সড়কে নিরাপত্তার জন্য গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে থাকে পুলিশ। শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা রক্ষা ও অপরাধ রোধে সড়কে এমন তল্লাশি পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ। এর জন্য সড়কে চেকপোস্টও বসানো হয়ে থাকে। কিন্তু চেকপোস্ট বসানো ছাড়াই তল্লাশি চালানো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা প্রত্যক্ষ করা গেল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে। সেখানে একটি মোটরসাইকেলকে তল্লাশির জন্য থামাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এক পুলিশ সদস্য পা হারিয়েছেন। এটি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। সড়কে বিশৃঙ্খলার চিত্রও এটি।

সোমবার সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পেরেছি, পুলিশের একটি অস্থায়ী তল্লাশিচৌকিতে কক্সবাজার থেকে লোহাগাড়ার দিকে আসা দুটি মোটরসাইকেলকে থামার সংকেত দেয় পুলিশ। সামনের মোটরসাইকেলটি সংকেত অমান্য করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পেছনের মোটরসাইকেলটি মহাসড়কের পশ্চিম পাশে প্রথমে থামে। পরে সুযোগ বুঝে হঠাৎ দ্রুতগতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য পেছন থেকে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেন। এ ঘটনায় দুই আরোহীসহ মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরেক পুলিশ সদস্যকে ধাক্কা দিলে তাঁর ডান পা চট্টগ্রামগামী ধীরগতির একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়।

ভিডিওটি দেখলে যে কারও মনে হবে, তল্লাশি চালানোর সময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পেশাদারি মনোভাবের ঘাটতি ছিল। গাড়ির গতি কমাতে সড়কে কোনো চেকপোস্ট বক্স বসানোও ছিল না। তা ছাড়া সড়কের এমন অংশে এ অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, দূর থেকে চালকদের পক্ষে পুলিশ সদস্যদেরও দেখতে পাওয়ার সুযোগ কম ছিল। ফলে আচমকা পুলিশের সিগন্যাল পেয়ে গাড়ির গতি কমানোর বিষয়টি চালকের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। তল্লাশিকালে সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বহীনতারই পরিচয় দিয়েছেন। যার কারণে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেলেন এক পুলিশ সদস্য।

চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, উপকরণ ও সমন্বয় ছিল কি না, এ প্রশ্ন উঠছেই। এ ঘটনা এ–ও প্রমাণ করে, দেশের বহু মানুষ এখনো ট্রাফিক আইন মানতে অনাগ্রহী বা অজ্ঞ। সড়কে পুলিশের সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আইন অমান্যকারীদের শুধু তাৎক্ষণিক শাস্তি নয়, ট্রাফিক আইন নিয়ে তাদের ভেতরে সচেতনতা তৈরির জন্য দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হোক। অপেশাদারি কার্যক্রমের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পাশাপাশি পুলিশের চেকপোস্ট পরিচালনায় প্রশিক্ষণ, নীতিমালা ও প্রযুক্তিনির্ভর সহায়তা বাড়ানো হোক। অঙ্গহানি হওয়া পুলিশ সদস্যের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হোক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক প ল শ সদস য র জন য এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

সিরামিক শিল্পে কর কমানোর চেষ্টা করব: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, একটি কমপ্লায়েন্ট, প্রতিযোগিতামূলক ও উদ্ভাবনী শিল্প তৈরি করুন। সরকার করহার কমানোর চেষ্টা করবে। দেশ আর আগের অবস্থানে ফিরে যাবে না।

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে এমন যুক্তি তুলে ধরুন, যা বিশ্বাসযোগ্য ও ন্যায্য। সরকার হিসেবে আপনাদের কথা শোনার জন্য আমরা বাধ্য। কারণ, আমরা আপনাদেরই ব্যবসা করার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করি।’

আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) চতুর্থবারের মতো আয়োজিত সিরামিক এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসিএমইএ সভাপতি মইনুল ইসলাম, মেলা কমিটির চেয়ারম্যান ও বিসিএমইএর সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দীন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. মামুনুর রশীদ, বিসিএমইএর সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দীন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আজকে একটি গণমাধ্যমে দেখলাম বাংলাদেশে বর্তমানে খেলাপি ঋণ প্রায় ৩৫ শতাংশ। যা বিশ্বে সর্বোচ্চ পর্যায়ে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, তিউনিসিয়া, লেবাননের চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি। বিগত সরকার দারিদ্র্য এমনভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে অন্তর্বর্তী সরকার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছে।’

শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, বিসিএমইএ সম্ভবত গ্যাস সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগেছে। বিসিএমইএর সভাপতি জানান আগের থেকে পরিস্থিতি ভালো। যদি ওনার কারখানায় গ্যাসের অবস্থা ভালো থাকে, তাহলে এই খাতে সবার ক্ষেত্রেও ভালো থাকার কথা।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, সিরামিক সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে এগিয়ে আসছে। ইতালিতে তাদের বর্তমান সিরামিক বাজার প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো, যা তারা ২ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত করার কথা বলছে। তারা সিরামিক শিল্পের জন্য করহার ৫০ শতাংশ কমিয়েছে। বাংলাদেশও এমন চিন্তা করতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান হাসান আরিফ বলেন, সিরামিক শিল্প একটি অপ্রচলিত রপ্তানি খাত হিসেবে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের জন্য নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করেছে। গত বছর সিরামিক শিল্পের রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলার।

ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো বলেন, বাংলাদেশের শিল্প মূলত তৈরি পোশাকশিল্পনির্ভর, সেখানে সিরামিক একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছে। যা অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দৃষ্টান্ত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ