গবেষণার জন্য দানের মরদেহ চুরির ঘটনায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে: আদালত
Published: 7th, October 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলে গবেষণার জন্য দান করা মরদেহ চুরি করে কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে বলে রায় দিয়েছেন ম্যাসাচুসেটসের সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল সোমবার দেওয়া রায়ে আদালত বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মরদেহগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মর্গ ব্যবস্থাপক সেড্রিক লজ তাদের প্রিয়জনদের মরদেহ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে মামলা করা হয়েছিল। মামলায় তিনি দোষীও সাব্যস্ত হয়েছেন।
ম্যাসাচুসেটসের সর্বোচ্চ বিচারিক আদালত বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত মরদেহগুলো কেটে সেগুলোর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করে বিক্রি করে দিতেন সেড্রিক লজ। তাঁর এই ‘ভয়াবহ কাজের’ জন্য ভুক্তভোগী পরিবারগুলো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কেও দায়ী করেছিল। কিন্তু নিম্ন আদালতের এক বিচারক অন্যায্যভাবে মামলাগুলো খারিজ করে দেন।
বিচারপতি স্কট কাফকার রায়ে বলেন, মামলার বাদীরা অভিযোগ করেছেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মরদেহগুলোর ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছে। মরদেহগুলোর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা ভয়ংকর ও অসম্মানজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবহেলার সুযোগে সেড্রিক লজ বহু বছর ধরে এ অপকর্ম করেছেন।
আদালতের রায়ে কাফকার লিখেছেন, ‘দান করা মরদেহগুলোকে সম্মানজনকভাবে সংরক্ষণ ও যথাযথভাবে সামলানোর আইনি দায়িত্ব ছিল হার্ভার্ডের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। হার্ভার্ড নিজেই এ দায় স্বীকার করেছে।’
এ ঘটনায় হার্ভার্ডের মরণোত্তর দেহদান কর্মসূচির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রমও নতুনভাবে শুরু করেছেন আদালত।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এক বিবৃতিতে লজের এই অপকর্মকে জঘন্য বলে উল্লেখ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি হার্ভার্ডের মূল্যবোধের পরিপন্থী।
লজ গত মে মাসে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তিনি এখন তাঁর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন।
বিচারকেরা বলেন, সেড্রিক লজ ২০১৮ সালে মর্গ থেকে মরদেহ চুরি শুরু করেন। তিনি মরদেহের মাথা, মস্তিষ্ক, ত্বক ও অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করে বোস্টনের হার্ভার্ড মর্গ থেকে নিউ হ্যাম্পশায়ারের গফসটাউনে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন এবং স্ত্রীর সহায়তায় সেগুলো বিক্রি করে দিতেন।
এ ঘটনায় মোট ১২টি মামলায় ৪৭ অভিযোগকারী হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনেছেন। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়টি বছরের পর বছর ধরে লজের কর্মকাণ্ড উপেক্ষা করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ কর ছ ন মরদ হ ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন দিয়ে দিলে সম্মান বেঁচে যাবে, এই চিন্তা যেন উপদেষ্টারা না করেন: সারজিস আলম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘এত বড় একটা অভ্যুত্থানের দায়িত্ব, এত শহীদের রক্তের দায়িত্ব, শুধু একটা নির্বাচন দিয়ে যদি তারা শেষ করে এক্সিট (প্রস্থান) নিতে চায়, আমরা বলি বাংলাদেশের মানুষের কাছে তারা আর কোনো দিন আশ্রয় পাবে না। নির্বাচন দিয়ে দিলেই সম্মান বেঁচে যাবে, এই চিন্তা যেন তাঁরা না করেন।’
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহীতে দলের জেলা ও মহানগর কমিটির এক সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম এসব কথা বলেন। নগরের অলকার মোড়ে চেম্বার অব কমার্স ভবনে এই সভা হয়েছে। এতে রাজশাহী জেলা ও মহানগরের এনসিপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘উপদেষ্টাদের দায়িত্ব শুধু একটি নির্বাচন আয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে যেভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে বোল্ড (দৃঢ়) সংস্কার ও সিদ্ধান্ত দেখার আশা করেছিলাম, তা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। যে অপকর্মগুলোর বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নেমেছিল, সেগুলোর শেষ দেখতে চেয়েছিলাম। এই গাফিলতির দায় উপদেষ্টাদের নিতে হবে।’
আরও পড়ুনশাপলা না দিলে নির্বাচন কমিশনের ওপর আমাদের আস্থা থাকবে না: সারজিস১ ঘণ্টা আগেসারজিস বলেন, ‘যেটুকু সময় আছে, আমরা চাই তাঁরা (উপদেষ্টা) তাঁদের দায়িত্বটুকু সাহসিকতার সঙ্গে পালন করুক। এভাবে চুপিচুপি চলে যাওয়ার চেয়ে, দায়সারা চলে যাওয়ার চেয়ে, সসম্মানে যদি একটা দেশের মানুষের জন্য কিছু করে বরং নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হন, ওই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটাও সম্মানের। আমরা তাঁদের আহ্বান করব, তাঁরা যেন অভ্যুত্থানটাকে ধারণ করে তাঁদের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে নির্বাচন কমিশন যেভাবে চলেছে, বর্তমান কমিশনও যদি সেভাবেই চলার চেষ্টা করে, তবে তা হবে অভ্যুত্থানের জন্য লজ্জার।’
তিনি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমরা ২২টি জেলা ও ১০০টি উপজেলায় কমিটি করে শর্ত পূরণ করতে গিয়ে যখন ঘাম ঝরাই, তখন দুই ফিট বাই দেড় ফিটের একটি পিভিসি ব্যানার ঝুলিয়ে কোনো নামসর্বস্ব দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়। এটা হতে পারে না।’ তিনি নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানান।
আরও পড়ুন‘উপদেষ্টাদের অনেকেই সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে’, নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা০৫ অক্টোবর ২০২৫দলের বিভিন্ন কমিটিতে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা-কর্মীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট অবস্থান, জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যারাই ছিল, রানিং (বর্তমান) কোনো পদে থেকে যারা ফ্যাসিবাদের দোসরের ভূমিকা পালন করেছে অথবা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য এনসিপিতে কোনো জায়গা নেই।’ এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যদি কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আসে, আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেব।’