Samakal:
2025-07-07@23:50:11 GMT

ইয়াভ ফাউন্ডেশন

Published: 5th, July 2025 GMT

ইয়াভ ফাউন্ডেশন

বিশ্বে প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে যেমন অগ্রগতি এসেছে, তেমনি বেড়েছে নতুন ধরনের সামাজিক সমস্যাও। সাইবার বুলিং, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিয়ের মতো বিষয়গুলো এখন আর কেবল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়–এগুলো একেকটি বৈশ্বিক সংকটে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা এসব সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ, এই সংকটগুলো প্রতিরোধে এবং সমাধানে তরুণ সমাজই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। ঠিক এমন এক প্রেক্ষাপটে, মানবিকতা, সামাজিক সচেতনতা এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় যশোরের একদল উদ্যমী তরুণ-তরুণীর উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে ইয়াভ ফাউন্ডেশন।
আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ইয়াভ
বিশ্ব যখন সাইবার বুলিং, নারীর প্রতি সহিংসতা, বাল্যবিয়ের কবলে ঠিক তখনই যশোরের একঝাঁক তরুণ-তরুণীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ইয়াভ ফাউন্ডেশন। সাইবার বুলিং–বিশ্বব্যাপী এক মহামারির নাম, যার সমাধানে ফাউন্ডেশনটির প্রতিষ্ঠাতা রোহিত রায় তৈরি করেন উদ্ভাবনী মোবাইল অ্যাপ ‘ইয়াভ’। অ্যাপটির মাধ্যমে অর্ধশতাধিক তরুণ-তরুণীর সমস্যা সমাধানসহ দুই শতাধিক তরুণ-তরুণীকে মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট প্রদান করে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ইয়াভ।
অরেঞ্জ সিটি গড়ার প্রত্যাশা
এছাড়াও দেশের ক্রান্তিলগ্নেও অসহায় মানুষের পাশে সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়িয়েছে বহুবার। নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গড়ে তুলেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘রেঞ্জার্স মার্ট’ এবং সেই সঙ্গে তারুণ্যের কথাগুলো তুলে ধরতে রয়েছে ‘রেঞ্জার্স ভয়েস’। তারা স্বপ্ন দেখে যশোরকে ‘অরেঞ্জ সিটি’ ব্র্যান্ডিংয়ের। ‘অরেঞ্জ সিটি কী’–এর প্রতিউত্তরে ফাউন্ডেশনটির প্রধান রোহিত রায় বলেন, ‘সাদা যেমন শুভ্রতা এবং শান্তির প্রতীক, সবুজ সজীবতার প্রতীক, যা চিরসবুজ বাংলাদেশকে নির্দেশ করে, তেমনই অরেঞ্জ এন্টি ভায়োলেন্সকে রিপ্রেজেন্ট করে।’ এখান থেকেই অরেঞ্জ সিটি গড়ার প্রত্যাশা শুরু হয় ইয়াভের।
কনসার্ট ফর এন্টি ভায়োলেন্স
এই অভিনব উদ্যোগের স্বপ্নদ্রষ্টা রোহিত রায়ের নেতৃত্বে সহিংসতামুক্ত যশোর গড়তে এবং যশোরকে অরেঞ্জ সিটি হিসেবে ব্র্যান্ডিংয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে ইয়াভ। গত বছরের অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন এবং শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই উদ্যোগটির সূচনা ঘটে। শিল্পের আলোকে সমাজকে মানবিক ধারায় গড়ে তুলতে কাজ করছে ‘আর্ট ফর হিউম্যানিটিজ’ প্রকল্প। সম্প্রতি এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে একজন ক্যান্সার রোগীর সাহায্যার্থে সফলভাবে ‘কনসার্ট ফর এন্টি-ভায়োলেন্স’ সম্পন্ন করে মানবিকতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইয়াভ ফাউন্ডেশন। সেই সঙ্গে যশোরকে অরেঞ্জ সিটি গড়ার লক্ষ্যে গেল বছর অক্টোবরে ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই চ্যারিটি কনসার্টটি। আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিল দেশসেরা জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘সোনার বাংলা সার্কাস’। 
ছড়িয়ে পড়ছে দেশে.

..
যশোরের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ দেশের দশটি জেলায় ইতোমধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইয়াভ। তরুণ-তরুণীদের সকল সমস্যা সমাধানে এবং প্রতিরোধ করতে ইয়াভ ফাউন্ডেশন নিশ্চিত করছে আইনবিষয়ক সহায়তা। রোহিত রায় ছাড়াও এই উদ্যোগকে সমানভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছে জয় দত্ত, শ্রাবন্তী বাড়ই সুচি, তাসজিদ হাসান, জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রান্ত বিশ্বাস, শাম্মী আক্তার, রুমানা নওরিন, শাহরিয়ার উৎসব, মো. মোহন, সাদিয়া সিদ্দিকীসহ একঝাঁক তরুণ উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী– যারা সক্রিয়ভাবে এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
যত কার্যক্রম
বিশেষত বাল্যবিয়ে রোধ, সাইবার বুলিং প্রতিরোধ এবং আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ইয়াভ ফাউন্ডেশন। যশোরকে একটি সুস্থ, উন্নত ও নিরাপদ শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইয়াভের স্কোয়াড মেম্বারদের প্রচেষ্টা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ২০২০ সালের করোনা মহামারি চলার সময়ে ইয়াভ সদস্যরা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নানা ধরনের সহায়তা দিয়েছে, যা প্রমাণ করে তাদের মানবিক দায়িত্ববোধ। এ ছাড়াও ইয়াভের কার্যক্রমের মধ্যে ছিল শীতার্তদের শীতবস্ত্র বিতরণ, রোজার মাসে ইফতারি বিতরণ, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদ্রাসায় খাবার সরবরাহ, সচেতনতামূলক বিভিন্ন আয়োজন এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন পরিচালনা। যেকোনো বিপর্যয়ে– যেমন জুলাই মাসে গণভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ–ইয়াভ তার সদস্যদের মাধ্যমে দেশের প্রতি বিশেষ অবদান রেখেছে। বিজয়ের পর, ইয়াভের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন দেশকে নতুনভাবে সংস্কার করার জন্য। তারা নিজ হাতে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, গাছ লাগানো, ট্রাফিক কন্ট্রোল, গ্রাফিতি আঁকা, প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন এবং শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালনসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। বন্যার সময় বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তার জন্যও ইয়াভিয়ানরা দিন-রাত এক করে কাজ করেছেন, মানবিকতার চেতনায় ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পাশে থেকেছেন। এভাবেই এগিয়ে চলেছে ইয়াভ ফাউন্ডেশন। লক্ষ্য যশোর থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি জেলায় পৌঁছানো। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সকল ধরনের অপরাধ নিরসন করে আত্মহত্যা প্রতিরোধ এবং সর্বোপরি নিরাপদ, সহিংসতামুক্ত সমাজ গঠনের নিশ্চয়তায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাওয়াই প্রত্যেক ইয়াভিয়ানের মূল লক্ষ্য বলে নিশ্চিত করেছেন ইয়াভ প্রতিষ্ঠাতা রোহিত রায়। u

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স গঠন তর ণ তর ণ র অর ঞ জ স ট কর ছ ন ম নব ক ক জ কর ক তর ণ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

সামান্য কমিয়ে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক রাখলেন ট্রাম্প, আগস্ট থেকে কার্যকর

৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক হার নির্ধারণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ ঘোষণা দেন তিনি। এর আগে ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। 

একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক হার নির্ধারণ করেছেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৯ জুলাই থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।

যে ১৪ দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ: বার্তা সংস্থা রয়র্টাসের প্রতিবদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারণ করেছে হোয়াইট হাউস। মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, বসনিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

নতুন করে চূড়ান্ত এ শুল্কের পরিমাণ উল্লেখ করে ১৪টি দেশের সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। এসব চিঠি ট্রুথ সোশ্যালে প্রকাশও করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, সামনে আরও কিছু দেশের উদ্দেশে শুল্ক-বিষয়ক চিঠি পাঠানো হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠি: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চ শুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্কই আরোপ করা হবে। ৩৫ শতাংশ শুল্ক আমাদের দেশের সঙ্গে আপনার দেশের যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়- এই হার আসলে তার চেয়ে অনেক কম। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, যদি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা গড়ে পণ্য উৎপাদন করে, তাহলে সেই পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না। বরং আমরা দ্রুত, পেশাদারভাবে এবং নিয়ম মেনে সব অনুমোদন দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’

এর আগে ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮৪০ কোটি ডলারের মতো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়ে থাকে যার বেশিরভাগ তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৭৩৪ কোটি ডলার। 

এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শুল্ক চু্ক্তির চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে ওয়াশিংটনে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত চূক্তির খসড়া নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। 

সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত পাল্টা শুল্ক চুক্তির একটি খসড়া বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। জবাবে খসড়ার ওপর মতামত ওয়াশিংটনে পাঠায় ঢাকা। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিরা (ইউএসটিআর) বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে উভয় পক্ষের দরকষাকষির পর খসড়ায় আবারও কিছুটা পরিবর্তন আনছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সংশোধিত খসড়া নিয়েই বৃহস্পতিবার ওই বৈঠক হওয়ার উভয় পক্ষ।

বাণিজ্য বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, পাল্টা শুল্ক চুক্তির খসড়ায় সংযোজন-বিয়োজন করে ইতোমধ্যেই দুবার মতামত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। এসব মতামতের বিষয়ে দরকষাকষি করতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। 

দরকষাকষি শেষে চুক্তি করতে কতদিন সময় লাগতে পারে– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চুক্তি করার ক্ষেত্রে অন্যান্য যে কোনো দেশের সঙ্গে এগিয়ে রয়েছি। ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে এ পর্যন্ত ২৮ দফা বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন নিতে হবে। এরপর ভেটিং হয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন। তারপরই চুক্তি করার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পক্ষ থেকে বেশকিছু কঠিন প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন–কানুনের মধ্য থেকে বাংলদেশ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ওপরই বেশি জোর দিয়ে মতামত দিয়েছে। কারণ, বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এক্ষেত্রে খসড়ার মতামতে জানানো হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে এমন অন্তত ৪১ পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি আনার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্য, তুলা, প্রোপেন বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), সয়াবিন তেল, গম, এলএনজি উল্লেখযোগ্য। 

সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি কেনাকাটা বাড়ানোর উদ্যোগের বিষয়টিও মতামতে জানানো হয়। এরই অংশ হিসেবে দেশটি থেকে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির চুক্তির আওতায় বাড়তি আরও ১ বিলিয়ন ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি করা হবে। খাদ্য-শস্য আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ৩ লাখ টন গম আমদানি উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব গম আমদানি সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বাংলাদেশের সামরিক কেনাকাটার মূল উৎস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে এ অস্ত্র কেনা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং–এর প্রায় সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটি থেকে আরও কিছু উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

২ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে তা উল্লেখ করে, এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সেসব দেশে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেল সেই তালিকা তুলে ধরেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের পাল্টা ওই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।

ট্রাম্প বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনও ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’। দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয়, তার ৮০ শতাংশের বেশি সে দেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয়, সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সে দেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য। ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ