বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।

তিন মাস আগে ঘোষিত ৩৭ শতাংশ থেকে হারটি কিছুটা কম হলেও, এটি এখনও বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক বেশি। ভিয়েতনাম সদ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করে যেখানে তাদের পণ্যের ওপর মাত্র ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।

সোমবার (৭ জুলাই) রাতে ট্রাম্প তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথে ওই চিঠি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি ৭ জুলাই তারিখের একটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর লেখেন। একইসঙ্গে নতুন শুল্কহারের বিষয়টি জানিয়ে বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশের নেতাদের উদ্দেশে চিঠি পোস্ট করেন তিনি। 

বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক হার নির্ধারণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হতে চলায় ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। এর আগে ৯ জুলাই থেকে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।

মিয়ানমার ও লাওস থেকে আমদানির ওপর ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ায় ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় ৩০ শতাংশ এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিশিয়ায় ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। আরো কিছু দেশের জন্য নতুন ঘোষণা আসতে পারে। 

অধ্যাপক ইউনূসকে দেওয়া চিঠিতে ট্রাম্প লেখেন, “প্রিয় ড.

ইউনূস, আপনাদের কাছে এই চিঠি পাঠানো আমার জন্য একটি বড় সম্মানের বিষয়। আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কের শক্তি ও প্রতিশ্রুতি এবং আপনার মহান দেশের সাথে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। তবে পরবর্তী বাণিজ্য কেবল আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং ন্যায্য, বাণিজ্যের সাথে হবে। অতএব, আমরা আপনাকে বিশ্বের এক নম্বর বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা হয়েছে এবং আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, বাংলাদেশের শুল্ক এবং অ-শুল্ক, নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার কারণে সৃষ্ট এই দীর্ঘমেয়াদি এবং অত্যন্ত স্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতি থেকে আমাদের অবশ্যই সরে আসতে হবে।”

তিনি আরো লিখেছেন, “২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে শুরু করে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো যেকোনো এবং সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাংলাদেশ থেকে আগত পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক নেব। উচ্চতর শুল্ক এড়ানোর জন্য প্রেরিত পণ্যগুলো সেই উচ্চতর শুল্কের সাপেক্ষে হবে। দয়া করে বুঝবেন, ৩৫ শতাংশ শুল্কটি আপনার দেশের সাথে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতির বৈষম্য দূর করার জন্য যা প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক কম। আপনারা জানেন, বাংলাদেশ বা আপনার দেশের কোম্পানিগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই পণ্য তৈরি বা উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কোনো শুল্ক থাকবে না।” 

চিঠিতে বাংলাদেশ যদি এই শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নেয় তাহলে শুল্ক আরো বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।

তিনি চিঠিতে লেখেন, “যদি কোনো কারণে আপনি মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তবে আপনি যে সংখ্যাটি বাড়াতে চান তা আমরা যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছি সেটির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। দয়া করে বুঝুন যে এই শুল্কগুলো বাংলাদেশের বহু বছরের শুল্ক, এবং অ-শুল্ক, নীতি এবং বাণিজ্য বাধাগুলো সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয়। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই অস্থিতিশীল বাণিজ্য ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতি এবং প্রকৃতপক্ষে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।” 

ট্রাম্প আরো লেখেন, “সামনে দীর্ঘ সময় আমরা বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আপনার সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ। আপনি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনার পূর্বে বন্ধ থাকা ট্রেডিং মার্কেটগুলো খুলতে চান এবং আপনার দেশের শুল্ক এবং অ-শুল্ক, নীতি এবং বাণিজ্য বাধা দূর করতে চান তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির একটি সমন্বয় বিবেচনা করব। আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে এই শুল্কগুলি ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী করা যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে আপনি কখনোই হতাশ হবেন না। এই বিষয়ে আপনার মনোযোগের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।” 

গত ৩ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। সে সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এর আগে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র ক ন য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র আপন র দ শ র শ ল ক আর প র জন য আম দ র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ তিন কনভেনশন অনুসমর্থন করবে বুধবার

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই হচ্ছে প্রথম দেশ, যারা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মোট ১০টি মৌলিক কনভেনশনের সব কটি অনুসমর্থন করতে চলেছে। আইএলওর মোট মৌলিক কনভেনশন ১০টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত অনুসমর্থন করেছে ৮টি। আগামী বুধবার দুটি মৌলিক কনভেনশনসহ আরও একটি অর্থাৎ তিনটি কনভেনশন অনুসমর্থন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আইএলওর এ কনভেনশনগুলোয় সই করবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সই হওয়ার কথা রয়েছে। এ সময় আইএলওর ঢাকা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যদেশগুলোর শ্রমমন্ত্রীদের ষষ্ঠ ওআইসি সম্মেলনে (১৫-১৬ অক্টোবর) যোগ দিতে গিয়ে শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন এখন কাতারে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরবেন ২১ অক্টোবর। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এ সম্মেলনেও শ্রম উপদেষ্টা আইএলওর তিন কনভেনশন অনুসমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ যে তিনটি কনভেনশনে অনুসমর্থন দেবে সেগুলো হচ্ছে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কনভেনশন ১৫৫, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মান উন্নয়নে প্রচারণামূলক কাঠামো কনভেনশন ১৮৭ এবং কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধবিষয়ক কনভেনশন ১৯০। এর মধ্যে ১৫৫ ও ১৮৭ হচ্ছে আইএলওর মৌলিক কনভেনশন।

শ্রমসচিব মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই হতে যাচ্ছে প্রথম দেশ, যে দেশ আইএলওর মোট ১০টি মৌলিক কনভেনশন অনুসমর্থন করছে।’

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গত ২৪ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আইএলও এ তিনটি কনভেনশনে অনুসমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, সই করার পর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলওর প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাউংবোর কাছে তিন কনভেনশন অনুসমর্থনের প্রমাণপত্র কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হবে। আগামী ১৭ থেকে ২৮ নভেম্বর জেনেভায় আইএলওর পরিচালনা পর্ষদের ৩৫৫তম অধিবেশন বসবে। এ অধিবেশনে শ্রম উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি দল যাচ্ছে জেনেভায়। তখনো আইএলওর মহাপরিচালকের কাছে তা হস্তান্তর করা হতে পারে।

১৯১৯ সালের ১৯ এপ্রিল ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী গঠিত হয় আইএলও, যার বর্তমান সদস্য ১৮৭। এ পর্যন্ত আইএলওর মৌলিক ৮টিসহ ৩৬টি কনভেনশন ও একটি প্রটোকলে অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ।

কোন কনভেনশনে কী আছে

আইএলও ১৯৮১ সালে পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য কনভেনশন গ্রহণ করে। এটি আইএলও কনভেনশন ১৫৫, যা অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (ওএসএইচ) হিসেবে পরিচিত। এখন পর্যন্ত মোট ৮৩টি সদস্যরাষ্ট্র এ কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে। কর্মক্ষেত্রে ওএসএইচ সংস্কৃতি গড়ে উঠলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলোর আস্থা অর্জনে ভূমিকা রাখবে বলে জানায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

আইএলও কনভেনশন ১৮৭ গৃহীত হয় ২০০৬ সালে। ১৫৫ ও ১৮৭ মোটামুটি কাছাকাছি ধরনের। কনভেনশন ১৮৭ অনুসমর্থন করেছে এ পর্যন্ত ৬৯টি সদস্যদেশ। এ কনভেনশনের মূল উদ্দেশ্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করা।

আইএলও কনভেনশন ১৯০ গৃহীত হয় ২০১৯ সালে। এটি অনুসমর্থন করেছে ৪৯টি সদস্যদেশ। এটি অনুসমর্থনের ফলে পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প খাতে ও কর্মক্ষেত্রে কর্মরত নারী কর্মী ও শ্রমিকদের অপ্রত্যাশিত আচরণ ও হয়রানি থেকে মুক্ত রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ