স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “মব সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

রবিবার (৬ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও উত্তরা পূর্ব থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তি‌নি এসব কথা বলেন।

আগের থেকে মবের সংখ্যা অনেকটা কমে এলেও সম্প্রতি কিছু এলাকায় আবারও এমন ঘটনা ঘটেছে জা‌নি‌য়ে উপদেষ্টা বলেন, “এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছি।রংপুরের একটি ঘটনায় ইতোমধ্যে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যে অন্যায় করবে, সে আর এলাকায় থাকতে পারবে না। তাকে খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতেও মবের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”

“আগে মব বা এ জাতীয় অপরাধ ঘটলে আমরা তেমন খবর পেতাম না। এখন মিডিয়া ও তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে সব তথ্য দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে।”

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হয়।”

“আমাদের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবে।”

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সম্পর্কে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “পুলিশের এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশের শিল্প সেক্টরের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।”

উপদেষ্টা বলেন, “দেশে যেহেতু শিল্প ও কলকারখানার সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, তাই এই বাহিনীর জনবল ও সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিষয়টির সমাধানে সরকার ইতোমধ্যে কাজ করছে।”

উত্তরা পূর্ব থানার কিছু সমস্যা ছিল উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “থানা পরিদর্শনের পর সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে তাদের ওয়াশরুমের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।”

এ সময় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি গাজী জসিম উদ্দিনসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন ড স ট র য় ল প ল শ উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ