‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত রাখতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে’
Published: 5th, October 2025 GMT
পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত রাখার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) সম্প্রীতি জোটের সমন্বয়ক থোয়াই চিং মং চাক।
আজ রবিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে রক্ষা করা এবং ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে থোয়াই চিং মং চাক বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার চেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট সন্তু লারমা (জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা)। দেশে ৫০টা জাতি আছে, শুধু মুসলিম ছাড়া সবাই মিলে জোট হয় কেন? আমরা সবাই বাংলাদেশি। সবাই মিলে একজাতি। কেউ আদিবাসী নয়, আমরা সবাই বাংলাদেশি। একজন ভিনদেশি সন্তু লারমার সঙ্গে কীভাবে চুক্তি করেন শেখ হাসিনা?’’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘‘খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত রাখার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। কখনো বাঙালি ও অ-বাঙালির মধ্যে দাঙ্গা, কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, কখনো আবার আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণের ওপর বর্বরোচিত হামলা ঘটছে।’’
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করা রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন থোয়াই চিং মং চাক।
সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের সমন্বয়ক থোয়াই চিং মং চাক বলেন, ‘‘সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, ভারতের সহযোগিতায় চাকমা জাতি পরিচালিত ইউপিডিএফ ও জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তারা সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি, লোভ ও প্রলোভন দেখিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণে উৎসাহিত করছে। প্রতি বছর এ সব সংগঠন কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করতে ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, এমনকি সাধারণ কৃষক পর্যন্ত জিম্মি করছে। সেই অর্থ দিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র আনা হয়।’’
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আবার অনেক নেতা পালিয়ে ভারতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং সেখান থেকে ‘জুম্মল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার নীলনকশা আঁকছেন। প্রতিনিয়ত পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এ সব সংগঠন। ইউটিউব, ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। মূল লক্ষ্য হলো-বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা এবং সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা-সিএইচটি সম্প্রীতি জোট দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি, বাংলাদেশ আমাদের সবার। পাহাড়-সমতলের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।’’
সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি কিছু দাবি ও করণীয় তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা; বাঙালি ও অ-বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি রুখে দিয়ে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা; বিদেশি অর্থায়ন ও প্রভাবিত সংগঠনগুলোর কার্যক্রম দৃঢ়ভাবে দমন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় নজরদারি বৃদ্ধি; সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি শক্তিশালী করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন; স্থায়ী শান্তির জন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বাড়াতে হবে। সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি; পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি ও পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে হবে। সংস্কার কমিশনের ভূমিকা; আদিবাসী, উপজাতি, জুম্ম, সেটেলার বাঙালি ইত্যাদি বিভাজনমূলক শব্দ বাতিল করে জাতীয় পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ করা জরুরি। ভারতপন্থি ইউপিডিএফ ও জেএসএস পরিচালিত সব ধরনের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, গুম ও বিদেশি ষড়যন্ত্র অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠায় সরকার ও দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক পাইশিখই মারমা, সিএইচটি সদস্য অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমন্বয়ক ইখতিয়ার ইমন, সমন্বয়ক জাফরুল হাসান, সমন্বয়ক রাকিব হোছাইন নওশাদ, সমন্বয়ক তন্ময় হোসেন (নাসির) প্রমুখ।
ঢাকা/রেজাউল/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সমন বয়ক স এইচট
এছাড়াও পড়ুন:
সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া ভারতীয় ৭ পরিচালক
ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলোর একটি; যা তাদের সাংস্কৃতিক প্রভাব ও বিশাল বৈশ্বিক দর্শকশ্রেণির জন্য পরিচিত। ভারতীয় সিনেমা, বিশেষ করে বলিউড ও সাউথ ইন্ডিয়ার ব্লকবাস্টার সিনেমাগুলো কেবল ভারতেই নয়, চীন, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আয় করে থাকে।
সময়ের সঙ্গে বিদেশি বাজার আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠায় দেশটির চলচ্চিত্র নির্মাতারাও অভূতপূর্ব খ্যাতি ও আর্থিক সাফল্য অর্জন করছেন। দশকের পর দশক ধরে অভিনেতারাই লাইমলাইটের সিংহভাগ আলো কেড়ে নিতেন, আর পরিচালকরা আড়ালে থেকে খুবই কম স্বীকৃতি পেতেন। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ইদানীং পরিচালকরা অভিনেতাদের মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, অনেক সময় তাদের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গির জন্য আরো বেশি পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন। চলতি বছরে ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ৭ পরিচালককে নিয়ে এই প্রতিবেদন—
আরো পড়ুন:
ভেঙে গেল মীরার তৃতীয় সংসার
আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না: এসএস রাজামৌলি
এসএস রাজামৌলি
‘বাহুবলি’ সিনেমা খ্যাত পরিচালক এসএস রাজামৌলি। কেবল নির্মাতাই নন, তার পরিচালিত ৯৯ ভাগ সিনেমার চিত্রনাট্যকারও তিনি। ক্যারিয়ারে ১৪টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এই তারকা পরিচালক। এরই মধ্যে তার ‘ট্রিপল আর’ সিনেমা অস্কারও জিতে নিয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া পরিচালকের তালিকায় সবার শীর্ষে অবস্থান করছেন রাজামৌলি। তার পরবর্তী সিনেমা ‘বারাণসী’। এ সিনেমার জন্য রাজামৌলি পারিশ্রমিক নিয়েছেন ২০০ কোটি রুপি।
সন্দীপ রেড্ডি ভাঙা
তেলেগু ও হিন্দি সিনেমার পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙা। ক্যারিয়ারে মাত্র তিনটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন ‘অর্জুন রেড্ডি’খ্যাত এই পরিচালক। এসব সিনেমা হলো—‘অজুর্ন রেড্ডি’, ‘কবীর সিং’ ও ‘অ্যানিমেল’। পরিচালনার পাশাপাশি এসব সিনেমার চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন তিনি। ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া পরিচালকের তালিকায় তার অবস্থান দ্বিতীয়। তার পরবর্তী সিনেমা ‘স্প্রিরিট’, ‘অ্যানিমেল পার্ক’। ১০০-১৫০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নেন সন্দীপ রেড্ডি ভাঙা।
অ্যাটলি কুমার
ভারতের দক্ষিণী সিনেমার তারকা পরিচালক অ্যাটলি কুমার। ২০১৩ সালে তামিল ভাষার ‘রাজা রানি’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে। নির্মাণ ক্যারিয়ারে সাতটি সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তার মধ্যে অধিকাংশ সিনেমাই ব্যবসাসফল। তার নির্মিত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো—‘থেরি’, ‘মের্শাল’, ‘বিগিলি’, ‘জওয়ান’। ‘জওয়ান’ সিনেমার মাধ্যমে নির্মাতা হিসেবে বলিউড পা রাখেন অ্যাটলি। সিনেমাটিতে প্রথমবার শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করেন এই নির্মাতা। ২০২৩ সালে মুক্তি পায় এটি। সিনেমাটি বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল। আল্লু অর্জুনকে নিয়ে ‘এএ২২×এ৬’ শিরোনামে সিনেমা নির্মাণ করছেন অ্যাটলি। এ সিনেমার জন্য ১০০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন এই পরিচালক।
প্রশান্ত নীল
কন্নড় ও তেলেগু সিনেমার পরিচালক প্রশান্ত নীল। ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া নির্মাতার তালিকায় অ্যাটলির সঙ্গে যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি। নির্মাণ ক্যারিয়ারে খুব বেশি সিনেমা পরিচালনা করেননি। তার নির্মিত পাঁচটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে—‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ওয়ান’, কেজিএফ চ্যাপ্টার টু’, ‘সালার’ সিনেমা। অ্যাটলির মতো প্রশান্ত নীলও প্রতি সিনেমার জন্য শতকোটি রুপি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন।
রাজকুমার হিরানি
ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক রাজকুমার হিরানি। নির্মাণ ক্যারিয়ারে বেশ কিছু ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছে—‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘পিকে’, ‘ডাঙ্কি’ এর মতো সিনেমা। বলিউডের ইতিহাসে পরিচালক হিসেবে রাজকুমার হিরানির নামটি অনবদ্য। দাদাসাহেব ফালকের বায়োপিকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। প্রতিটি সিনেমার জন্য এখন ৮০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন এই পরিচালক।
সুকুমার
তেলেগু সিনেমার আলোচিত পরিচালক সুকুমার। নির্মাণ ক্যারিয়ারে ১০টি সিনেমা উপহার দিয়েছেন। আল্লু অর্জুনকে নিয়ে ‘আরিয়া’ নির্মাণ করেই নজর কাড়েন। এটি ছিল তার অভিষেক সিনেমা। তারপর ‘আরিয়া টু’, ‘রাঙ্গাস্থালাম’ নির্মাণ করে প্রশংসা কুড়ান। তবে আল্লু অর্জুন অভিনীত ‘পুষ্পা’ ও ‘পুষ্পা টু’ সিনেমা উপহার দিয়ে হইচই ফেলে দেন এই পরিচালক। এখন ‘পুষ্পা থ্রি’ নির্মাণের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। প্রতিটি সিনেমার জন্য এ পরিচালক পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন ৭৫ কোটি রুপি।
সঞ্জয়লীলা বানসালি
‘পদ্মশ্রী’ বিজয়ী পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানসালি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক আলোচিত ও ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছে—‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘দেবদাস’, ‘সাওয়ারিয়া’, ‘পদ্মাবত’ প্রভৃতি। ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত পরিচালকের তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছেন সঞ্জয়লীলা বানসালি। ‘লাভ অ্যান্ড ওয়ার’ সিনেমার কাজ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিটি সিনেমার জন্য ৬৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন এই নির্মাতা।
তথ্যসূত্র: সিয়াসাত ডটকম
ঢাকা/শান্ত