বাংলাদেশ ও তুরস্কের পররাষ্ট্রসচিবেরা আলোচনায় বসছেন। রাজনৈতিক পরিসরে সম্পর্ক জোরদার, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে অংশীদারত্বে রূপ নেওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন।

পাঁচ বছরের বেশি সময় বিরতির পর ৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের চতুর্থ বৈঠকটি বসছে।

ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। তুরস্কের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বেরিস একিন্চি। দুই দিনের সফরে ৬ অক্টোবর তাঁর ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানান, ওই বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।

গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়া তৃতীয় দেশ হতে যাচ্ছে তুরস্ক। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় ভারতের সঙ্গে এবং চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দিনের সফরের প্রথম দিনে তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী একিন্চি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন।

গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়া তৃতীয় দেশ হতে যাচ্ছে তুরস্ক। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় ভারতের সঙ্গে এবং চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

গুরুত্বপূর্ণ সফর বিনিময়

গত বছরের আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের অনেকগুলো সফর বিনিময় হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমের বোলাট। সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়।

বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্প স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। উত্তরে ওমের বোলাট বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক টেক্সটাইল শিল্প ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৈচিত্র্যময় করতে পারে। প্রতিরক্ষা শিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধশিল্প ও কৃষিযন্ত্র খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।

এরপর ফেব্রুয়ারিতে আঙ্কারা সফর করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম। তিন দিনের ওই সফরের সময় তিনি তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বেরিস একিন্চির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া তিনি অর্থ, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিনিয়োগ সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এপ্রিলে আনতোলিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরামে অংশ নেওয়ার ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দুই দেশের অংশীদারত্বকে ভবিষ্যতে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার বিষয়ে তাঁদের আলোচনা হয়।

গত জুলাইতে ঢাকায় আসেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার প্রধান হালুক গরগুন। এক দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানায়, বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তুরস্ক।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের কৃষি খাতের উত্তরণে তুরস্কের আধুনিক প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। জ্বালানির ক্ষেত্রে তুরস্ককে নতুন অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর ঢাকা ও আঙ্কারার মধ্যে চারটি উচ্চপর্যায়ের সফর হয়েছে। এরপর আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের অংশীদারত্বের নানা বিষয় আলোচনার জন্য গুরুত্ব পাচ্ছে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সহায়তার আশ্বাস তুরস্কের০৮ জুলাই ২০২৫

আলোচনায় কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে

আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে গত মাসের মাঝামাঝি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছিল। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত দুই দেশের সামগ্রিক সম্পর্কের সব বিষয়ে আলোচনা হয় পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা যেহেতু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ বেড়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া জ্বালানি, কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো বিষয়গুলোও আলোচনায় আসবে।

নজরুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় এক শ কোটি ডলার। অধিকাংশ বাংলাদেশ আমদানি করে। ফলে তুরস্কে যাতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বাড়ে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের প্রসঙ্গটিও আলোচনায় আসবে। কারণ, তুরস্ক থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ আছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের কৃষি খাতের উত্তরণে তুরস্কের আধুনিক প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। জ্বালানির ক্ষেত্রে তুরস্ককে নতুন অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তাঁরা জানান, তুরস্ক জ্বালানি আমদানি করলেও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আর নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রযুক্তির জ্বালানির বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি জ্বালানি শোধনাগারের প্রযুক্তিতেও দেশটি এগিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে জ্বালানি খাতে এক দেশ অন্য দেশকে কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকা সফরে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় জ্বালানি খাতে সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার কথা রয়েছে তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা জানান, আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও ঢাকা-আঙ্কারা সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে রাজনৈতিক পরিসরের পাশাপাশি নানা খাতে সহযোগিতা জোরদার করা নিয়েও আলোচনা হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়াসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিবর্তনশীল নানা ইস্যুতে দুই দেশের অভিন্ন সহযোগিতার বিষয়গুলো উঠে আসবে পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে।

আরও পড়ুন‘আমার হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই যে সুইচ দিলেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে’: শেখ বশিরউদ্দীন০৯ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র নজর ল ইসল ম কর মকর ত র ত রস ক র প র উপদ ষ ট গত বছর র র জন ত ক সহয গ ত অন ষ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশ-তুরস্কের পররাষ্ট্রসচিবেরা, গুরুত্ব পাবে কোন বিষয়  

বাংলাদেশ ও তুরস্কের পররাষ্ট্রসচিবেরা আলোচনায় বসছেন। রাজনৈতিক পরিসরে সম্পর্ক জোরদার, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে অংশীদারত্বে রূপ নেওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন।

পাঁচ বছরের বেশি সময় বিরতির পর ৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের চতুর্থ বৈঠকটি বসছে।

ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। তুরস্কের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বেরিস একিন্চি। দুই দিনের সফরে ৬ অক্টোবর তাঁর ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানান, ওই বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।

গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়া তৃতীয় দেশ হতে যাচ্ছে তুরস্ক। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় ভারতের সঙ্গে এবং চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দিনের সফরের প্রথম দিনে তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী একিন্চি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন।

গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়া তৃতীয় দেশ হতে যাচ্ছে তুরস্ক। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় ভারতের সঙ্গে এবং চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

গুরুত্বপূর্ণ সফর বিনিময়

গত বছরের আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের অনেকগুলো সফর বিনিময় হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমের বোলাট। সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়।

বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্প স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। উত্তরে ওমের বোলাট বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক টেক্সটাইল শিল্প ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৈচিত্র্যময় করতে পারে। প্রতিরক্ষা শিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধশিল্প ও কৃষিযন্ত্র খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।

এরপর ফেব্রুয়ারিতে আঙ্কারা সফর করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম। তিন দিনের ওই সফরের সময় তিনি তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বেরিস একিন্চির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া তিনি অর্থ, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিনিয়োগ সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এপ্রিলে আনতোলিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরামে অংশ নেওয়ার ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দুই দেশের অংশীদারত্বকে ভবিষ্যতে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার বিষয়ে তাঁদের আলোচনা হয়।

গত জুলাইতে ঢাকায় আসেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার প্রধান হালুক গরগুন। এক দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানায়, বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তুরস্ক।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের কৃষি খাতের উত্তরণে তুরস্কের আধুনিক প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। জ্বালানির ক্ষেত্রে তুরস্ককে নতুন অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর ঢাকা ও আঙ্কারার মধ্যে চারটি উচ্চপর্যায়ের সফর হয়েছে। এরপর আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের অংশীদারত্বের নানা বিষয় আলোচনার জন্য গুরুত্ব পাচ্ছে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সহায়তার আশ্বাস তুরস্কের০৮ জুলাই ২০২৫

আলোচনায় কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে

আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে গত মাসের মাঝামাঝি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছিল। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত দুই দেশের সামগ্রিক সম্পর্কের সব বিষয়ে আলোচনা হয় পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা যেহেতু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ বেড়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া জ্বালানি, কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো বিষয়গুলোও আলোচনায় আসবে।

নজরুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় এক শ কোটি ডলার। অধিকাংশ বাংলাদেশ আমদানি করে। ফলে তুরস্কে যাতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বাড়ে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের প্রসঙ্গটিও আলোচনায় আসবে। কারণ, তুরস্ক থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ আছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের কৃষি খাতের উত্তরণে তুরস্কের আধুনিক প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। জ্বালানির ক্ষেত্রে তুরস্ককে নতুন অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তাঁরা জানান, তুরস্ক জ্বালানি আমদানি করলেও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আর নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রযুক্তির জ্বালানির বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি জ্বালানি শোধনাগারের প্রযুক্তিতেও দেশটি এগিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে জ্বালানি খাতে এক দেশ অন্য দেশকে কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকা সফরে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় জ্বালানি খাতে সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার কথা রয়েছে তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা জানান, আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও ঢাকা-আঙ্কারা সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে রাজনৈতিক পরিসরের পাশাপাশি নানা খাতে সহযোগিতা জোরদার করা নিয়েও আলোচনা হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়াসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিবর্তনশীল নানা ইস্যুতে দুই দেশের অভিন্ন সহযোগিতার বিষয়গুলো উঠে আসবে পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে।

আরও পড়ুন‘আমার হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই যে সুইচ দিলেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে’: শেখ বশিরউদ্দীন০৯ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ