বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে: এফএও
Published: 3rd, October 2025 GMT
বিশ্ববাজারে সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে চিনি ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম হ্রাস পেয়েছে। যদিও মাংসের মূল্য কিছুটা বেড়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আজ শুক্রবার জানিয়েছে, গত মাসে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যসূচক কিঞ্চিৎ কমে ১২৮ দশমিক ৮ পয়েন্ট হয়েছে, যা আগের মাস আগস্টে (সংশোধিত) ছিল ১২৯ দশমিক ৭ পয়েন্ট।
এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমে ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। যদিও গত জুলাইয়ে পণ্যটির দাম দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। পরের মাসেও সেই দাম স্থিতিশীল ছিল। তবে সেপ্টেম্বরে চিনির মূল্যসূচক ৪ দশমিক ১ শতাংশ কমে।
চিনির দাম কমার মূল কারণ হচ্ছে, সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি। এবার ব্রাজিলে উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হয়েছে। ভারত ও থাইল্যান্ডেও ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে দুগ্ধজাত পণ্যের মূল্যসূচক গত মাসে ২ দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। মূলত মাখনের দাম কমার কারণে এটির মূল্য হ্রাস হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এফএওর শস্যসূচক আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে বৈশ্বিক চাহিদা কমার ফলে গমের দাম তিন মাস ধরে কমছে। আর্জেন্টিনা রপ্তানি কর সাময়িকভাবে স্থগিত করায় ভুট্টার দামও কমেছে। আবার ফিলিপাইন ও আফ্রিকার ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ কমায় চালের মূল্যসূচকও গত মাসে হ্রাস পেয়েছে।
গরু ও ভেড়ার মাংসের দাম বাড়ার কারণে গত মাসে মাংসের মূল্যসূচক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় সরবরাহ সীমিত ও তার বিপরীতে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে গরুর মাংসের দাম নতুন করে শীর্ষে পৌঁছেছে।
এফএওর এক পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক শস্য উৎপাদন ২ দশমিক ৯৭১ বিলিয়ন মেট্রিক টন হতে পারে, যা আগস্টে দেওয়া ২ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন টনের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে বৈশ্বিক শস্য উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি হতে পারে। তাহলে তা হবে ২০১৩ সালের পর সর্বোচ্চ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে আইনি ব্যবস্থা নিন
কৃষি বিভাগ যখন উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে চাষিদের ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার ব্যবহারে উৎসাহিত করছে, ঠিক তখনই মাঠপর্যায়ের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকেরা সরকারি নির্ধারিত দামে এই সার পাচ্ছেন না। অভিযোগ উঠেছে, পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও পরিবেশকেরা (ডিলার) কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রান্তিক চাষিদের বাধ্য করছেন খোলাবাজার থেকে তিন গুণ বেশি দামে সার কিনতে। এই পরিস্থিতি কেবল কৃষকের উৎপাদন খরচই বাড়াচ্ছে না, বরং সরকারের কৃষি সহায়তা কর্মসূচির উদ্দেশ্যকেই ম্লান করে দিচ্ছে।
রাজশাহী জেলার জন্য সেপ্টেম্বর মাসে ২ হাজার ৫২১ মেট্রিক টন ডিএপি সার বরাদ্দ করা হয়েছিল। কৃষি বিভাগ বারবার সারের পর্যাপ্ত সরবরাহের দাবি জানালেও কৃষকেরা ডিলারদের গুদামে গিয়ে ‘সরবরাহ শেষ’ এই অজুহাত শুনছেন। অন্যদিকে স্থানীয় খুচরা দোকানগুলোতে ‘বাংলা ডিএপি’ প্রতি বস্তা ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্য মাত্র ১ হাজার ৫০ টাকা। অর্থাৎ, চাষিরা প্রতি বস্তায় প্রায় ১ হাজার ২৫০ টাকা বেশি দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই সংকট স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে তদারকির অভাবে সরকারি ভর্তুকির সার ডিলারদের গুদাম থেকে সরাসরি খুচরা বিক্রেতা ও কালোবাজারিদের হাতে চলে যাচ্ছে। তানোরের এক ডিলারের গুদামে সার থাকা সত্ত্বেও একজন কৃষককে ‘ইউরিয়া ছাড়া আর কোনো সার নেই’ বলে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা কেবল অনিয়ম নয়, এটি প্রান্তিক চাষিদের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, কৃষকেরা কেন সরাসরি কৃষি অফিসে অভিযোগ না করে সাংবাদিকের কাছে যাচ্ছেন। তাঁর এমন প্রতিক্রিয়া দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার শামিল। মাঠপর্যায়ের চিত্র যখন স্পষ্ট বলছে যে ডিলাররা সরাসরি নিয়ম লঙ্ঘন করছেন, তখন কৃষি অফিসের উচিত ছিল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদারকি জোরদার করা। কিন্তু তিনি যেভাবে কৃষকদের প্রতি ক্ষোভ
প্রকাশ করলেন, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সার নিয়ে এমন অনিয়ম নতুন নয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভালোভাবেই এ বিষয়ে অবগত। এমনকি এমন অভিযোগও আছে, সার নিয়ে অনিয়মের সঙ্গে একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত।
সার নিয়ে অনিয়মের অভিযোগের ক্ষেত্রে ডিলারদের লাইসেন্স অবিলম্বে বাতিল করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিলাররা কোন কৃষককে কী পরিমাণ সার দিচ্ছেন, তার তালিকা এবং কৃষকের মোবাইল নম্বরসহ একটি স্বচ্ছ ডেটাবেজ তৈরি করে নিয়মিত তদারক করতে হবে।
কৃষি কর্মকর্তাদের অবশ্যই অফিসে বসে না থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের গুদামে অভিযান চালিয়ে মজুত ও বিক্রির মূল্য যাচাই করতে হবে। এখন আমরা দেখতে চাই রাজশাহী অঞ্চলে সারের অনিয়ম ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।