মীম আর নুনকে আজও ভুলতে পারিনি, জানি না, ওরা কত বড় হয়েছে
Published: 4th, October 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের কাছেই ফতুল্লার একটি বাসায় ভাড়া থাকতাম। পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন এক ভদ্রমহিলা, তাঁর দুই মেয়ে—মীম আর নুন। মীমের বয়স তখন সাত বছর, নুনের পাঁচ। তাদের বাবা একটি সরকারি দপ্তরে কাজ করেন।
আমরা পাশাপাশি থাকতাম। ভদ্রমহিলাকে আমি ভাবি বলে ডাকতাম। ভাবি তাঁর জীবনের সব কথা আমার সঙ্গে ভাগ করে নিতেন। এমন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল যে আশপাশের অনেকে মনে করত আমরা দুই বোন। একদিন আমাকে না দেখলে অস্থির হয়ে যেতেন। যাই খেতেন, আগে আমাকে না দিয়ে মুখে তুলতেন না। মীম আর নুনও সারাক্ষণ ডাকত, ‘তাজিয়া আন্টি, তাজিয়া আন্টি!’ মাঝেমধ্যে ওদের পড়ালেখাতেও সাহায্য করতাম।
সবচেয়ে কষ্টের বিষয় ছিল, ভাবির ব্লাড ক্যানসার। নয় মাস পরপর তাঁকে রক্ত দিতে হতো।
আরও পড়ুনরাতে কতবার ঘুম ভাঙা স্বাভাবিক, কখন চিন্তার কারণ৬ ঘণ্টা আগেদুই বছর পর আমি অন্য বাসায় চলে যাই, যদিও খুব দূরে নয়। হঠাৎ একদিন খবর এল, ভাবি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সেদিন অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। মৃত্যুশয্যায় বসে তিনি আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন আমাকে জানানো হয়নি। মীম-নুনও ছোট; ওদের পক্ষে বলা সম্ভব হয়নি। সেদিনই ছিল ভাবির জীবনের শেষ দিন। রাত তিনটার দিকে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
ভোর পাঁচটায় খবর পেয়ে আমি ছুটে যাই। ঘরে নিথর হয়ে পড়ে আছে ভাবির দেহ। মীম আর নুন পাগলের মতো কাঁদছে। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে নিজেই ভেঙে পড়ি। ১৫ বছর ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন তিনি।
এরপর আমি বরিশালে চলে আসি। ধীরে ধীরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন তো ঘরে ঘরে মোবাইল ফোন ছিল না। কিন্তু মীম আর নুনকে আজও ভুলতে পারিনি। কোনো রক্তের সম্পর্ক না, তার চেয়েও গভীর এক অপার ভালোবাসার বন্ধন।
জানি না, ওরা কত বড় হয়েছে! হয়তো আমাকে চিনবেও না, মনে রাখেনি বহু বছর আগের কথা। তবু আমার স্মৃতিতে ওরা অমলিন। মাঝেমধ্যে সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে ভেতরটা কেঁপে ওঠে।
মীম আর নুনের জন্য অফুরন্ত দোয়া ও ভালোবাসা।
আরও পড়ুনবিসিএস ভাইভার পরই আব্বাকে ফোন করে বললাম, ‘আজ থেকে আর রিকশা চালাতে হবে না’ ৮ ঘণ্টা আগেআপনিও লিখুনপ্রিয় পাঠক, আপনিও লিখুন ‘ছুটির দিনে’র নিয়মিত বিভাগ ‘জীবন যেমন’–এ। লিখে জানাতে পারেন জীবনের কোনো সুখ–স্মৃতি, রোমাঞ্চ–জাগানিয়া ঘটনা, উত্থান–পতন, পাওয়া না–পাওয়ার গল্প।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
প্র ছুটির দিনে, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন
২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা–১২১৫
ই-মেইল: [email protected]
ফেসবুক পেজ: fb.
খামের ওপর বা ই–মেইলের subject-এ লিখুন ‘জীবন যেমন’।
আরও পড়ুনদস্যুজীবনে আর ফিরবেন না আলম সরদার২ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ম আর ন ন
এছাড়াও পড়ুন:
শ্বশুরবাড়িতে যুবককে ‘গলা কেটে হত্যাচেষ্টা’, পাশের ঘরে খোঁড়া হয়েছিল গর্ত
ফরিদপুরের সদরপুরে শ্বশুরবাড়িতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার মুন্সি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির স্ত্রী লাবণী আক্তারকে (২৮) আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার পর তাঁর শাশুড়ি শহিদা বেগম (৪৯) ও দাদিশাশুড়ি জনকী বেগম (৬২) পলাতক।
ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম ফরহাদ ব্যাপারী ওরফে ঠান্ডু (৩৫)। তিনি সদরপুর উপজেলার ছলেনামা এলাকার ব্যাপারীডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা। ঢাকায় তাঁর একটি ওয়ার্কশপের ব্যবসা রয়েছে। ভাষানচর ইউনিয়নের মুন্সি গ্রামের প্রবাসী জাহাঙ্গীর মিয়ার মেয়ে লাবণী আক্তারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফরহাদ ব্যাপারীকে রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। তিনি ঘুমিয়ে পড়লে রাত দেড়টার দিকে স্ত্রী, শাশুড়ি ও দাদিশাশুড়ি মিলে কাস্তে দিয়ে গলা কাটার চেষ্টা করেন। হত্যাচেষ্টার আগে পাশের ঘরের বারান্দায় গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছিল। এ সময় ফরহাদের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। এর আগেই ওই তিন নারী পালিয়ে যান। এলাকাবাসী আহত ফরহাদকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং সদরপুর থানায় খবর দেন।
ফরহাদ ব্যাপারীর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জমি কেনার জন্য ফরহাদ তাঁর স্ত্রী ও শাশুড়িকে ১১ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। তাঁরা জমি না কিনে টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই ঘটনার জেরেই হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকদেব রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই হত্যাচেষ্টা পূর্বপরিকল্পিত। টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ফরহাদের স্ত্রী লাবণীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।