দুই শতাধিক রান করেও রেকর্ড সপ্তমবার হারলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ
Published: 27th, July 2025 GMT
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০০ রান মানেই জয়ের নিরাপদ গণ্ডি, এই ধারণা যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্ষেত্রে এখন আর প্রযোজ্য নয়। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ২০৫ রান করেও হারলো তারা। সেটিও ৩ উইকেট আর চার বল হাতে রেখে! সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে বাংলাদেশ সময় আজ রোববার (২৭ জুলাই) সকালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে এমন লজ্জাজনক রেকর্ড গড়লো ক্যারিবীয়রা। ২০০’র বেশি রান তুলে এটি তাদের সপ্তম পরাজয়, যা বিশ্ব টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাট হাতে জমজমাট পারফরম্যান্সই দিয়েছিল। শারফেন রাদারফোর্ডের ৩১, পাওয়েল ও শেফার্ডের সমান ২৮ রানের ইনিংসে ২০৫ রানে পৌঁছায় দলটি। কিন্তু বোলারদের হতাশাজনক প্রদর্শনী এবং তিনটি সহজ ক্যাচ মিস তাদের জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেয়।
অস্ট্রেলিয়া জয়ের লক্ষ্যে নেমে আগ্রাসী শুরু পায়। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল মাত্র ১৮ বলে ৪৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। যেখানে ছিল ১টি চার আর ৬টি বিশাল ছক্কা। ইংলিস খেলেন ৩০ বলে ৫১ রানের ঝকঝকে ইনিংস। তবে ম্যাচের আসল নায়ক হয়ে উঠলেন ক্যামেরন গ্রিন। শেষ পর্যন্ত ৩৫ বলে অপরাজিত ৫৫ রান করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
আরো পড়ুন:
রাহুল-গিলের ব্যাটিং দৃঢ়তা, শেষ দিনে হবে কি শেষ রক্ষা?
ম্যাচ রেফারি নাকি কোচ, মাহমুদউল্লাহর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঘিরে সংশয়
ম্যাচের বিভিন্ন সময় বৃষ্টি খেলায় বিঘ্ন ঘটালেও, জয়ের গতিপথ থেকে অস্ট্রেলিয়াকে সরাতে পারেনি। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২ রান, সেই হিসেব মিটে যায় মাত্র দুই বলেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল হোসেন বৃষ্টির মধ্যেই শেষ ওভার করতে এলেও মাঠের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন একেবারে শান্ত ও নিয়ন্ত্রিত। অস্ট্রেলিয়া পেয়ে যায় সহজ জয়, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান পাহাড় গড়েও মুখ থুবড়ে পড়ে আত্মঘাতী ভুলে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০৫/৯ (২০ ওভার)
রাদারফোর্ড ৩১, শেফার্ড ২৮, পাওয়েল ২৮; জাম্পা ৩/৫৪, হার্ডি ২/২৪।
অস্ট্রেলিয়া: ২০৬/৭ (১৯.
গ্রিন ৫৫*, ইংলিস ৫১, ম্যাক্সওয়েল ৪৭; ব্লেডস ৩/২৯, হোল্ডার ১/৩৮।
ফল: অস্ট্রেলিয়া জয়ী ৩ উইকেটে।
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে ৪–০ ব্যবধানে।
ম্যাচসেরা: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (ব্যাটিং ৪৭ + ফিল্ডিং ২ ক্যাচ)।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইন ড জ ক র ক ট
এছাড়াও পড়ুন:
হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।
রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।
নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।
আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।
রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।
‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।
একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।
রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।
যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।
পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার
আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩