বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা
Published: 5th, October 2025 GMT
শিক্ষক মানে শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান নয়, বরং অনুপ্রেরণা, দিশা আর আলোর হাতছানি। তাদের স্নেহ, ত্যাগ আর পরিশ্রমেই গড়ে ওঠে প্রজন্মের স্বপ্ন। আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস, দিবসটি উপলক্ষে কলেজ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন শিক্ষকদের নিয়ে তাদের ভাবনা।
শিক্ষক অন্ধকারে আলোর প্রদীপ
শিশুরা জন্মায় নিষ্পাপ, অক্ষর অজানা। সেই শূন্য পাতায় প্রথম আঁচড় কাটেন যিনি, তিনিই শিক্ষক। অন্ধকার কক্ষের ভেতর প্রদীপের মতো তিনি আলোকিত করেন প্রতিটি মনের কোণ। শিক্ষক শুধু পাঠ দেন না, তিনি শেখান কীভাবে হোঁচট খেয়ে উঠে দাঁড়াতে হয়, কীভাবে নিজের স্বপ্নের জন্য লড়তে হয়।
আমরা অনেকেই জীবনে পথ হারাই। কিন্তু শিক্ষক যেন চিরন্তন পথ প্রদর্শক। তার কথাগুলো আমাদের মনের ভেতরে অন্ধকারে প্রজ্বলিত বাতির মতো জ্বলে থাকে। হয়তো আমরা দূরে চলে যাই, হয়তো আর কখনো দেখা হয় না, কিন্তু তার শেখানো নীতি, তার দেওয়া সাহস আজীবন রক্তে বয়ে চলে। কখনো তিনি বন্ধু, কখনো অভিভাবক, কখনো আবার অদৃশ্য শক্তি হয়ে ভরসা দেন।
শিক্ষক দিবস আমাদের শুধু স্মরণ করায় না, বরং মনে করিয়ে দেয়, আমরা তাদের কাছে চিরঋণী। শিক্ষকের ঋণ কখনো শোধ হয় না, হয়তো শুধু কৃতজ্ঞতার নতশিরেই তার প্রতি সম্মান জানানো সম্ভব। শিক্ষককে সম্মান করা মানেই নিজের অস্তিত্বকে সম্মান করা, আজকের দিনে আমরা সকল শিক্ষককে অন্তরের গভীর থেকে শ্রদ্ধা জানাই ও তাদের সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।
(লেখক: মো.
সুনিবিড় মূল্যবোধ সুনিশ্চিত জরুরি
শিক্ষক দিবস ছাড়াও শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি রোমন্থনে যখন শিক্ষকদের কথা মনে হয়, তখনই শ্রদ্ধায় অবনত হয় আমার মানসিক সত্তা, ভেসে উঠে শিক্ষকদের অবদান মানসপটে। পিতা-মাতা জন্ম দেন, লালন-পালন করেন, পারিবারিক শিক্ষায় ভূমিকা রাখেন। কিন্তু প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নানা জীবনমুখী শিক্ষায় অনন্য অবদান রাখেন একজন আর্দশবান শিক্ষক।
শিক্ষা ছাড়া জীবনের সৌন্দর্য মলিন, মূল্যহীন। যে জাতি ও সমাজ যত শিক্ষিত, সে জাতি ও সমাজ তত উন্নত ও সমৃদ্ধ, আর এই শিক্ষার নেপথ্যের নায়ক হচ্ছেন শিক্ষক সমাজ।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক যত সুনিবিড়, ততই শিক্ষার প্রসার ও বিকাশ ঘটে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, সভ্যতার উন্নয়নে এই সম্পর্ক যতটুকু প্রত্যাশিত, এর বৈপরিত্য লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষিত জাতি গঠনের মূল কারিগর শিক্ষকের মর্যাদা কতটুকু সমুন্নত রয়েছে, সেই বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।
অসচেতন শিক্ষার্থীদের অবিবেচক উন্মাদনায় শিক্ষক অপমানিত হওয়ার ঘটনা এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের স্মারক হয়ে দাঁড়ায়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অন্যদিকে, ‘শিক্ষক’ শব্দটির ভাবমূর্তি ও মর্যাদা রক্ষায় যখন এক শ্রেণির শিক্ষকই দায়ী হন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে, যা অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। শিক্ষক দিবসে প্রত্যাশা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যবোধ ও সচেতনতা অনুধাবন করে মর্যাদাশীল সম্পর্ক স্থাপন।
(লেখক: নুসরাত জাহান জেরিন, শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইন কলেজ)
শিক্ষক হলেন জ্ঞানের বাতিঘর
শিক্ষক হলেন মানবজীবনের সত্যিকারের পথ প্রদর্শক। যিনি শুধু বই পড়ার জ্ঞানই দেন না, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। প্রদীপ যেমন নিজের তেল খরচ করে চারপাশ আলোকিত করে, তেমনি শিক্ষক তার মেধা, শ্রম, অধ্যবসায় এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে শিক্ষার্থীর মনন আলোকিত করেন। শিক্ষক শুধু জ্ঞানই বিতরণ করেন না, তিনি চরিত্র গঠন, নৈতিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধও শিক্ষার্থীর জীবনে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার শেখানো শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কেবল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে সঠিক পথ চিনতে সহায়তা করে।
একজন সৎ, নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক শিক্ষার্থীর জীবনকে নতুন দিশা দেখান এবং সমাজের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেন। তার নির্দেশনা, শাসন ও স্নেহের মিশ্রণে শিক্ষার্থী শুধু জ্ঞানী নয়, দায়িত্বশীল, মানবিক এবং নৈতিক দিক থেকেও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। শিক্ষক সমাজকে আলোকিত করেন, জাতিকে এগিয়ে নেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করেন।
তাই বলা হয়, শিক্ষক ছাড়া কোনো সমাজ সত্যিকারভাবে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে না। এজন্য শিক্ষক হলেন এক জীবন্ত বাতিঘর, যার আলোয় প্রজন্মের মনন আলোকিত হয় এবং জাতি সমৃদ্ধির পথে এগোয়।
(লেখক: মোহাম্মদ নুর হোসেন নয়ন, শিক্ষার্থী, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, রংপুর)
শিক্ষকরা হলেন শিক্ষার মেরুদণ্ড
শিক্ষা মানবজাতির জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। তাই শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়। শিক্ষা মানুষকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মানুষরূপে গড়ে তোলার এ সাহায্যের একমাত্র চাবিকাঠি হলো শিক্ষক। এ কারণে শিক্ষকদের শিক্ষার মেরুদণ্ড বলা প্রয়োজন।
শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতির বিবেক ও মূল্যবোধ সংরক্ষণের ধারক ও বাহক। শিক্ষার যথাযথ বিকাশ ও শিক্ষাকে জাতির মাঝে রূপান্তরের কাজটি কিন্তু শিক্ষকরাই করে থাকেন। জাতির ভবিষ্যৎ তথা প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব শিক্ষকদের হাতেই। শিক্ষার সংস্কার, সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে সরকার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেবে বলে শিক্ষক সমাজ প্রত্যাশা করে। এ প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে সরকার এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করে শিক্ষক সমাজকে যথাযথ সম্মান দেখাবে—এ আশা করি।
শিক্ষকদের অবহেলা না করে তাদের প্রত্যাশা বাস্তবতায় রূপ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা দরকার। শিক্ষা ছাড়া যেমন সাফল্য অসম্পূর্ণ, তেমনি শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার অগ্রগতি অসম্ভব। শিক্ষক ছাড়া শিক্ষা মেরুদণ্ডহীন।
(লেখক: উম্মে সালমা, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ)
শিক্ষক হবেন বটবৃক্ষের মতো
শিক্ষককে হতে হবে সেই বাবা নামক বটবৃক্ষের মতো, যেখানে শীতল ছায়ায় শিক্ষার্থীরা কোনো প্রকার বাধা-বিপত্তি ছাড়াই পরম মমতার পরশে বেড়ে উঠবে। শিক্ষক সমাজের বাতিঘর, যিনি তার আলোয় অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের পথে মানুষকে এগিয়ে নেন।
শিক্ষককে বলা হয় জীবনের দিকনির্দেশক। তিনি কেবল জ্ঞান বিতরণকারী নন, বরং চরিত্র গঠন, নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ সঞ্চারেও অনন্য ভূমিকা পালন করেন। পিতা-মাতা সন্তান জন্ম দিলেও তাকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন মূলত একজন শিক্ষক। একজন শিক্ষার্থীর ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে, তার চিন্তা ভাবনা ও মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন একজন শিক্ষক।
তবে একজন শিক্ষকের ব্যক্তিত্ব, আদর্শ ও মূল্যবোধ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে একজন শিক্ষার্থীর উপর প্রভাব বিস্তার করে। আমরা কখনোই চাই না, একজন শিক্ষক আর তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন ভয়ঙ্কর সম্পর্ক হোক, যা একজন শিক্ষকের তার ব্যক্তিত্ব, তার আদর্শ এবং তার মূল্যবোধকে নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।
আমি প্রত্যাশা করি, এমন একজন শিক্ষক যার কাছে আমরা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ এবং পরিবারের পর সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত।
(লেখক: শামীম আহম্মেদ, শিক্ষার্থী, নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী)
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর একজন শ ক ষ শ ক ষকদ র প রজন ম শ ক ষকক র জন য ন কর ন জ বন র ন নয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল প্রচারপত্র তৈরি করলেন এক প্রার্থী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল প্রচারপত্র (লিফলেট) তৈরি করেছেন হল সংসদের এক প্রার্থী। ওই প্রার্থীর নাম শেখ সাদিয়া সিদ্দিকা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি (সহসভাপতি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই পদে তিনি ছাড়াও আরও দুই প্রার্থী রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শামসুন্নাহার হলে চারজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রী রয়েছেন। তাঁদের জন্যই ব্রেইল পদ্ধতিতে নিজের নাম ও ব্যালট নম্বরের লিফলেট করেছেন সাদিয়া। এর মধ্যে একজনের হাতে প্রচারপত্র তুলে দিয়েছেন। বাকি তিন ছাত্রী পূজার ছুটিতে বাড়িতে থাকায় তাঁদের হাতে এখনো প্রচারপত্র পৌঁছে দিতে পারেননি।
জানতে চাইলে শেখ সাদিয়া সিদ্দিকা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চট্টগ্রামে ব্রেইল প্রচারপত্র ছাপানোর মতো প্রেস পাননি। তাই তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে নিজ উদ্যোগে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল প্রচারপত্র তৈরি করেন। সাদিয়া বলেন, ‘এটি করার মাধ্যমে আমি প্রশাসনকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছি। প্রশাসন যেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।’
উল্লেখ্য, ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে। এ নির্বাচনে প্রার্থী রয়েছেন ৯০৭ জন। এর মধ্যে চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ৪৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা কীভাবে ভোট দেবেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে বর্তমানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৮৬ জন। তবে এ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যালট পেপার ছাপানো হবে কি না, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।
কমিশন জানায়, ভোট দেওয়ার সময় একজন প্রতিনিধি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতে পারবেন। তাঁরা ওই শিক্ষার্থীকে ব্যালটে থাকা নাম ও নম্বর পড়ে শোনাবেন। পরে শিক্ষার্থীর অনুমতিক্রমে ভোট দেবেন। তবে কমিশনের এ প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন অনেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। তাঁরা বলছেন, ওই প্রতিনিধি নিজের মতাদর্শ অনুযায়ী ভোট দিয়ে দিতে পারেন।
দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল প্রচারপত্র বানালেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের ভিপি প্রার্থী