জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বার্ষিক সিনেট সভাস্থল ত্যাগ করেছেন আওয়ামীপন্থি তিন সিনেট সদস্য। এদের মধ্যে দুইজন শিক্ষক ক্যাটাগরি এবং একজন অনুষদ ডিন হিসেবে সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন।

শনিবার (২৮ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় সভা শুরুর পূর্বে জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিরোধী অবস্থান ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। এতে তারা সভাস্থল ত্যাগ করেন।

এর আগে, শুক্রবার উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে শিক্ষার্থীরা সিনেট সভায় আওয়ামীপন্থি সদস্যদের দাওয়াতের প্রতিবাদ জানায়। এছাড়া ফ্যাসিবাদের সহযোগী কোনো সদস্যকে নিয়ে যেন সভা না হয়, তা জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও গবেষক চাই, ভোটার নয়

ইবিতে সেশনজট নিরসনে শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিনিময় 

এদিকে, বিকাল ৩টার কিছুক্ষণ পূর্বে সভার জন্য আসেন নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক শফিক উর রহমান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক যুগল কৃষ্ণ দাস এবং ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিগার সুলতানা। এদের মধ্যে প্রথম দুজন শিক্ষক ক্যাটাগরিতে এবং একজন অনুষদ ক্যাটাগরিতে সভায় এসেছিলেন। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিনেট ভবনের ভেতরে আওয়ামীপন্থি তিন শিক্ষক অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা সিনেট সভার কক্ষের ফটকের সামনে এসে ফ্যাসিবাদবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন এবং আওয়ামী দোসরদের সিনেট সভা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তারা প্রক্টরিয়াল বডির হেফাজতে সভাস্থল ত্যাগ করেন।

প্রতিবাদে অংশ নেওয়া বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট সভায় আওয়ামীপন্থি সিনেট সদস্যরাও দাওয়াত পেয়েছেন। আমরা হুশিয়ার করে বলে দিতে চাই, ফ্যাসিবাদের সহযোগী কেউ যদি সিনেট সভায় এলে আমরা তাদের রুখে দেব। তাদের কৃতকর্মের প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা পঁচা ডিমের ব্যবস্থা রেখেছি। পক্ষান্তরে জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকা শিক্ষকদের জন্য লাল গোলাপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”

জাবি ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “সিনেট অধিবেশনে আওয়ামী দোসরদের দাওয়াত দেওয়ার প্রতিবাদে এবং তাদের আগমন রুখে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে অবস্থান করছে। জুলাইয়ে যারা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের সমর্থন, প্রশ্রয় ও সহযোগিতা করেছে, তারা শিক্ষকতা পেশার কলঙ্ক। তাদের বিচারের আওতায় আনা আবশ্যক।”

তিনি বলেন, “তাদের নিয়ে সিনেট সভা আমরা হতে দেব না। তবে অভ্যুত্থানে যেসব শিক্ষকরা নৈতিক জায়গা থেকে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারা শিক্ষকতার মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। তারা আমাদের অনুকরণীয় অনুপ্রেরণা।”

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য আহসান লাবিব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী সিনেট মিটিং এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সভায় আওয়ামী দোষরদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা জুলাইয়ের রক্ত ও শহীদদের প্রতি অপমানজনক। আমরা কোনোভাবেই চাই না, সিনেট মিটিংয়ে গণহত্যাকারী আওয়ামী দোষর উপস্থিত হোক। কেউ এলে তাদের প্রতিহত করা হবে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আমরা তাদের নিরাপদে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছি।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র

প্রাচীন গল্পে আছে, ইকারাস মোমের ডানা নিয়ে সূর্যের খুব কাছে উড়ে গিয়েছিল। তখন মোম গলে গেলে ইকারাস নিচে পড়ে যায়। সৃজনশীল এক ফটোগ্রাফার সম্প্রতি সূর্যের দারুণ এক ছবি তুলে সেই দৃশ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় একজন স্কাইডাইভার মাত্র এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য সূর্যের সামনে দিয়ে নেমে যান। ঠিক তখনই তাঁকে ক্যামেরাবন্দী করেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি। জ্বলন্ত সূর্যের মুখের ওপর দিয়ে যেন এক মানব প্রতিকৃতি নিচে নেমে গেল, এমন দৃশ্য ধরা পড়ে ক্যামেরা লেন্সে। দৃষ্টিবিভ্রমের এক অসাধারণ কীর্তি তৈরি করেছেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি।

অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি নিখুঁতভাবে তাঁর ক্যামেরা দিয়ে একজন স্কাইডাইভারকে ক্যামেরার সংকীর্ণ ফিল্ড অব ভিউয়ের মধ্য দিয়ে নেমে যাওয়ার সময় ধারণ করেন। ছবিটি বেশ পরাবাস্তব এক অনুভূতি তৈরি করেছে। ইকারাসকে নিয়ে প্রাচীন মিথের সঙ্গে ছবিটি তুলনা করেছেন অনেকেই।

অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি চাঁদ ও সূর্যের অত্যন্ত সূক্ষ্ম ছবি তোলার জন্য পরিচিত। তিনি সূর্যের সামনে স্কাইডাইভারের এই একটি মাত্র ছবির জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সূর্যের ছবি তোলা এমনিতেই কঠিন কাজ। সেখানে সূর্যের সামনে গতিশীল একটি বিমান বা একজন পতিত মানবকে একই ফ্রেমে আনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। বিমানটির গতিপথ, সূর্যের কোণ, ক্যামেরার অবস্থান ও স্কাইডাইভারের অবতরণের মতো সব বিষয়কে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এক করে কাজটি হয়েছে।

অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি বলেন, ‘বলা যায়, একেবারে অযৌক্তিক একটি কাজ করেছি। যদিও চূড়ান্ত ছবিটি দারুণ এক অনুভূতি দেয়। স্কাইডাইভার ছিলেন ইউটিউবার ও সংগীতজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল সি ব্রাউন। সে সূর্যের উত্তাল হলুদ পৃষ্ঠের বিপরীতে একটি কালো সিলুয়েট বা ছায়ামূর্তি হিসেবে ছবিতে চলে এসেছে। সূর্যের অবস্থান ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে হলেও ক্যামেরায় দারুণভাবে দেখা যাচ্ছে সব। ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করা ছবি অসম্ভব বলে মনে হয়। আগুনের মতো সৌর ক্রোমোস্ফিয়ারের আবহের বিপরীতে একটি সত্যিকারের মানব চিহ্ন আমাদের মুগ্ধ করে। দেখে মনে হবে যেন, মহাকাশে কেউ নিচে পড়ে যাচ্ছে।’

স্কাইডাইভাররা ব্রাউনের ৩ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে পতন শুরু করলে প্রায় ১০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে প্যারাসুট খোলার আগে ছবি তোলার সুযোগ মেলে। ম্যাককার্থি একটি লুন্ট ৬০ মিলিমিটার এইচ–আলফা ক্যামেরায় তার ফ্রি ফলের ছবি তোলেন। একটি এএসআই ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারে একক এক্সপোজার ধারণ করা হয়। আসলে এই বিভ্রমের মূল কারণ হচ্ছে দূরত্বের সামঞ্জস্য। ব্রাউন একটি ছোট বিমান থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ফুট ওপর থেকে লাফ দেন। আর ম্যাককার্থি প্রায় আট হাজার ফুট দূরে অবস্থান করেছিলেন। স্কাইডাইভার অবশ্যই সূর্যের কাছে ছিলেন না। শুধু ক্যামেরার দৃষ্টিকোণ থেকে নিখুঁত অবস্থানের কারণে স্কাইডাইভারকে অসম্ভব কাছাকাছি দেখাচ্ছিল। আসলে লাফ দেওয়ার আগে বিমানটিকে সঠিক অবস্থানে আনার জন্য ছয়বার চেষ্টা করতে হয়েছে। স্কাইডাইভারকে ফ্রেমে ধরার জন্য মাত্র একবারের সুযোগ ছিল। ম্যাককার্থি তাঁর মনিটরে সেই ক্ষুদ্র অবয়বটিকে সূর্যের আলোর সঙ্গে মিলিয়ে একটি নিখুঁত অবয়ব ধারণ করেন।

এই ছবিকে অনেকেই পৌরাণিক রূপকথার সঙ্গে তুলনা করছেন। গ্রিক মিথের ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ম্যাককার্থির এ ছবিটি সেই আখ্যানকেই একটি আধুনিক ও স্পষ্ট রূপে যেন তুলে ধরছে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘১৫ হাজার সেফটিপিন শাড়িতে লাগালেও, তারা খুঁত বের করবে’
  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
  • এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের
  • করদাতা মারা গেলেও যে কারণে কর দিতে হয়, কীভাবে দেওয়া হয়
  • ৩ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ আরও যা যা পান একজন মিস ইউনিভার্স
  • গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো
  • সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টার এপিএস
  • বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
  • সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
  • সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র