ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেছেন, ‘মেধাবীরা মেধার কথা বলে, ইয়াং জেনারেশন করাপশনের বিরুদ্ধে কথা বলে, আবার সুযোগ পাইলে এগুলাই চুরি করে, এগুলাই আবার দুর্নীতি করে। এখন দেখেন নাই, সমন্বয়ক–টমন্বয়ক হইয়া আহারে দেশকে কী ভালোবাসে! এখন আবার চাঁদাবাজির দায়ে, ধর্ষণের দায়ে সবকিছুর দায়ে এগুলা ধরা খাচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এডুকেশনের মেইন পারপাসটাই হচ্ছে হারমোনিয়াস ডেভেলপমেন্ট তৈরি করা। যদি এই হারমোনিয়াস ডেভেলপমেন্ট করতে না পারে, দিস ইজ নট এডুকেশন। এটাকে বলা হয়, শুধু মানুষের মধ্যে শিক্ষা ঢোকানো হয়েছে মেশিন তৈরি করার জন্য, উৎপাদনের মেশিন তৈরি করার জন্য। কিন্তু এডুকেশনের মূল পারপাস এখানে সার্ভ হয় না। এ কারণে বলা হয়, যদি তুমি তোমার সন্তানকে তিনটি “আর” শিক্ষা দাও—রিডিং, রাইটিং এবং অ্যারিথমেটিক আর ফোর্থ “আর” হিসেবে যদি তুমি রিলিজিয়নকে না রাখো, পঞ্চম “আর” হিসেবে তুমি একজন রাসকেল পাবে।’

ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি বলেন, ‘সোসাইটিতে আমাদের জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, মনুষ্যত্ববোধ কমে যাচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে পাথর মেরে হত্যা করা, এটা কোন বর্বরতার নজির আমরা স্থাপন করছি? সম্পদের মোহে নিজের ভাইকে হত্যা করা কোন বর্বরতার নজির? মাদক গ্রহণ না করতে পেরে নিজের পিতাকে হত্যা করা, এটা কোন বর্বরতার নজির? এই সোসাইটি কেন তৈরি হয়েছে? মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থা, ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা যে সোসাইটিতে আছে, সেই সোসাইটিতে তো ধর্ষণ জিরো পর্যায়ে। ইসলামিক দেশগুলোতে যাবেন, সেখানে জিরো পর্যায়ের ধর্ষণ হচ্ছে, করাপশনের পরিমাণ কম। অথচ যে সোসাইটিতে ওয়েস্টার্ন ফিলোসপির কথা আমরা বলি, সেখানে মানুষের সুইসাইডাল রেট অনেক বেশি। কারণ, তাঁরা সামাজিকীকরণ ভুলে গিয়েছে। সামাজিক বন্ধনগুলো থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’

পশ্চিমা সংস্কৃতি কখনো মানুষকে শান্তি দিতে পারে না বলে মন্তব্য করেন নুরুল ইসলাম বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্যতা বিকৃতকারী জাতি হচ্ছে এই পশ্চিমারা। যাদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনাগুলো হ্রাস পেয়েছে, হিংস্রতা ও বর্বরতা তাদের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। আমাদের প্রাচ্যের প্রসিদ্ধ সংস্কৃতির মধ্যে পশ্চিমারা এই খেয়ালিপনা ঢুকিয়ে আমাদের ফ্যামিলি বন্ডিংসগুলো নষ্ট করে দিতে চায়।’

জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসান আল মামুনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ফকির মাহবুবুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় এইচআরডি সম্পাদক শরীফ মাহমুদ, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলাম, সাবেক নায়েবে আমির মোসাদ্দেক ভূঁইয়া, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি খালেদ হাসান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স স ইট ত ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তর নিয়ে প্রশ্ন রেখে রাজনীতি করার স্বপ্ন যেকোনো দলের জন্যই আত্মঘাতী হবে: ইসলামী ছাত্র আন্দোলন

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বলেছে, ‘সম্প্রতি টিএসসিতে একটি প্রদর্শনীতে কিছু ছবিকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। একাত্তর এ জাতির চেতনার কেন্দ্রবিন্দু, যা নিয়ে প্রশ্ন রেখে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার স্বপ্ন যেকোনো দলের জন্যই আত্মঘাতী হবে। একই সঙ্গে নতুন বাংলাদেশে কেউ যদি মব তৈরি করে মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের স্বাধীনতাকে হরণ করতে চায়, তাহলে জুলাই জনতা তা সংঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সমসাময়িক পরিস্থিতি, ডাকসু নির্বাচন ও প্যানেল ঘোষণা বিষয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ক্যাম্পাসের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে অন্যতম প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। তা ছাড়া ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, ডাকসু সচল থাকলে ক্যাম্পাসে পেশিশক্তির আস্ফালন এবং অপরাধপ্রবণতা বন্ধ হবে, তৈরি হবে সহাবস্থানমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ। ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশপ্রেমী জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পরে বিষয়টি জাতির কাছে এখন আরও বেশি স্পষ্ট।

আবু বকর বলেন, ‘ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি টিএসসিতে একটি প্রদর্শনীতে কিছু ছবিকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। একাত্তর এ জাতির চেতনার কেন্দ্রবিন্দু, যেটা নিয়ে প্রশ্ন রেখে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার স্বপ্ন যেকোনো দলের জন্যই আত্মঘাতী হবে।’

ক্যাম্পাস রাজনীতি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ মাধ্যম হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু ডাকসুকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে পুঁজিবাদী আস্ফালন এবং যে টাকার ছড়াছড়ি চলছে, তা আমরা সন্দেহের চোখে দেখছি। কেউ কেউ তাদের নিজস্ব প্রস্তুতির ঘাটতি কিংবা জনসমর্থনের অভাবে এবং পরাজিত হওয়ার ভয়ে ডাকসু আয়োজনকে স্বাগত জানাচ্ছে না।’

পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা:

সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য ডাকসু পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেন শেখ মাহবুবুর রহমান। তিনি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল।

ভিপি পদে ঘোষণা করা হয় ইয়াছিন আরাফাতের নাম, যিনি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি। জিএস পদে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আহসান মারজান এবং এজিএস পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়।

এ ছাড়া অন্যন্য পদে প্রার্থী হবেন আবু বকর (শিক্ষা ও গবেষণা), মোহাম্মদ আলী (ইসলামিক স্টাডিজ), আ. রহমান মাহফুজ (ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ), ‎জুরাইয়া আক্তার (মলিকুলার সায়েন্স), ইলিয়াস তালুকদার (আইবি), মুঈনুল ইসলাম (ইসলামের ইতিহাস), ‎ইয়াসিন আরাফাত (সমাজবিজ্ঞান), ইমরান হোসাইন (ব্যাংকিং), ইসমাইল হোসাইন (ইসলামের ইতিহাস), সাব্বির আহমেদ (ইতিহাস), মানসুরুল হক শান্ত (ফিন্যান্স), মোসা. হাবিবা (ভাষাবিজ্ঞান), শাহরিয়ার জাবির (আইন), ওমর ফারুক (ইসলামিক স্টাডিজ), আফজাল হোসাইন সিয়াম (আরবি), নূরুল জান্নাত মান্না (আরবি), ইকরামুল কবির (ইসলামিক স্টাডিজ), মোহাম্মদ রিয়াদ (ওএসএল), আরিয়ান মাহমুদ রাসেল (ইসলামিক স্টাডিজ), রেজাউল করিম (আরবি), এরফান মোহাম্মদ (জার্নালিজম), জাকিয়া মুন (প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন), আবদুর রহিম (ইসমামিক স্টাডিজ), আবদুর রহমান মাহফুজ (ইসলামিক স্টাডিজ)।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতেও আলোচনার সুযোগ আছে মনে করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলে আমরা নারী শিক্ষার্থীদের হলে বৈদ্যুতিক পাখা অথবা শীতাতপনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, রেজিস্ট্রার অফিসকে ডিজিটালাইজড করা; নিরাপদ, বৈষম্যহীন ও সহনশীল শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত, শতভাগ আবাসনসুবিধা ও আবাসনের মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, গবেষণাভিত্তিক স্কলারশিপ ও ল্যাব–সুবিধা বৃদ্ধি, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও স্মার্ট ক্লাসরুমের ব্যবস্থা, অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা সিস্টেম এবং তৎপরবর্তী কার্যক্রমগুলোকে আরও উন্নত ও সহজীকরণ, বিভাগ ও হল পর্যায়ে দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে ছাত্র-অভিযোগ সেল গঠন, মেডিকেল ব্যবস্থাকে উন্নত করার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তায় হেল্পলাইন ও কাউন্সেলিং সেবা চালু, ক্যারিয়ার গাইডেন্স, ইন্টার্নশিপ ও স্কিল ট্রেনিং নিশ্চিত, প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাথাপিছু ব্যয়কে যথাযথ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজে লাগানো এবং সব ছাত্রসংগঠনের রাজনৈতিক সহাবস্থান ও গঠনমূলক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা করাসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি গণমুখী ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে প্রশাসনকে বাধ্য করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ