ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী ৫০ রিয়াল মূল্যের নতুন একটি ধাতব মুদ্রা জারি করার ঘোষণা দিয়েছে। রবিবার (১৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় অবস্থিত হুতি-নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে শনিবার আল-মাসিরাহ টিভি জানায়, রবিবার থেকে ৫০ রিয়াল মূল্যের একটি নতুন ধাতব মুদ্রা বাজারে আনা হবে। কাগজের মুদ্রার অবনতিশীলতার ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ।

কাগজের মুদ্রার প্রধান সমস্যা হলো এর মূল্য হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো অতিরিক্ত মুদ্রণ, মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এছাড়া, কাগজের মুদ্রা জাল হওয়ারও ঝুঁকি থাকে, যা অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়। 

ইয়েমেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নতুন মুদ্রা বাজারে আনার লক্ষ্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক নোট প্রতিস্থাপন ও ধাতব মুদ্রার মান উন্নত করা।

ব্যাংক দাবি করেছে, এই প্রবর্তনের ফলে মোট অর্থ সরবরাহ বা বিনিময় হার প্রভাবিত হবে না।

সিনহুয়ার প্রতিবেদন বলছে, দেড় বছরেরও কম সময়ের মধ্যে উত্তর ইয়েমেনের স্থানীয় বাজারে হুতি গোষ্ঠী কর্তৃক এটি দ্বিতীয় নতুন মুদ্রা জারি করা হলো। এর আগে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে হুতি গোষ্ঠী ১০০ রিয়াল মূল্যের একটি নতুন ধাতব মুদ্রা বাজারে ছাড়ে, যা দক্ষিণ ইয়েমেনের বন্দর শহর আদেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেন সরকার প্রত্যাখ্যান করে।

হুতিরা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারের নোট প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

২০১৪ সালের শেষের দিকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হুতি গোষ্ঠী উত্তর ইয়েমেনের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশেষ করে, দেশটির রাজধানী সানা এবং লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। হুতি গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে আনসারুল্লাহ (আল্লাহর পক্ষে) নামে পরিচিত।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

তালেবান, দেওবন্দ এবং ভারতের ‘ধর্মীয় কূটনীতি’

১০ অক্টোবর। শরতের বাতাসে দিল্লির পাতা ঝরছে। ভারতের মাটিতে পা রাখলেন কাবুলের প্রভাবশালী নেতা মৌলভি আমির খান মুত্তাকি, যিনি আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতে তাঁর ছয় দিনের সফর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির নতুন মানচিত্র আঁকছে। 

দিল্লিতে নেমে মুক্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বসলেন নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হলো, কাবুলে ভারত আবার দূতাবাস খুলবে, যা তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বন্ধ। এরপর ১১ অক্টোবর মুত্তাকি গেলেন সাহারানপুরের দারুল উলুম দেওবন্দে; যা ইসলামিক ইমারতের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতার প্রথম এই ভারতীয় মাদ্রাসা পরিদর্শন।

ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কীভাবে কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান সরকারের একজন মন্ত্রীকে গ্রহণ করল—এ রকম প্রশ্ন নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে নিশ্চয়ই। কাবুলের সঙ্গে দিল্লি এমন এক সময়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের দূরত্ব বাড়ছে, সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলছে। তাহলে দেওবন্দ পরিদর্শন কি শুধু প্রতীকী, নাকি এর মধ্যে কোনো গভীর রাজনৈতিক ইঙ্গিতও রয়েছে?

২.

২০২১ সালের আগস্ট তো বেশি দূরের সময় নয়। মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর তালেবান ক্ষমতায় এলে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারত। চার বছর ‘সম্পর্কহীন’ থাকার পর তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার দিল্লিতে এসে বললেন, অমৃতসর-কাবুল ফ্লাইট শুরু হবে শিগগিরই। চার দশকের যুদ্ধে ক্লান্ত আফগানিস্তানের মানুষ উন্নয়নের জন্য উদ্‌গ্রীব।

আফগানিস্তানের আগের সরকারের সময় ভারত সেখানে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে সালমা ড্যাম, জারঞ্জ-দেলারাম হাইওয়ে ও পার্লামেন্ট ভবনের মতো প্রকল্পে। এবার মুত্তাকি এসে আফগানিস্তানের খনিজ ক্ষেত্রেও ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, এটা ‘তালেবান ২.০’-এর ইঙ্গিত। আসলেই কি তাই, নাকি এটা ‘শত্রুর শত্রু হলো বন্ধু’ কৌশলের খেলা? ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান, যারা এখন আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের শত্রু।

দেওবন্দের যে চিন্তাধারা তালেবানকে প্রভাবিত করেছে, সেটি এসেছে পাকিস্তানের ‘ছাঁকনি’ দিয়ে। ■ প্রথমবারের মতো দেওবন্দ মাদ্রাসার সঙ্গে এবং দেওবন্দি ভারতীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রচিত হলো পাকিস্তানের ছায়ার বাইরে গিয়ে।

বোঝার জন্য বলি, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেকটাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয়। ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বটে; কিন্তু নানা যৌক্তিক কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে। কিন্তু ভারত ছাড়া আমাদের আবার চলেও না। চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ এমনকি ঈদের বাজার করতে ভারতেই ভরসা ছিল এতকাল; এমনকি বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদেরও ‘শেষ আশ্রয়স্থল’ ভারত। বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের যদিও আগ্রাসী ভারতের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু দেওবন্দ মাদ্রাসার কারণে ভারতের আলেম-ওলামার সঙ্গে তাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগও রয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশে বড় কোনো ইসলামি সম্মেলন মানেই ভারতের কোনো আলেমের আগমন।

দিল্লি সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি

সম্পর্কিত নিবন্ধ