সেনাঘাঁটিতে সহকর্মীদের গুলি করলেন মার্কিন সার্জেন্ট, আহত ৫
Published: 7th, August 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যে অবস্থিত ফোর্ট স্টুয়ার্ট সামরিক ঘাঁটিতে নিজের কর্মক্ষেত্রে গুলি চালানোর অভিযোগে বুধবার (৬ আগস্ট) একজন সক্রিয় কর্তব্যরত সেনা সার্জেন্টকে আটক করা হয়েছে। গুলিতে তার পাঁচ সহকর্মী আহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। খবর সিএনএনের।
তৃতীয় পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডিং জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জন লুবাসের মতে, ২৮ বছর বয়সী সার্জেন্ট কোরনেলিয়াস স্যামেন্ট্রিও র্যাডফোর্ড নিজের ব্যক্তিগত বন্দুক দিয়ে গুলি চালাতে শুরু করলে সহকর্মীরা সাহসিকতার সঙ্গে তাকে প্রতিরোধ করে আটক করতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় পুরো ঘাঁটিতে সতর্কতা জারি করে সাময়িক লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
ঘটনার পর দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আহতদের স্থানীয় সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনজনকে জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হয়, বাকি দুইজনও চিকিৎসাধীন।
আরো পড়ুন:
রয়টার্সের বিশ্লেষণ: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের শুল্ক চুক্তির সব আশা শেষ?
পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঘাঁটির কমান্ডার লুবাস বলেন, “আহত পাঁচজন সেনার অবস্থা স্থিতিশীল এবং তারা পর্যবেক্ষণে আছেন। র্যাডফোর্ডের হামলার উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।”
মামলা সম্পর্কে ব্রিফ করা একজন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার মতে, গুলি চালানোর শিকার একজনের সঙ্গে র্যাডফোর্ডের মতবিরোধ হয়েছিল। সে সেই সহকর্মীকে একটি রক্ষণাবেক্ষণ এলাকায় অনুসরণ করে এবং চারজনকে গুলি করার আগে তার বুকে গুলি করে।
কী নিয়ে মতবিরোধ ছিল তা স্পষ্ট নয়।
লুবাস বলেন, পুলিশ র্যাডফোর্ডকে গ্রেপ্তার করার আগেই অন্যান্য সেনা সদস্যরা তাকে মোকাবিলা করে ‘আরো হতাহতের ঘটনা রোধ’ করে। সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের পরিবর্তে ব্যক্তিগত হ্যান্ডগান থেকে গুলি করেন অভিযুক্ত ওই সেনা।
তিনি বলেন, “গোলাগুলির প্রত্যক্ষদর্শী এলাকার সেনা সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ও ভয় ছাড়াই আক্রমণকারীকে মোকাবিলা করে তাকে দমন করে। এর ফলে আইন প্রয়োগকারীরা তাকে হেফাজতে নিতে সক্ষম হয়।
অভিযুক্ত ওই সেনা কমকর্তার বাবা এডি র্যাডফোর্ড দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তিনি সাম্প্রতিক সময়ে তার ছেলের কোনো অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেননি এবং গুলি চালানোর কারণ কী হতে পারে তা তিনি জানেন না।
টাইমসের খবর অনুসারে, এডি র্যাডফোর্ড বলেছেন, তার ছেলে ফোর্ট স্টুয়ার্টে বর্ণবাদের বিষয়ে পরিবারের কাছে অভিযোগ করেছিল এবং স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছিল।
মার্কিন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলের বাসিন্দা র্যাডফোর্ড ২০১৮ সালে অটোমেটেড লজিস্টিক স্পেশালিস্ট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাকে ফোর্ট স্টেওয়ার্ট ঘাঁটির দ্বিতীয় ব্রিগেড কমব্যাট টিমে নিযুক্ত করা হয়। তার দায়িত্ব ছিল সরবরাহ ও গুদাম পরিচালনা করা।
লুবাস বলেন, র্যাডফোর্ডকে কখনো যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করা হয়নি এবং সামরিক রেকর্ডে তার বিরুদ্ধে মানসিক আচরণগত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে, জেনারেল স্বীকার করেছেন যে, র্যাডফোর্ডকে মে মাসে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল- আর এই ঘটনাটি সম্পর্কে গুলি চালানোর আগে তার চেইন অব কমান্ড অবগত ছিল না।
লুবাস বলেন, “ঘটনাটি ঘটার আগ পর্যন্ত ডিইউআই (মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো) গ্রেপ্তারের বিষয়টি তার চেইন অব কমান্ডের কাছে অজানা ছিল। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ডাটাবেজগুলো খতিয়ে দেখতে শুরু করেছি।”
সাভানা থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ফোর্ট স্টুয়ার্ট মিসিসিপি নদীর পূর্বে মার্কিন সেনাবাহিনীর বৃহত্তম পোস্ট। এটি সেনাবাহিনীর তৃতীয় পদাতিক ডিভিশনে নিযুক্ত হাজার হাজার সৈন্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আবাসস্থল।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ল ব স বল ন সহকর ম কম ন ড অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরায় ‘রেডি টু কুক ফিশ’ প্রযুক্তিতে সফল উদ্যোক্তা লিজা
মাগুরা সদরের পারনান্দুয়ালী বেপারী পাড়ার গৃহবধূ লিজা এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে এবং অলটারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এডিআই) বাস্তবায়নে মাগুরায় প্রথমবারের মতো তিনি চালু করেছেন ‘রেডি টু কুক ফিশ’ প্রযুক্তিভিত্তিক মাছ প্রক্রিয়াজাত ও বিক্রয় কার্যক্রম।
২০২৪ সালের ২৮ জুন শুরু হওয়া এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগের আওতায় লিজা পেয়েছেন ডিপ ফ্রিজ, দোকান উন্নয়ন খাতে নগদ সহায়তা, মাছ সংগ্রহে অর্থ সহায়তা, প্রচারের জন্য লিফলেট ও সাইনবোর্ড। ঘরের পাশে ছোট দোকানে বসেই তিনি এই কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তার স্বামী জাকির হোসেনও তাকে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছেন।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে নদী, সাগর, ঘের ও পুকুরের দেশি ও সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে সেগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ধুয়ে, কেটে, বেছে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ভোক্তারা অফলাইনে দোকান থেকে এবং অনলাইনে ঘরে বসেই পাচ্ছেন ঝামেলাহীন, পরিচ্ছন্ন ও রান্নার জন্য প্রস্তুত মাছ।
আরো পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদ: মৎস্য আহরণের প্রথম দিন রাজস্ব আয় ২০ লাখ টাকা
‘অ্যান্টিবায়োটিক গুরুতর হুমকি হয়ে উঠছে’
‘রেডি টু কুক ফিশ’ সেবাটি শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তারা অল্প দামে অল্প পরিমাণে মাছ কিনে ঘরে বসে রান্না করতে পারছেন, যা সময় ও পরিশ্রম- দুটোই বাঁচাচ্ছে।
মাগুরা ওয়ার্ল্ড নার্সিং কলেজে শিক্ষার্থী সুফিয়া খাতুন বলেন, “আমি একজন শিক্ষার্থী। আমি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করি। বেশিরভাগ সময় আমাকে কলেজ ও পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ কারণে বাজারে যাওয়া এবং বাজার থেকে মাছ কিনে এনে কেটে রান্না করা খুবই কষ্টসাধ্য। হঠাৎ সন্ধান পেলাম রেডি টু কুক ফিশ অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। এরপর থেকে আমি প্রয়োজন অনুযায়ী অনলাইনে অর্ডার দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা মাছ ক্রয় করে রান্না করি। এতে করে আমার সময় বেঁচে যাচ্ছে এবং আমিষের চাহিদা পূর্ণ হচ্ছে।”
স্কুল শিক্ষিকা মারুফা সুওলতানা বলেন, “আমি একজন কর্মজীবী নারী। দিনের বেশিরভাগ সময় আমাকে অফিসে থাকতে হয়। কাটাকাটির ঝামেলায় মাছ খাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল আমাদের পরিবারে। কিন্তু বর্তমানে রেডি টু কুক ফিশ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দিনে-রাতে যেকোনো সময় অর্ডার দিয়ে সহজেই পরিবারের মাছের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।”
লিজার ব্যবসার মাধ্যমে ইতোমধ্যে দুজন নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন তারা মাছ পরিষ্কার, কাটা এবং প্যাকেটজাত করার কাজ করেন। এভাবে একজন নারী হিসেবে লিজা নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অন্য নারীদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছেন।
মাছ প্রক্রিয়াজাত কাজে যুক্ত থাকা সকিনা খাতুন বলেন, “আগে শুধু নিজের ঘরে কাজ করেই সময় পার করতাম। কিন্তু বর্তমানে লিজা আপুর প্রতিষ্ঠানে মাছ কাটা, ধোয়া এবং প্যাকেট জাতের কাজ করি। এতে করে আমার মাসে আয় হচ্ছে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা। এই টাকায় আমার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে সুবিধা হচ্ছে।”
লিজা অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও তার পণ্য বিক্রি করছেন। ধীরে ধীরে তৈরি করেছেন একটি নিজস্ব গ্রাহকভিত্তি। তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল। সংসারের চাপে সেটা সম্ভব হয়নি। অনেক চিন্তা করে মাথায় এল, মাছ ধোয়া, কাটা, বাছাইয়ের ঝামেলা থেকে মানুষকে মুক্তি দিলে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে। আমি সেটাই করলাম, আর মানুষ সেটা গ্রহণ করেছে। পরিবার ও স্বামীর সহযোগিতায় আমি আমার ব্যবসা বড় করতে চাই। একদিন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হব, আশা করি।”
এডিআই এর মৎস্য কর্মকর্তা সামিউর রহমান বলেন, “লিজার মতো উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে আমরা চাই, নারীরা প্রযুক্তি নির্ভর উদ্যোগে এগিয়ে আসুক। এ উদ্যোগটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।”
সম্প্রতি মাগুরা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজ সরেজমিনে লিজার দোকান পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, “এডিআই এর এই উদ্যোগ শুধু একজন নারীকে নয়, পুরো সমাজকে উপকারে আনবে। আমরা এ ধরনের কাজের পাশে আছি।”
ঢাকা/শাহীন/মেহেদী