বিশ্বে প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে যেমন অগ্রগতি এসেছে, তেমনি বেড়েছে নতুন ধরনের সামাজিক সমস্যাও। সাইবার বুলিং, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিয়ের মতো বিষয়গুলো এখন আর কেবল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়–এগুলো একেকটি বৈশ্বিক সংকটে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা এসব সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ, এই সংকটগুলো প্রতিরোধে এবং সমাধানে তরুণ সমাজই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। ঠিক এমন এক প্রেক্ষাপটে, মানবিকতা, সামাজিক সচেতনতা এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় যশোরের একদল উদ্যমী তরুণ-তরুণীর উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে ইয়াভ ফাউন্ডেশন।
আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ইয়াভ
বিশ্ব যখন সাইবার বুলিং, নারীর প্রতি সহিংসতা, বাল্যবিয়ের কবলে ঠিক তখনই যশোরের একঝাঁক তরুণ-তরুণীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ইয়াভ ফাউন্ডেশন। সাইবার বুলিং–বিশ্বব্যাপী এক মহামারির নাম, যার সমাধানে ফাউন্ডেশনটির প্রতিষ্ঠাতা রোহিত রায় তৈরি করেন উদ্ভাবনী মোবাইল অ্যাপ ‘ইয়াভ’। অ্যাপটির মাধ্যমে অর্ধশতাধিক তরুণ-তরুণীর সমস্যা সমাধানসহ দুই শতাধিক তরুণ-তরুণীকে মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট প্রদান করে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ইয়াভ।
অরেঞ্জ সিটি গড়ার প্রত্যাশা
এছাড়াও দেশের ক্রান্তিলগ্নেও অসহায় মানুষের পাশে সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়িয়েছে বহুবার। নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গড়ে তুলেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘রেঞ্জার্স মার্ট’ এবং সেই সঙ্গে তারুণ্যের কথাগুলো তুলে ধরতে রয়েছে ‘রেঞ্জার্স ভয়েস’। তারা স্বপ্ন দেখে যশোরকে ‘অরেঞ্জ সিটি’ ব্র্যান্ডিংয়ের। ‘অরেঞ্জ সিটি কী’–এর প্রতিউত্তরে ফাউন্ডেশনটির প্রধান রোহিত রায় বলেন, ‘সাদা যেমন শুভ্রতা এবং শান্তির প্রতীক, সবুজ সজীবতার প্রতীক, যা চিরসবুজ বাংলাদেশকে নির্দেশ করে, তেমনই অরেঞ্জ এন্টি ভায়োলেন্সকে রিপ্রেজেন্ট করে।’ এখান থেকেই অরেঞ্জ সিটি গড়ার প্রত্যাশা শুরু হয় ইয়াভের।
কনসার্ট ফর এন্টি ভায়োলেন্স
এই অভিনব উদ্যোগের স্বপ্নদ্রষ্টা রোহিত রায়ের নেতৃত্বে সহিংসতামুক্ত যশোর গড়তে এবং যশোরকে অরেঞ্জ সিটি হিসেবে ব্র্যান্ডিংয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে ইয়াভ। গত বছরের অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন এবং শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই উদ্যোগটির সূচনা ঘটে। শিল্পের আলোকে সমাজকে মানবিক ধারায় গড়ে তুলতে কাজ করছে ‘আর্ট ফর হিউম্যানিটিজ’ প্রকল্প। সম্প্রতি এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে একজন ক্যান্সার রোগীর সাহায্যার্থে সফলভাবে ‘কনসার্ট ফর এন্টি-ভায়োলেন্স’ সম্পন্ন করে মানবিকতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইয়াভ ফাউন্ডেশন। সেই সঙ্গে যশোরকে অরেঞ্জ সিটি গড়ার লক্ষ্যে গেল বছর অক্টোবরে ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই চ্যারিটি কনসার্টটি। আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিল দেশসেরা জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘সোনার বাংলা সার্কাস’।
ছড়িয়ে পড়ছে দেশে.
যশোরের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ দেশের দশটি জেলায় ইতোমধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইয়াভ। তরুণ-তরুণীদের সকল সমস্যা সমাধানে এবং প্রতিরোধ করতে ইয়াভ ফাউন্ডেশন নিশ্চিত করছে আইনবিষয়ক সহায়তা। রোহিত রায় ছাড়াও এই উদ্যোগকে সমানভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছে জয় দত্ত, শ্রাবন্তী বাড়ই সুচি, তাসজিদ হাসান, জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রান্ত বিশ্বাস, শাম্মী আক্তার, রুমানা নওরিন, শাহরিয়ার উৎসব, মো. মোহন, সাদিয়া সিদ্দিকীসহ একঝাঁক তরুণ উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী– যারা সক্রিয়ভাবে এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
যত কার্যক্রম
বিশেষত বাল্যবিয়ে রোধ, সাইবার বুলিং প্রতিরোধ এবং আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ইয়াভ ফাউন্ডেশন। যশোরকে একটি সুস্থ, উন্নত ও নিরাপদ শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইয়াভের স্কোয়াড মেম্বারদের প্রচেষ্টা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ২০২০ সালের করোনা মহামারি চলার সময়ে ইয়াভ সদস্যরা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নানা ধরনের সহায়তা দিয়েছে, যা প্রমাণ করে তাদের মানবিক দায়িত্ববোধ। এ ছাড়াও ইয়াভের কার্যক্রমের মধ্যে ছিল শীতার্তদের শীতবস্ত্র বিতরণ, রোজার মাসে ইফতারি বিতরণ, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদ্রাসায় খাবার সরবরাহ, সচেতনতামূলক বিভিন্ন আয়োজন এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন পরিচালনা। যেকোনো বিপর্যয়ে– যেমন জুলাই মাসে গণভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ–ইয়াভ তার সদস্যদের মাধ্যমে দেশের প্রতি বিশেষ অবদান রেখেছে। বিজয়ের পর, ইয়াভের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন দেশকে নতুনভাবে সংস্কার করার জন্য। তারা নিজ হাতে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, গাছ লাগানো, ট্রাফিক কন্ট্রোল, গ্রাফিতি আঁকা, প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন এবং শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালনসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। বন্যার সময় বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তার জন্যও ইয়াভিয়ানরা দিন-রাত এক করে কাজ করেছেন, মানবিকতার চেতনায় ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পাশে থেকেছেন। এভাবেই এগিয়ে চলেছে ইয়াভ ফাউন্ডেশন। লক্ষ্য যশোর থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি জেলায় পৌঁছানো। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সকল ধরনের অপরাধ নিরসন করে আত্মহত্যা প্রতিরোধ এবং সর্বোপরি নিরাপদ, সহিংসতামুক্ত সমাজ গঠনের নিশ্চয়তায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাওয়াই প্রত্যেক ইয়াভিয়ানের মূল লক্ষ্য বলে নিশ্চিত করেছেন ইয়াভ প্রতিষ্ঠাতা রোহিত রায়। u
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স গঠন তর ণ তর ণ র অর ঞ জ স ট কর ছ ন ম নব ক ক জ কর ক তর ণ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় পরকীয়া প্রেমে বাধা দেয়ায় বালিশ চাপা দিয়ে ব্যবসায়ীকে হত্যায় মামলা
ফতুল্লায় পরকীয়া প্রেমে বাধা দেয়ায় জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যারপর জোর করে দাফন করার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে রুবেল হাওলাদার বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট মহিন উদ্দিন কাদেরের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় আসামী করা হয়, নিহত আব্দুর রশিদের দ্বিতীয় স্ত্রী মোর্শেদা বেগম (৪২) তার দুই মেয়ে জাকিয়া সুলতানা (২১), মায়া আক্তার (৩৫) ও পরকীয়া প্রেমিক জাকারীয়া ভেন্ডার (৫৫) সহ অপ্সাত সন্ত্রাসী।
শনিবার বিকেলে মামলার আদেশ পেয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী সাইদুর রহমান সাব্বির জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
তিনি আরো জানান, হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে ২৮ আগষ্ট রাতে ফতুল্লার ভুইগড় মাহমুদপুর এলাকায় জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের নিজ বাড়িতে। তিন তলা এ বাড়িটি দ্বিতীয় স্ত্রী মোর্শেদা বেগম ও মেয়ে জাকারিয়া সুলতানার নামে আগেই লিখে নিয়েছেন। এরপরই মোর্শেদার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন জাকারীয়া ভেন্ডার।
তিনি জানান, মোর্শেদার আগের স্বামীর মেয়ে মায়া আক্তার প্রায় সময় আব্দুর রশিদকে বাড়ির জমি লিখে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন। আর মোর্শেদাকে নিজ ঘরেই পরকীয়া প্রেমিকের সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে দেখতেন আব্দুর রশিদ। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলেই মোর্শেদা বেগম দুই মেয়েকে সাথে নিয়ে আব্দুর রশিদকে মারধর করতেন।
আইনজীবী জানান, হত্যাকান্ডের রাতে খুন হওয়ার আশঙ্কার কথা আব্দুর রশিদ নিজেই আশপাশের লোকজনদের কাছে জানিয়ে যায়। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা এসে আব্দুর রশিদের রক্তাক্ত লাশ দেখে পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের বিষয়টি বুজতে পারেন।
তখন তারা থানায় সংবাদ দিতে চাইলে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে মাহমুদপুর কবরস্থানে লাশ দাফন করেন।
এবিষয়ে মোর্শেদা বেগম বলেন, জাকারীয়া ভেন্ডারের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সে আমার স্বামীর সাথে ব্যবসা করতেন। তারা মামলায় যা উল্লেখ করেছেন তা সম্পূর্ন মিথ্যা বানোয়াট।