নাটকীয় টাইব্রেকারে ইউরোপ সেরা ইংল্যান্ড, স্পেনের স্বপ্নভঙ্গ
Published: 28th, July 2025 GMT
স্পেনের আধিপত্য, দারুণ গোল, আর তারপর ইংল্যান্ডের প্রত্যাবর্তন; সব মিলিয়ে উইমেন’স ইউরো ২০২৫-এর ফাইনাল ছিল এক উত্তেজনার নাট্যমঞ্চ। ম্যাচে দারুণভাবে এগিয়ে গিয়েছিল স্পেন। কিন্তু শেষ হাসি হেসেছে ইংল্যান্ড, যারা টাইব্রেকারে ৩-১ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে আবারও ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নিজেদের মুকুট অক্ষুণ্ণ রাখল।
রোববার (২৭ জুলাই) দিবাগত রাতে ঐতিহাসিক এই লড়াইয়ে শুরু থেকেই স্পেন ছিল আগ্রাসী মেজাজে। বল দখল, আক্রমণ—সব ক্ষেত্রেই তারা ছিল এগিয়ে। ম্যাচের ২৫তম মিনিটেই মারিওনা কালদেন্তের দুর্দান্ত হেডে স্পেন ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। কিন্তু ইংল্যান্ড হার মানার দল নয়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বদলি হিসেবে নামা ক্লোয়ি কেলির দুর্দান্ত ক্রসে অ্যালেসিয়া রুশোর হেড ইংলিশ শিবিরে ফেরায় প্রাণ, ৫৭তম মিনিটে আসে সমতা।
পুরো ম্যাচে স্পেন বল দখলে রেখেছিল প্রায় ৬৫ শতাংশ সময়। গোলমুখে শটও নিয়েছিল ২২টি। তবে সেসব প্রচেষ্টা ধাক্কা খায় ইংলিশ রক্ষণ আর গোলরক্ষক হানাহ হ্যাম্পটনের সাহসী পারফরম্যান্সে। ইংল্যান্ডও ৮টি শটের মধ্যে ৫টি লক্ষ্যে রাখে, যেগুলোর বেশ কয়েকটি ছিল বিপজ্জনক।
আরো পড়ুন:
রোনালদোর পাশে ফেলিক্স? ৫০ মিলিয়ন ইউরো নিয়ে দৌড়াচ্ছে আল-নাসর
রাশফোর্ডের অভিষেক, তরুণদের ঝলকে বার্সার জয়
নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়েও গোল না আসায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই শুরু হয় নাটক। ইংল্যান্ডের প্রথম শটেই বেথ মিড পা পিছলে ‘ডাবল টাচ’ করায় শট বাতিল হয়। কিন্তু চাপ সামলে পরের তিনটি শট জালে পাঠিয়ে ম্যাচে ফিরে আসে তারা।
স্পেনের ভাগ্য অবশ্য ততটা সহায় ছিল না। তাদের তিনটি শটই ব্যর্থ হয়—দুটি ঠেকান হানাহ হ্যাম্পটন, যার মধ্যে ছিল বার্সা তারকা আইতানা বনমাতির গুরুত্বপূর্ণ শটটি। একমাত্র সফল স্প্যানিশ শটও ম্যাচে ফল বদলাতে পারেনি।
এই জয়ে ইংল্যান্ড ইউরোর ইতিহাসে তৃতীয় দল হিসেবে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করল। এর আগে কেবল জার্মানি (৮ বার) এবং নরওয়ে (২ বার) এই কীর্তি গড়েছিল।
বিশ্বকাপজয়ী স্পেনের সামনে ছিল প্রথম ইউরো শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগ, কিন্তু টাইব্রেকারে হোঁচট খেয়ে সোনার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড নারী ফুটবলের এক নতুন অধ্যায় রচনা করল। সংগ্রামের মাঝেও আত্মবিশ্বাস আর ঐক্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ইউর প য় ন ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।
রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।
নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।
আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।
রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।
‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।
একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।
রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।
যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।
পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার
আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩