২৫ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ার: ৫ হাজার টাকার জন্য দরকষাকষি করেন শিখা
Published: 26th, July 2025 GMT
অভিনেত্রী শিখা মৌ, টেলিভিশনের পর্দায় নিয়মিত মুখ। অভিনয়ের মধ্যে দিয়েই কেটে গেছে জীবনের একটা বড় সময়। সংসার, সন্তান আর ক্যামেরার সামনে-পর্দার পেছনের সংগ্রাম, সবকিছু মিলিয়ে যেন এক জীবন্ত উপন্যাস তার জীবন।
মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই বিয়ে হয়েছিল শিখার। স্বামীকে হারিয়েছেন বহু আগে, প্রায় ২৬ বছর হয়ে গেল। তখন অনার্সে পড়তেন। তিন সন্তানের মা; দুই ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেরা বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। এখন মেয়েকে নিয়েই তার দিন কাটে।
শুধু সংসার নয়, নিজের স্বপ্নকেও আগলে রেখেছেন শিখা মৌ। অভিনয়কে ভালোবেসে নাগরিক নাট্যাঙ্গনে থিয়েটার দিয়ে শুরু করেছিলেন যাত্রা। টেলিভিশন নাটক থেকে সিনেমা—সবখানেই কাজ করেছেন নিষ্ঠা আর শ্রম দিয়ে। তবু আজো তাকে ৩ হাজার, ৫ হাজার টাকার জন্য দরকষাকষি করতে হয়!
আরো পড়ুন:
আমার জীবনে ভুল বলে কিছু নেই: জয়া আহসান
যিনি ‘মীনা পাল’, তিনিই ‘কবরী’
শিখা মৌ বলেন, “৫ হাজার টাকা চাইলে অনেকে ভাবেন অনেক চেয়ে ফেলেছি। অথচ নতুনরাও কত টাকা নিচ্ছে! আমি তো চাইলেই চাইতে পারি, ২৫ বছর তো হয়ে গেল। কিন্তু ভাবি, সবাই যাতে আমার সঙ্গে কাজ করতে পারে—এজন্য রেমুনারেশন বাড়াই না।”
চোখে জল এনে দেওয়া কণ্ঠে বলেন, “কেউ অসুবিধার কথা বললে বলি—ঠিক আছে বাবা, যা পারো দিও। আমি তো এখন একা। আমার ইনকাম বলতে অভিনয়টাই।”
তবে হাল সময়ে কাজ একেবারে কমে গেছে। গত আড়াই মাসে মাত্র তিন-চারটি কল পেয়েছেন। তার ওপর আবার পারিশ্রমিক নিয়ে সমস্যা লেগেই আছে। তবু থেমে থাকেননি তিনি। বেঁচে থাকার জন্য শিখা লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন নীরবে।
মায়ের সহযোগিতায় পড়াশোনা, থিয়েটার আর টিউশনি করেছেন একসঙ্গে। পাশাপাশি শাড়ি ডিজাইন করে সেল করেছেন, বুটিকের কাজ করেছেন। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়েও কাউকে কষ্ট দেননি, নিজের অভাবের কথা বলে সাহায্য চাননি। শিল্পী সমিতি থেকেও কখনো কোনো সহযোগিতা নেননি এই অভিজ্ঞ অভিনেত্রী।
তার ভাষায়, “আমি সিঙ্গেল মাদার; ডিভোর্সি না, বিধবা। কেউ কি ভাবেন, একজন সিঙ্গেল মা কত টাকা ইনকাম করতে পারে?”
শিখা মৌ অভিনীত সিনেমার তালিকাও ছোট নয়। ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘ছায়াবৃক্ষ’, ‘লকডাউনের ভালোবাসা’, ‘মন বোঝে না’, ‘সোলমেড’, ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ শিরোনামের সিনেমায় তাকে দেখা গেছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘জমজ ভূতের গল্প’।
ঢাকা/রাহাত/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।
রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।
নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।
আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।
রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।
‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।
একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।
রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।
যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।
পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার
আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩