ইরানকে পরমাণু আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ৩০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সহায়তা করার, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার এবং আটকে রাখা তহবিলের কোটি কোটি ডলার মুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টির সাথে পরিচিত চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে ইরান ও ইসরায়েলে সামরিক হামলার তীব্রতার মধ্যেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের মূল খেলোয়াড়রা পর্দার আড়ালে ইরানিদের সাথে কথা বলেছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পরেও এই আলোচনা চলতি সপ্তাহে অব্যাহত রয়েছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এগুলো প্রাথমিক ও  ধারাবাহিক বিকশিত হচ্ছে, যেখানে শুধু একটি আলোচনার অযোগ্য বিষয় রয়েছে-ইউরেনিয়াম শূন্য সমৃদ্ধকরণ। অবশ্য ইরান ধারাবাহিকভাবে বলেছে যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তাদের প্রয়োজন। তবে দুটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, কমপক্ষে একটি প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাবে ইরানের জন্য বেশ কয়েকটি প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গত শুক্রবার ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক হামলার আগের দিন হোয়াইট হাউসে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং উপসাগরীয় অংশীদারদের মধ্যে গোপ বৈঠক হয়েছে। ঘন্টাব্যাপী বৈঠকের কিছু বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে-ইরানের একটি নতুন অ-সমৃদ্ধকরণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে আনুমানিক ২০-৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ যা বেসামরিক জ্বালানি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে। এই অর্থ সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসবে না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের আরব অংশীদাররা এই ব্যয় বহন করবে। 

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, “আমেরিকা ইরানের সাথে এই আলোচনার নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক। পারমাণবিক কর্মসূচি নির্মাণের জন্য কাউকে অর্থ প্রদান করতে হবে, তবে আমরা সেই প্রতিশ্রুতি দেব না।”

অন্যান্য প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে ইরানের উপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এবং তেহরানের বিদেশী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের অনুমতি দেওয়া।

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র প রস ত ব

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী

ইরানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিমান হামলা চালানোর ৭২ ঘণ্টা না যেতেই দেশটির ফর্দো ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) একটি প্রাথমিক গোপন মূল্যায়ন প্রতিবেদন ফাঁস করে জানিয়েছে, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে। যদিও এটি প্রাথমিক মূল্যায়ন হওয়ায় প্রতিবেদনটিতে ‘কম আত্মবিশ্বাস’-এর কথা বলা হয়।

অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ওই কেন্দ্রগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছে।

এ মতভেদ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা অন্তত কয়েক বছরের জন্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নষ্ট করতে পেরেছে কি না, সেই বিষয়টি।

ইসরায়েল বহু বছর ধরে প্রমাণ ছাড়াই দাবি করে আসছে, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা করছে। কিন্তু ইরান বরাবরই বলে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। চলতি বছর মার্চে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, তেহরান পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে না। তবে জুনের শুরুতে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় কি না, সেসব নিয়ে সাংঘর্ষিক দাবি ও মূল্যায়নের মধ্যেও একটি বিষয় স্পষ্ট—তেহরান বলছে, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না।

তাহলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী? এ পর্যন্ত কতটা ক্ষতি হয়েছে? যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কি ইরানকে আবারও কর্মসূচিটি শুরু করতে দেবে? আর ২০১৫ সালের যে চুক্তিটি ট্রাম্প বাতিল করার আগপর্যন্ত কার্যকর ছিল, সেটি কি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে? উঠে আসছে এমন নানা প্রশ্ন।

ইরান কী চায়

ইরানে মার্কিন হামলার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ‘গুরুতর কিছু হয়নি’।

তেহরান থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা রেসুল সেরদার জানান, খামেনি বলেন, ‘বেশির ভাগ পারমাণবিক স্থাপনাই অক্ষত রয়েছে এবং ইরান তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় কি না, তা নিয়ে সাংঘর্ষিক দাবি ও মূল্যায়নের মধ্যেও একটি বিষয় স্পষ্ট—তেহরান বলছে, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না।

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি গত মঙ্গলবার বলেন, ‘(পারমাণবিক কর্মসূচি) পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি আগেই নেওয়া হয়েছিল এবং আমাদের পরিকল্পনা হলো, উৎপাদন বা সেবায় যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে।’

নাতাঞ্জ ও ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জুন শুরু করা একাধিক হামলায় ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানীকেও হত্যা করেছে।

তবে, ডিআইএর প্রাথমিক প্রতিবেদনকে ট্রাম্প প্রশাসন গুরুত্ব না দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে বলা হয়, এ হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে পড়েছে মাত্র। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরান আগেই ওই সব কেন্দ্র থেকে ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছিল। একই দাবি করেছেন ইরানি কর্মকর্তারাও।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ অভিযোগ করেছে, ইরান ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মাত্রায় সমৃদ্ধ করেছে। এই মাত্রা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ থেকে বেশি দূরে নয়।

গত বুধবার ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি মনে করেন, হামলার আগে ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছিল? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সবকিছু ওখানেই ছিল, ওরা সরাতে পারেনি।’ পরে আবার জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এত দ্রুত ও জোরালোভাবে আঘাত করেছি যে সরানোর সময়ই পায়নি।’

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সুযোগ না থাকায় কেউই এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না।

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ)’ পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেগুলো পুনর্গঠনে কয়েক বছর লেগে যাবে।’ অথচ এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইএর প্রাথমিক মূল্যায়নে ভিন্ন সময়রেখা তুলে ধরা হয়েছে।

তবে মনে রাখা জরুরি, ২০০৩ সালে ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে কি না, তা নিয়েও ডিআইএ ও সিআইএর মূল্যায়ন এক রকম ছিল না।

ডিআইএ জাতিসংঘের সঙ্গে একমত হয়ে বলেছিল, পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, সাদ্দামের কাছে এমন অস্ত্র নেই। অন্যদিকে, সিআইএ এমন গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছিল যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আক্রমণের অবস্থানকে সমর্থন করেছিল। এ তথ্য পরে ভুল প্রমাণিত হয়। সেই সময় সিআইএকে ডিআইএর চেয়ে রাজনৈতিকভাবে আরও নমনীয় মনে হয়েছিল।

বেশির ভাগ পারমাণবিক স্থাপনাই অক্ষত রয়েছে এবং ইরান তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।—আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে, ট্রাম্পের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডও প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছেন।

সামাজিকমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) গ্যাবার্ড লিখেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। ইরান যদি পুনর্নির্মাণে আগ্রহী হয়, তাহলে তাদের নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইসফাহানের সব স্থাপনা একেবারে নতুন করে গড়তে হবে। তাতে সম্ভবত কয়েক বছর লাগবে।’

তবে গ্যাবার্ড ট্রাম্পের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে এর আগেও নিজের বক্তব্য পাল্টেছেন।

গত মার্চে মার্কিন কংগ্রেসের গোয়েন্দা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সামনে গ্যাবার্ড তাঁর সাক্ষ্যে বলেছিলেন, ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ করছে না এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ২০০৩ সালে যে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন, সেটি আবার চালুর অনুমোদন দেননি।’

পরে ২০ জুন ট্রাম্পের কাছে গ্যাবার্ডের এ মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি (গ্যাবার্ড) ভুল বলছেন।’

সেই দিনই গ্যাবার্ড পোস্ট করে বলেন, ‘অসৎ গণমাধ্যম’ তাঁর বক্তব্য বিকৃত করেছে এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে ইরান যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তারা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম।’

আরও পড়ুনইরানে বোমা হামলার সঙ্গে জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলার তুলনা করলেন ট্রাম্প২৫ জুন ২০২৫

তবে গ্যাবার্ডের এ ব্যাখ্যা তাঁর আগের বক্তব্যের বিরোধিতা করে না। কেননা, তিনি বলেছিলেন, ইরান বর্তমানে সক্রিয়ভাবে বোমা তৈরির চেষ্টা করছে না।

একটি ফরাসি রেডিও নেটওয়ার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে কি না, জানতে চাইলে, আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘আমি মনে করি ‘‘ধ্বংস’’ শব্দটা বাড়াবাড়ি হবে। কিন্তু এটা যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিশ্চিত।’

যদি ইরান পারমাণবিক পথে ফেরে, আমরা তো আছি—তখন কিছু একটা করতে হবে। —ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

গত বুধবার ইসরায়েলের পারমাণবিক শক্তি কমিশন সিআইএর সঙ্গে একমত প্রকাশ করে জানায়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ অকার্যকর’ হয়ে গেছে এবং ‘ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টাকে বহু বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে’।

ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইরানের ইসফাহানে স্থাপনার উপরিভাগের ধ্বংসই প্রমাণ করে যে ইরান আর পারমাণবিক বোমা বানাতে পারবে না। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কনভার্সন ফ্যাসিলিটি ছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র বানানো যায় না। আমরা তো খুঁজেই পাচ্ছি না, সেটা এখন কোথায়, আগের মানচিত্রে যে জায়গায় ছিল, সেখানে তা আর নেই।’

আরও পড়ুনইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কড়া নিন্দা না জানিয়ে কী অর্জন করতে চাইছেন এরদোয়ান২৩ জুন ২০২৫২০১৫ সালের চুক্তি কি আবার কার্যকর করা সম্ভব

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সই হওয়া ‘যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’ বা জেসিপিওএ ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে একমাত্র সফল আন্তর্জাতিক চুক্তি।

এ চুক্তির আওতায় ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত, তবে তা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রা ৩ দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হতো। ইসরায়েলের অনুরোধে ২০১৮ সালে ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং পরের বছর ইরানও চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। এর আগপর্যন্ত এটি কার্যকর ছিল।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ওবামার করা জেসিপিওএ-তে আর ফিরবেন না। কিন্তু এমন একটি নতুন চুক্তি করতে পারেন, যা মূলত জেসিপিওএর মতোই হবে। মূল প্রশ্ন হলো, এবার ইসরায়েল কি এমন চুক্তির পক্ষে থাকবে? আর ইরানকে কি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তার অধিকার মেনে অন্তত শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে?

অবশ্য, বুধবার দ্য হেগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্পের মন্তব্যে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ‘আমরা হয়তো কোনো চুক্তি করব। জানি না। আমি মনে করি, সেটা ততটা জরুরি নয়’, বলেন তিনি।

জেসিপিওএ ধরনের যেকোনো চুক্তির জন্য ইরানকে আবার আইএইএর পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দিতে হবে; যাতে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেন—তেহরান পারমাণবিক নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি মানছে।

মঙ্গলবার আইএইএ জানায়, (ইসরায়েল–ইরান) সংঘাতকালীন সময়েও তাদের পরিদর্শকেরা ইরানে অবস্থান করছিলেন এবং দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন ও পারমাণবিক উপাদানের মজুদ যাচাই করার জন্য আবার কাজ শুরু করতে প্রস্তুত।

এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ইরানের প্রভাবশালী গার্ডিয়ান কাউন্সিল পার্লামেন্টে গৃহীত এক বিল অনুমোদন করেছে। বিলে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, বর্তমানে তেহরান জাতিসংঘের কোনো তদারকি গ্রহণে আগ্রহী নয়।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর যুদ্ধ তীব্র না হয়ে থেমে গেল কেন২২ ঘণ্টা আগেইরান যদি আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে

‘ইরান যদি বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে চায়, তারা সেটা চালাতে পারে; বিশ্বের অনেক দেশ যেমনটা চালায়। এর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান আমদানি করলেই হয়’, গত এপ্রিল মাসে পডকাস্ট ‘অনেস্টলি’-তে সাংবাদিক বারি ওয়েইসকে বলেছিলেন মার্কো রুবিও।

‘কিন্তু তারা যদি নিজেরাই সমৃদ্ধকরণে (ইউরেনিয়াম) অনড় থাকে, তাহলে তারা হবে বিশ্বের একমাত্র দেশ, যাদের কোনো অস্ত্র কর্মসূচি নেই, কিন্তু নিজেরাই সমৃদ্ধকরণ করছে—যা সত্যিই সমস্যার’, বলেন রুবিও।

যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানবিষয়ক ইতিহাসবিদ আলী আনসারি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘ইরানের ভেতর থেকেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের আহ্বান উঠেছে।’

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানি কর্মকর্তারা যেসব জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন, বিশেষত গতকাল বৃহস্পতিবার খামেনি যা বলেছেন—সেসব শুনে মনে হচ্ছে, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিত্যাগ করার মতো অবস্থায় নেই।

গত কয়েক দিনে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি চান, ইরান পুরোপুরি পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করুক। মঙ্গলবার নিজ মালিকানাধীন সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি পোস্ট করেন, ‘ইরান আর কখনোই তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুনর্গঠন করতে পারবে না!’

বুধবার ওই অবস্থানে আরও জোর দেন ট্রাম্প। ‘ইরান খুব সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তাদের রয়েছে দারুণ তেলসম্পদ, তারা অনেক কিছু করতে পারে। আমি মনে করি না, তারা পারমাণবিক কর্মসূচিতে ফিরবে। ওদের সেই পথ শেষ হয়ে গেছে’, দ্য হেগে ন্যাটো সম্মেলনের শেষ দিন সাংবাদিকদের বলেন তিনি।

এরপর ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, ইরান পারমাণবিক বোমা না বানালেও যুক্তরাষ্ট্র আবার তাদের স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। ‘যদি ইরান পারমাণবিক পথে ফেরে, আমরা তো আছি—তখন কিছু একটা করতে হবে’, বলেন তিনি। আর যদি তিনি না করেন, তাহলে কেউ একজন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেবে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

বিশ্লেষকেরা বলেন, এই ‘কেউ একজন’ ইসরায়েল; যারা বহুদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে চাচ্ছে।

ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে আবার যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে কি না। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, একদিন তা হতে পারে। এমনকি খুব শিগগির শুরু হয়ে যেতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী