পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো তাদের জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে সম্মত হয়েছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। গতকাল বুধবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শেষে জোটভুক্ত ৩২টি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সদস্যরাষ্ট্রগুলো ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতিবছর জিডিপির ৫ শতাংশ মূল প্রতিরক্ষা চাহিদা এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট খাতে বিনিয়োগের অঙ্গীকার করছে। এ চুক্তিকে ‘সবার জন্য একটি মহান বিজয়’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জিডিপির ৫ শতাংশ দুই ভাগে ভাগ করা হবে। সাড়ে ৩ শতাংশ বরাদ্দ হবে মূল প্রতিরক্ষা খাতে। অপর দিকে বাকি দেড় শতাংশ ব্যয় করা হবে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত, যেমন সাইবার নিরাপত্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নে।

দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর কথা বলে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। না হলে ন্যাটো থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। তাই এবারের সম্মেলনে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ট্রাম্প। তবে গতকাল সম্মেলনের শেষ দিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে তাঁকে।

এ জন্য অবশ্য আয়োজকদের কিছুটা কৃতিত্ব রয়েছে। সম্মেলনের শুরু থেকেই ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট রাখতে বেশ সতর্কতার সঙ্গে সবকিছু করা হয়েছিল।

প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি সবার জন্য একটি বিশাল বিজয়। আমরা খুব শিগগিরই সমতায় পৌঁছাব। আর এটাই হওয়া উচিত। আমি দীর্ঘদিন ধরে তাদের (ন্যাটোভুক্ত দেশকে) জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর কথা বলে আসছি। এখন তারা সেটাই করছে। আমি মনে করি, এটি একটি বড় খবর হতে যাচ্ছে।’

সম্মেলনের আয়োজক ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুত্তে সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার নেদ্যারল্যান্ডসের রাজা উইলেম আলেক্সান্দার রাজপ্রাসাদে ট্রাম্পের সম্মানে নৈশভোজ আয়োজন করেছিলেন। নৈশভোজে ট্রাম্প ‘ফুরফুরে মেজাজে’ ছিলেন।

মার্ক রুত্তে বলেন, ‘নিরাপদ থাকতে হলে আমাদের আরও এগিয়ে আসতে হবে, এ বিষয়ে সব মিত্রদেশ একমত।’ তিনি আরও বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ইউরোপের দেশগুলো ও কানাডাকে জোটের ‘ভার বহনের’ বড় একটি অংশ নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হবে।

ন্যাটোর মিত্ররা বলছে, রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলার জন্য প্রতিরক্ষা খাতের ব্যয় বৃদ্ধি যেমন জরুরি, তেমনি ট্রাম্পকে জোটে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রাখার জন্যও দরকার এটি। কারণ, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, ন্যাটোর প্রতিরক্ষায় ইউরোপের দেশগুলো খুব সামান্য অর্থ ব্যয় করে।

এ প্রসঙ্গে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডে ওয়েভার বলেন, ‘ইউরোপিয়ান হিসেবে আমাদের বোঝা উচিত, ইতিহাস থেকে আমাদের দীর্ঘবিরতি নেওয়ার দিন এখন শেষ।’ তিনি আরও বলেন, এ ‘কঠিন মুহূর্তে’ ইউরোপকে তার নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ড প র ৫ শত র জন য ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

নরসিংদীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

নরসিংদীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ ‍উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে, দেখা দিচ্ছে শয্যা সংকট। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তার মশা নিধনে ড্রেনগুলো দ্রুত পরিষ্কারের জন্য পৌরসভার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসেই প্রায় ১০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। অক্টোবর মাসের প্রথম তিনদিনে ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিনই জ্বর, শরীর ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে আসছেন রোগীরা। যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদেরকেই ভর্তি করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার

বাঁশবাগানে পাওয়া সেই নবজাতক মারা গেছে

রোগীর স্বজন নাসরিন আক্তার বলেন, “আমার ভাই পাঁচদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। প্রথমে বুঝতেই পারিনি তার ডেঙ্গু হয়েছে। এখন প্লাটিলেট কমে গেছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, অবস্থা গুরুতর। খুব দুশ্চিন্তায় আছি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা যথাসাধ্য করছেন, শয্যার সংকট আর ওষুধের জোগান সবসময় মেলে না।”

আরেক রোগীর বাবা মো. সাহেব আলী বলেন, “আমার ছোট ছেলের বয়স ১০ বছর। জ্বর নিয়ে ভর্তি করাতে হয়েছিল তাকে। ওর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। হাসপাতালে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। আমরা গরিব মানুষ, ছেলেকে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সমর্থ্য নেই।”

হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ এক রোগীর চাচা মাহবুব হোসেন বলেন, “হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না। ডেঙ্গু যে এত ভয়াবহ হবে বুঝতে পারিনি। প্রশাসন যদি আগে ব্যবস্থা নিত, তাহলে এমন অবস্থা হতো না।”

স্থানীয় কলেজছাত্র জুবায়ের হোসেন বলেন, “জুলাইয়ের শেষ দিক থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, অথচ পৌরসভা থেকে মশা নিধনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়নি অনেকদিন। আমরা খুব চিন্তায় আছি। শুধু ওষুধ আর হাসপাতাল দিয়ে এই রোগ ঠেকানো যাবে না। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন কারণে এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে। প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসছেন জ্বর নিয়ে। অনেকেরই অবস্থা গুরুতর। সীমিত সামর্থ্যে আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো সেবা দিতে। রোগীর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।”

ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ