সাদিয়া আয়মানের ফেসবুক থেকে

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিক পরিচয় জেনেও পুলিশ মেরেছে

সড়কে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে জ্বলছে টায়ার। কাঠ গুঁড়ির আগুনে ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে চারদিক। পুলিশ তখনো নির্বিচার ছুড়ে যাচ্ছে গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল। কে সাধারণ মানুষ আর কে সংবাদকর্মী, তা আলাদা করার যেন সময় নেই কারও। আমি ভয়ে রাস্তার একপাশ ঘেঁষে দ্রুত হাঁটছিলাম। তখন হঠাৎ একটি কাঁদানে গ্যাসের শেল এসে লাগে আমার বাঁ হাতে। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়, চোখ জ্বলে ওঠে ধোঁয়ায়। কিছুই দেখতে পারছিলাম না, যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।

তখন চিৎকার করে বললাম—‘আমি সাংবাদিক!’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! গলার আওয়াজ যেন বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছিল। উপায় না দেখে রাস্তার পাশের ফুটপাতে বসে পড়লাম। একটু পর দেখতে পেলাম পাশের ‘লাভ রোড’ থেকে কয়েকজন পুলিশ এগিয়ে আসছে। একজন আমাকে জোর গলায় ডাকলেন। কাছে যেতেই বললেন, ‘কী হয়েছে? পরিচয় দিলাম, প্রেসের আইডি কার্ড দেখালাম; বুঝলেন আমি সাংবাদিক। এ সময় তিনি বললেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে ছোট মানুষ ঘরে থাকলে ভালো হতো, কী দরকার এত রাতে ঘর থেকে বের হওয়ার?’ তার ব্যবহার শালীন ছিল।

আমি একবার পেছন ফিরে হাঁটা শুরু করলাম। তখনই ঘটল ভয়ানক এক ঘটনা। পেছন থেকে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা আমার কোমরে প্রচণ্ড লাথি মারলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি রাস্তায় পড়ে গেলাম। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকলেন, ‘তোরাই শান্ত পরিবেশটা ঘোলাটে করেছিস!’ এরপর শুরু হলো লাঠি দিয়ে নির্দয়ভাবে পিটুনি। বুকে, রানে, পায়ে—যেখানে পেয়েছে, সেখানেই আঘাত করেছে, পিটিয়েছে। ব্যথা আর যন্ত্রণায় আমি ছটফট করছিলাম।

পাশের সেই সদয় পুলিশ কর্মকর্তা আবারও ছুটে এলেন। বললেন, ‘চলে যান, এখান থেকে দ্রুত চলে যান।’ বিনা অপরাধে পুলিশের মার খেলাম। এর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ, প্রতিবাদ—কিছুই করতে পারিনি। তখন পেশাগত সম্মান বাঁচাতে চুপচাপ উঠে দাঁড়ালাম। ব্যথা চেপে, পা খুঁড়িয়ে একরাশ অপমান নিয়ে বাসায় ফিরলাম!

লেখক: মুহাম্মদ নূরে আলম, সাংবাদিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ