পরিবেশ আইন ও জলবায়ু ন্যায়বিচার বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত হলো দেশের অন্যতম বৃহৎ আইনভিত্তিক প্রতিযোগিতা ‘এসসিএলএস আইন অলিম্পিয়াড ২০২৫’। দুই দিনব্যাপী আয়োজনে দেশের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাছাই করা ৪০টি দল অংশ নেয়। যাদের নির্বাচন করা হয় ৭০টি নিবন্ধিত দলের মধ্য থেকে।

গত ১১ ও ১২ জুলাই দু’দিনব্যাপী চবির আইন অনুষদের একে খান অডিটোরিয়ামে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। থিম ছিল ‘পরিবেশ আইন ও জলবায়ু ন্যায়বিচার’। আয়োজন করে আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘সোসাইটি ফর ক্রিটিক্যাল লিগ্যাল স্টাডিজ (এসসিএলএস)’।

প্রতিযোগিতা পাঁচটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয় ‘পিক্টোরিয়াল প্লি’, ‘রেবেলিয়াস স্পিরিট’, ‘ক্রিটিক্যাল আই’, ‘রিফর্ম অ্যাসেম্বলি’ এবং ‘সিম্পোজিয়াম রাউন্ড’। প্রতিটি রাউন্ডে অংশগ্রহণকারীরা আটটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা নিয়ে যুক্তি, বিশ্লেষণ ও বিতর্কে অংশ নেন।

প্রথম দিনে প্রতিযোগিতার প্রাথমিক তিনটি রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, জলবায়ু ন্যায্যতা ও আইনি প্রতিকার নিয়ে যুক্তি-তর্কে অংশ নেন।

প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিকার এখন কেবল প্রকৃতির বিষয় নয়, এটি মানুষের জীবনের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে যুক্ত। তাই সংবিধানে এই বিষয়টিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সময় এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাড় দখল, দূষণ ও প্লাস্টিক বর্জ্যে স্রোতহীন হয়ে পড়ছে নদী। একসময়ের জীবন্ত নদীগুলো আজ মৃতপ্রায় জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। এই বাস্তবতা আমাদের পরিবেশ নিয়ে আরও জোরালোভাবে ভাবতে বাধ্য করছে।’

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন– ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. আহসানুল করিম এবং আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জাফর উল্লাহ তালুকদার।

গতকাল শনিবার অলিম্পিয়াডের দ্বিতীয় দিন শুরু হয় ‘রিফর্ম অ্যাসেম্বলি’ রাউন্ড দিয়ে। এরপর হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুপুরে ঘোষণা করা হয় সেমিফাইনালের ফলাফল। পরে অনুষ্ঠিত হয় ‘রিসার্চ পেপার সুয়াপ’। বিকেল ৪টায় শুরু হয় চূড়ান্ত পর্ব ‘সিম্পোজিয়াম রাউন্ড’। এরপর আয়োজিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সাইয়্যেদ মো. তাজরুল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক ও ফিন্যান্স) অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্লাহ পাঠওয়ারী, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জাফর উল্লাহ তালুকদার।

অতিথিরা প্রতিযোগীদের মেধা, বিশ্লেষণী দক্ষতা ও বাস্তবচিন্তার প্রশংসা করেন। তারা বলেন, ‘এই প্রজন্ম আইনি জ্ঞান দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিতে পারবে। আইনের মাধ্যমে পরিবেশ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে। এই ধরনের আয়োজন পরিবেশ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করবে। সমাজের সর্বস্তরে পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পরিবেশ দূষণ এখন দেশের বড় একটি সমস্যা। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়ছে। এটা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, সারাবিশ্বের সমস্যা।  আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে, পরিবেশ দূষণ হয় এমন কোনো কাজ আমরা করব না, অন্যদেরও না করতে উৎসাহিত করব।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন অন ষ ঠ ত র উন ড পর ব শ জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে ভূখণ্ড নিয়ে ‘কোনো আপস’ হয়নি: রুশ কর্মকর্তা

যুদ্ধের ইতি টানতে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘কোনো আপস’ হয়নি। মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর এক রুশ কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও প্রেসিডেন্টের জামাতা জ্যারেড কুশনার মঙ্গলবার ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার অংশ হিসেবে তাঁরা এ বৈঠক করেন। এ বৈঠক প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে এবং মধ্যরাতের পর শেষ হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্রেমলিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কোনো আপসে পৌঁছাতে পারিনি। তবে মার্কিন কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে।’

উশাকভ মঙ্গলবারের আলোচনাকে ‘খুবই ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ উল্লেখ করলেও তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ওয়াশিংটন ও মস্কো— উভয় পক্ষের সামনে এখনো অনেক কাজ বাকি।’

মার্কিন প্রতিনিধিদল একটি শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে রাশিয়ার রাজধানীতে গিয়েছিল। সেখানে আগের ফাঁস হওয়া ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনার খসড়ার হালনাগাদ সংস্করণ নিয়ে আলোচনা হয়। ফাঁস হওয়া ‘খসড়াটি রাশিয়ার পক্ষে গেছে’— ইউক্রেন ও দেশটির মিত্রদের এমন কঠোর সমালোচনার মুখে ওয়াশিংটন এতে পরিবর্তন আনে।

কিয়েভ ও ইউরোপের পাল্টা প্রস্তাবটিরও নিন্দা করেছে ক্রেমলিন। পুতিন বারবার বলে আসছেন, এটি তাঁর দেশের কাছে ‘অগ্রহণযোগ্য’।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কো, রাশিয়া; ২ ডিসেম্বর, ২০২৫।

সম্পর্কিত নিবন্ধ