রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র দীপ্ত বড়ুয়া। তাঁর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে। দ্বিতীয় বর্ষ পার হতে চললেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে আসন পাননি তিনি। তাই বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে রাঙামাটি শহরের একটি মেসে থাকেন। এ জন্য তাঁকে মাসে দিতে হয় তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া খাওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতেও বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় দীপ্ত বড়ুয়াকে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম ও একমাত্র এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনসুবিধা পান না দীপ্ত বড়ুয়ার মতো ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৫টি বিভাগে ১ হাজার ৯২ জন শিক্ষার্থী থাকলেও হলের সুবিধা রয়েছে ১৮০ জনের। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের বেশি শিক্ষার্থী আবাসনসুবিধা থেকে বঞ্চিত। আবার যে কয়জন শিক্ষার্থীর আবাসনসুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে, তা-ও ভাড়া করা ভবনে। কেননা শ্রেণি কার্যক্রম চালুর ১০ বছর পার হতে চললেও এখনো নিজস্ব হল নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের।

পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনসংকটের পাশাপাশি রয়েছে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবের সংকট। প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম। আবার যেসব শিক্ষক আছেন, তাঁদের বসার জন্য নেই প্রয়োজনীয় কক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন হয়। তবে ওই সময় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ব্যবস্থাপনা এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল (সিএসই) বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ক্লাস শুরু হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে।

প্রথমে রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি এলাকায় অবস্থিত শাহ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের এক কোনায় অবস্থিত বিদ্যালয়টির একটি একতলা পাকা ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা আসাম বস্তি সংযোগ সড়কের ঝগড়া বিল এলাকার স্থায়ী ক্যাম্পাসে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনসংকটের পাশাপাশি রয়েছে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবের সংকট। প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম। আবার যেসব শিক্ষক আছেন, তাঁদের বসার জন্য নেই প্রয়োজনীয় কক্ষ।

এত সব সংকটের মধ্যে চলতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে আরও চারটি বিভাগ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অবকাঠামোগত সংকটে ভুগতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে বিভাগ চালুর বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যে সমালোচনা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আবাসিক হল নির্মাণের জন্য এক যুগ আগে একটি প্রকল্প অনুমোদন হলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ১৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবদুল গফুর প্রথম আলোকে বলেন, নানা জটিলতায় কাজ শেষ হয়নি। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। আগামী বছরের জুনে কাজ শেষ হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর গ্রামের বাড়ি অনেক দূর। রাঙামাটি শহরেও তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। এখন শহরের একটি মেসে থাকেন। হলে আসন পেলে বাড়তি টাকা যেমন খরচ হতো না, তেমনি পড়াশোনাও করতে পারতেন ভালোভাবে। শান্তিজন ত্রিপুরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্রভাড়া ভবনে আবাসিক হল

বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৬৫৬ ও ছাত্রী ৪৩৬ জন। ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে ভাড়া করা ভবনে হলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে আবাসনসুবিধা রয়েছে ৬০ ছাত্রীর। আর ছাত্রদের মধ্যে হলে থাকতে পারেন ১২০ জন। তাঁদের হল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে শাহ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে।

অস্থায়ী হলে আসন না পাওয়া শিক্ষার্থীরা রাঙামাটি শহর এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় মেস ও বাসায় থাকেন। তাঁদের তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়। শিক্ষার্থীরা জানান, আবাসিক হলের বাইরে থাকায় মাঝেমধ্যে দুশ্চিন্তা হয়। কেননা এখানকার পরিস্থিতি অনেক সময় নানা কারণে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। হলে থাকলে এত কিছু ভাবতে হতো না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র শান্তিজন ত্রিপুরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর গ্রামের বাড়ি অনেক দূর। রাঙামাটি শহরেও তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। এখন শহরের একটি মেসে থাকেন। হলে আসন পেলে বাড়তি টাকা যেমন খরচ হতো না, তেমনি পড়াশোনাও করতে পারতেন ভালোভাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করে বলেন, হলে আসন না পাওয়ায় তিনি রাঙামাটি শহরে বাসা ভাড়া করে থাকেন। ওখান থেকে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করেন। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় তাঁদের ক্যাম্পাসে নানা ধরনের সংকট রয়েছে। এসব মেনে তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষা দিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলের প্রাধ্যক্ষ খোকনেশ্বর ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে আসন দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসরুমের চরম সংকট রয়েছে। প্রয়োজনীয় রুম না থাকায় এক ব্যাচের ক্লাস চললে অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হয়। ল্যাবনির্ভর বিভাগগুলোতেও ল্যাবের সুবিধা কম। ক্লাসরুম, ল্যাবের সংকট দূর করা উচিত।শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকট

অস্থায়ী ক্যাম্পাসে মাত্র দুটি শ্রেণিকক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। নিজেদের জায়গায় যাওয়ার পরও শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি বিভাগ থাকলেও কোনোটিরই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। বর্তমানে এসব বিভাগে স্নাতকে পাঁচ থেকে ছয়টি করে ব্যাচ এবং স্নাতকোত্তরেও দুটি করে ব্যাচ আছে। সেশনজটের কারণে চারটি ব্যাচের পরিবর্তে বাড়তি ব্যাচগুলো রয়েছে। ছয় মাস থেকে এক বছরের সেশনজট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি বিভাগে দুটি-তিনটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। এতে এক ব্যাচের ক্লাস চললে অনেক সময় অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হয়। প্রয়োজনীয় কক্ষের অভাবে শ্রেণি কার্যক্রমও ব্যাহত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসরুমের চরম সংকট রয়েছে। প্রয়োজনীয় রুম না থাকায় এক ব্যাচের ক্লাস চললে অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হয়। ল্যাবনির্ভর বিভাগগুলোতেও ল্যাবের সুবিধা কম। ক্লাসরুম, ল্যাবের সংকট দূর করা উচিত।

ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের বিভাগীয় প্রধান নিখিল চাকমা এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের বিভাগীয় প্রধান মোসা.

হাবিবা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বিভাগে মাত্র দুটি করে শ্রেণিকক্ষ আছে। অথচ দরকার ছয়টি। অনেক সময় কনফারেন্স রুমেও ক্লাস নিতে হয়। আবার তাঁদের জন্যও আলাদা কোনো কক্ষ নেই। তারপরও কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন।

আবাসন ও শ্রেণিকক্ষের সংকটের পাশাপাশি শিক্ষকসংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান অন্তত চারজন শিক্ষক।

মাস ছয়েক আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি বিভাগে শিক্ষক ছিলেন মাত্র ১৯ জন। সম্প্রতি ২১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবার ৫০ শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে আছেন ৮ জন। নিয়োগের পরেও সংকট দূর হচ্ছে না।

২০২০ সালে চালু হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্সেস টেকনোলজি বিভাগে স্থায়ী কোনো শিক্ষক ছিল না। খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। তবে সম্প্রতি ৮ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের বিভাগীয় প্রধান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, ছয়টি ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী আছেন। শিক্ষক আছেন ছয়জন। শ্রেণি কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে অন্তত ১০ জন শিক্ষকের প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের বিভাগীয় প্রধান মোসা. হাবিবা বলেন, আগে দুজন শিক্ষক ছিলেন। এখন চারজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের চাহিদা পূরণ হয়েছে পাঁচ বছর পর এসে। এখন আরও চাহিদা বেড়েছে। বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১২ থেকে ১৩ শিক্ষক প্রয়োজন। এতে শিক্ষকদের ওপর চাপ কমবে। ভালোভাবে ক্লাস নিতে পারবেন তাঁরা।

শিক্ষকসংকটের পাশাপাশি ল্যাবের সুবিধাও অপ্রতুল বলে জানান শিক্ষকেরা। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অনেক প্রতিবন্ধকতার পর এই বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছে। তাই পাহাড়ের এই বিশ্ববিদ্যালয় যাতে ভালোভাবে চলে, সেটি সরকারের নিশ্চিত করা উচিত ছিল। কিন্তু সার্বিক কার্যক্রমে মনে হয়েছে, প্রস্তুতি ছাড়াই এই বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে।রাঙামাটির বাসিন্দা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও শিক্ষাবিদ নিরুপা দেওয়ানসংকটের মধ্যে নতুন বিভাগ খোলার উদ্যোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যখন নানা ধরনের সংকটে ভুগছেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন করে আরও চারটি বিভাগ খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে বায়োমেডিকেল ইনফরমেটিকস, ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ডেটা সায়েন্স এবং জিওলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। গত ৮ জুলাই এসব বিভাগের অনুমোদন দিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ চালুর ক্ষেত্রে অনুমোদিত জনবলকাঠামো এবং অবকাঠামোগত সুবিধার বিষয়ে ইউজিসির নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলোর সংকট আছে।

সংকটের মধ্যে নতুন বিভাগ খোলার উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, পর্যাপ্ত আবাসনসুবিধা নেই। রয়েছে শিক্ষকের সংকটও। অপ্রতুল শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব। এতে বিদ্যমান বিভাগগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন বিভাগ চালু হলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ ও আবাসনসুবিধা নিশ্চিত করা হবে কীভাবে? তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ আরও বাড়বে।

রাঙামাটির বাসিন্দা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও শিক্ষাবিদ নিরুপা দেওয়ান বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতার পর এই বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছে। তাই পাহাড়ের এই বিশ্ববিদ্যালয় যাতে ভালোভাবে চলে, সেটি সরকারের নিশ্চিত করা উচিত ছিল। কিন্তু সার্বিক কার্যক্রমে মনে হয়েছে, প্রস্তুতি ছাড়াই এই বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এখন আবাসন, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকসংকটের কারণে শিক্ষার মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ১০ বছরে এসব সংকট নিরসন না হওয়া দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ন শ চ ত কর নত ন ব ভ গ ল র উদ য গ জন শ ক ষ পর য প ত উদ য গ ন র জন য শহর র র একট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্ঘটনায় মা হারানো শিশুটির কান্না থামছে না

‘রাতে হঠাৎ ঘুমঘুম চোখে কান্না শুরু করে। একবার কান্না শুরু হলে তা আর থামতেই চায় না। তখন মাঝরাতে তাকে বাইরে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘুমায়, ততক্ষণ নিজের সঙ্গে রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে কোনোরকমে মাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করি। তবে কান্না থামাতে পারছি না।’

কথাগুলো বলছিলেন এক বছরের শিশু সাফওয়ান ইসলামের বাবা মো. ইমন ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মৌলভীপাড়া এলাকায় রেললাইনে বিকল হয়ে পড়া একটি সিএনজি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রেন। এ সময় শিশু সাফওয়ানের মা সানজিদা সুলতানা (২৫) ও নানি মাহমুদা বেগমের (৪৫) মৃত্যু হয়। এর পর থেকে সাফওয়ানকে সারাক্ষণ নিজের কাছে রাখছেন তার বাবা ইমন।

ইমনের বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ঘাটগড় এলাকায়। তিনি একটি রড তৈরির কারখানায় ট্রান্সপোর্ট সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত। যে জায়গাটিতে দুর্ঘটনা হয়েছিল তা ইমনের শ্বশুরবাড়ি থেকে মাত্র চার শ গজ দূরে। পুলিশ জানায়, রেলক্রসিংটি অবৈধ। ঘটনার দিন সেখানে কোনো গেটম্যানও ছিল না।

আমরা কত আনন্দ করে ছেলের জন্মদিন পালন করেছি।  অথচ এক মাস না যেতেই আমার ছেলেটি তার মাকে হারাল। গোছানো সংসারটা যেন তছনছ হয়ে গেল।শিশু মো. ইমন ইসলামের বাবা।

গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ইমনের বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। এক পাশে ছেলে সাফওয়ানকে কোলে নিয়ে বসে আছেন তিনি। অনেকেই ছেলের এ অবস্থা দেখে ইমনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন। সাফওয়ান চোখ মেলে আশপাশে তাকিয়ে দেখছে। আর কিছুক্ষণ পরপরই কান্না করছে।

ইমন প্রথম আলোকে বলেন, মা মারা যাওয়ার দিন বাড়িতে অনেক লোকের ভিড় থাকায় সাফওয়ান তেমন কান্না করেনি। তবে রাত হতেই মাকে না পেয়ে কান্না শুরু করে। এর পর থেকে প্রতি রাতেই কান্না করে। দিনের বেলায় বাড়িতে মানুষের ভিড় থাকায় তেমন কান্না করে না। তবে যখন বুকের দুধ খাওয়ার সময় হয়, তখন আর কান্না থামিয়ে রাখা যায় না।

ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মৌলভী পাড়া এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ