭০০টি সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে।

জেসিপিওএর চুক্তির অধীনে ইরান কী বিষয়ে সম্মত হয়েছিল?
জেসিপিওএর আলোচনার প্রক্রিয়ায় আইএইএ জানিয়েছিল, ইরান ২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ফোরদোতে ইউরেনিয়াম উৎপাদন বন্ধ করে দেয় এবং ওই বছরের বাকি সময় সেখানে কোনো নতুন অগ্রগতি করেনি।

ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ৫ শতাংশ বিশুদ্ধতায় হ্রাস করেছে।

জেসিপিওএ শর্ত অনুযায়ী ইরানের প্রধান প্রধান অঙ্গীকারের মধ্যে ছিল, ফোরদোতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিষিদ্ধ থাকবে। ইরানকে পারমাণবিক প্রযুক্তি শুধু শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে জ্বালানি তেল উৎপাদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হবে।

ইরানও সম্মত হয়। তারা ফোরদোতে পরবর্তী ১৫ বছর কোনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বা এ সংক্রান্ত গবেষণা করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

ইরানকে শর্ত দেওয়া হয়েছির, ফোরদোতে কোনো পারমাণবিক পদার্থ রাখা যাবে না। তবে রূপান্তর করে ফোরদোকে পারমাণবিক, পদার্থবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকেন্দ্র বানানো যাবে।

ফোরদোতে ১ হাজারের বেশি সেন্ট্রিফিউজ রাখা যাবে না, বাকিগুলো নাতাঞ্জে স্থানান্তর করতে হবে। আইএইএ এক প্রতিবেদনে বলেছিল, ২০১৭ সালের জানুয়ারির মধ্যে ইরান এই কাজ সম্পন্ন করেছে।

ফোরদোতে গোপন পারমাণবিক উন্নয়ন নিয়ে কি উদ্বেগ রয়েছে?
জেসিপিওএ চুক্তি থাকলেও ফোরদো স্থাপনাটি নিয়ে উদ্বেগ ও জল্পনা অব্যাহত ছিল।

২০১৬ সালে ইরান ফোরদো স্থাপনার ওপরে রুশ নির্মিত একটি এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম স্থাপন করে। তাদের আশঙ্কা ছিল, এটি হামলার শিকার হতে পারে।

২০১৮ সালে ট্রাম্প একতরফাভাবে জেসিপিওএ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরান ধীরে ধীরে তার চুক্তিভঙ্গের বাধা থেকে মুক্ত হতে থাকে, যদিও ইউরোপীয় অংশীদাররা চুক্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এক অঘোষিত পরিদর্শনে আইএইএ দেখতে পায়, ইরান ফোরদোতে দুটি সেন্ট্রিফিউজ সেট যুক্ত করেছে, যার ফলে সেখানে ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় সমৃদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে; যা জাতিসংঘের সঙ্গে ইরানের সুরক্ষা চুক্তির পরিপন্থি।

আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “ইরান ফোরদো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টের ঘোষিত নকশার তথ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করেছে কিন্তু আগেই সংস্থাকে জানায়নি। এটি ইরানের সুরক্ষা চুক্তির বিরুদ্ধে।”

আইএইএ তখন বলেছিল, তারা ফোরদোতে এমন ইউরেনিয়ামের কণা পেয়েছে, যার বিশুদ্ধতা ৮৩.৭ শতাংশ এবং যা প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। এই মাত্রার ইউরেনিয়াম ‘অস্ত্র-গ্রেড’ এর জন্য প্রয়োজনীয়। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দিয়ে পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব।

২০২৩ সালের ৬ মার্চ রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “ফোরদো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টে আমরা এমন উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কণা পেয়েছি, যার মাত্রা ইরানের ঘোষণাকৃত সীমার অনেক ওপরে।”

ইরান এই দাবিটি অস্বীকার করেছে।

২০২৪ সালের ৩ জুন ইরান আইএইএ-কে জানায়, তারা এই কণাগুলোর উৎস খুঁজে পাওয়ার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা শেষ করেছে। বিস্তৃত তদন্ত ও পরীক্ষার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ইরানি নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এমন আরো সূত্র আবিষ্কার করেছে, যা প্রমাণ করে ওই স্থানে দূরভিসন্ধিমূলক কাজ করা হয়েছে।”

ফোরদো স্থাপনাটি কীভাবে ধ্বংস করা যেতে পারে?
সাধারণত মনে করা হয়, ইসরায়েলের কাছে ফোরদো স্থাপনায় প্রবেশ করে সেখানে শারীরিকভাবে বিস্ফোরক বসানোর ক্ষমতা নেই, যদি না তারা কমান্ডো ইউনিট পাঠায়। তবে তা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি অভিযান।

নাতাঞ্জের তুলনায় ফোরদো অনক কঠিন লক্ষ্য, কারণ এটি একটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন একটি বোমা আছে, যা তাত্ত্বিকভাবে ফোরদো ধ্বংস করতে পারে। এটি হলো ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি), যার ওজন ১৩ হাজার ৬০০ কেজি। যদি যথেষ্ট সংখ্যায় এই বোমা বি-২ বোমারু বিমান থেকে ফেলা হয়, তবে সম্ভবত ফোরদোর ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারগুলো ধসে যেতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসন নিশ্চিত করেছে, রবিবারের হামলায় বি-২ বোমারু বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো স্পষ্ট করে জানায়নি, কোন ধরনের বোমা ব্যবহার করা হয়েছে।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরাসরি: ইরানের ফোরদো কী? যুক্তরাষ্ট্রের বোমায় এটি কি ধ্বংস হয়ে গেছে?
  • ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ নয়, কিছু ছাড় দিতে পারে ইরান
  • ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা: চেরনোবিলের মতো বিপর্যয় হবে না