এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে ‘স্ত্রী’র যত অভিযোগ
Published: 11th, July 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতার বিরুদ্ধে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্ত্রী। গতকাল বৃহস্পতিবার পাকুন্দিয়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান তিনি। ভুক্তভোগী তরুণীর ভাষ্য, তাদের আড়াই বছরের একমাত্র সন্তানকেও কৌশলে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন। এমনকি, পুরোনো তারিখে তালাক দিয়েছেন তাঁকে।
এ বিষয়ে ৩০ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী সুমাইয়া আক্তার হাসি (২৫)। তিনি উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি চারটেকি গ্রামের তাজউদ্দিনের মেয়ে। অভিযোগ ও সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিকভাবে হাসির বিয়ে হয় তারাকান্দি গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে রাজিন সালেহের (৩১) সঙ্গে। রাজিন পেশায় একটি মাদ্রাসার কম্পিউটার অপারেটর। তাদের আড়াই বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে।
হাসির অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই সালেহ যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। তখন স্ত্রী-সন্তানের খরচও বহন করতেন না। তাঁর বাবার বাড়ি থেকে খরচ চালানো হতো। এক পর্যায়ে হাসিকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকবার লোক পাঠিয়ে ভালো ভালো কথা বলে বাড়ি নিয়ে যান সালেহ। এর পরও খারাপ আচরণের কারণে হাসি বাবার বাড়ি চলে আসেন।
ইউএনওর কাছে দেওয়া অভিযোগে হাসি লিখেছেন, সালেহ হুমকি দিচ্ছেন, তিনি এখন এনসিপির বড় নেতা। দেশ চালান, যা বলবেন, তাই হবে। হাসি ইউএনওর কাছে ঘটনার তদন্ত করে স্বামীর সংসারে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সই করা চিঠিতে গত ২৯ জুন রাজিন সালেহকে প্রধান সমন্বয়কারী করে দলের পাকুন্দিয়া উপজেলার ১৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এর দুই দিন আগে ২৭ জুন সালেহ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে হাসিকে তালাক দিয়েছেন। সেটি নোটিশ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠিয়েছেন ৩ জুলাই। কিন্তু নোটিশ হাসি গ্রহণ করেননি বলে জানিয়েছেন সালেহ।
এনসিপি নেতা রাজিন সালেহ এ বিষয়ে বলেন, ‘হাসির চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। আচার-আচরণও খারাপ ছিল। বনিবনা হচ্ছিল না। সেই কারণেই তালাক দিয়েছেন।’ তাঁর দাবি, একটি রাজনৈতিক মহল তাঁর সুনাম নষ্ট করতে এসব অভিযোগ তোলাচ্ছে।
পাকুন্দিয়ার ইউএনও মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তারাগঞ্জে ভাতার কার্ড না পেয়ে ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় মারধরের অভিযোগ
স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের আশায় দেড় বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে আট হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন এক অটোরিকশাচালক। দীর্ঘদিনেও কার্ড না হওয়ায় সেই টাকা ফেরত চাওয়ায় তাঁকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে আহত ভুক্তভোগী মো. রশিদুল কাজী (৩৭) ওই ইউপির চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সয়ার ইউনিয়নের দামোদরপুর সরকারপাড়ার অটোরিকশাচালক মো. রশিদুল কাজী তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বেগমের মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করার জন্য দেড় বছর আগে ইউপি চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেনকে আট হাজার টাকা দেন। তবে দীর্ঘদিনেও ভাতার কার্ড না করায় রশিদুল টাকা ফেরত চাইলে চেয়ারম্যান নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
রশিদুল কাজীর অভিযোগ, গত মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে চেয়ারম্যান টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাঁকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেন। সেখানে উপস্থিত হলে চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেন, আকবার হোসেন ও সাদেকুল মিলে ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষে তাঁকে বেদম মারধর করেন। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের কিছু চৌকিদারও মারধরে অংশ নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী রশিদুল কাজী বলেন, ‘আমি একজন অটোচালক। স্ত্রীর জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করতে গেলে আট হাজার টাকা নেন চেয়ারম্যান। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কার্ড করে দেননি। টাকা চাওয়ায় আমাকে মারধর করেছেন। প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদের কোর্ট চলছিল, সেখানে হুট করে ঢুকে রশিদুল আমার চেয়ারের কাছে দাঁড়ায়। আমি তাকে পরে ডেকে নেব বলে বসতে বলি। এরপর সে উত্তেজিত হয়ে আমাকে গালিগালাজ করে। সহ্য করতে না পেরে একটা থাপ্পড় মেরেছি। এরপর চৌকিদাররা তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় সিঁড়িতে পড়ে আঘাত পায়। তাকে চিকিৎসকও দেখিয়েছি। সে ও চিকিৎসক দুজনই বলেছে, কোনো সমস্যা নেই। ঝামেলা সেদিনই মিটে গেছে। আর টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ করেছে, তা ঠিক নয়।’
এ বিষয়ে তারাগঞ্জের ইউএনও রুবেল রানা বলেন, অভিযোগ পেয়েছেন। চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে এনেছিলেন ওই ব্যক্তি। অভিযোগটি ইউএনও বরাবর হওয়ায়, সেটি ইউএনওকে দিতে বলা হয়। থানায় অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।