১৬ দিন হয়ে গেল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কোনো সচিব নেই। গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরের দায়িত্ব কাকে দেবে, সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে কাজে নেমেছে স্থবিরতা। প্রশ্ন আসছে, এমন অবস্থা আর কত দিন চলবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমানকে জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছিল। দুই বছরের জন্য চুক্তিতে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হলেও গত ২১ সেপ্টেম্বর বদলি করে পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। তার পর থেকে জনপ্রশাসন সচিবের পদটি ফাঁকা।
সচিবালয়ে গুঞ্জন আছে, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ ঘিরে ভেতরে–ভেতরে চলছে তীব্র টানাপোড়েন। দুটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক–কর্মকর্তারা চাইছেন, তাঁদের পছন্দের কেউ যেন এই পদে বসেন। কারণ, জেলা প্রশাসকসহ মাঠ প্রশাসন ও অন্যান্য পর্যায়ের বদলি ও পদোন্নতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসে এ মন্ত্রণালয় থেকেই।
পাঁচ মাস পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা রয়েছে। ফলে এখন যিনি নিয়োগ পাবেন, ভোটের সময় তাঁরই সেই দায়িত্বে থাকার কথা।
আবার সচিবালয়ে আলোচনা আছে, বিতর্কের আশঙ্কায় অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এখন এই পদে যেতে অনাগ্রহী। কেউ কেউ মনে করছেন, অন্য মন্ত্রণালয়ে চুক্তিতে নিয়োগে থাকা কোনো সচিবকে জনপ্রশাসনে আনা হতে পারে। তাতে আবার আপত্তি নিয়মিত কর্মকর্তাদের। তাঁরা বলছেন, জনপ্রশাসন সচিব করা উচিত নিয়মিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই কাউকে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে নয়।
এসব মিলিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দোদুল্যমানতা অনেকটাই স্পষ্ট।
মোখলেস উরকে বদলির পর আলোচনা ছিল, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন থেকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ফেরার পরপরই নতুন সচিব নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি ২ অক্টোবর দেশে ফিরেছেন, তারপর সপ্তাহ গড়ালেও জনপ্রশাসন সচিব পদ শূন্যই রয়েছে।
জনপ্রশাসন সচিব প্রশাসনের সবচেয়ে প্রভাবশালী পদের একটি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের পর এই পদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রণালয়টির গুরুত্ব এখন আরও বেড়েছে।
আরও পড়ুনজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানকে বদলি২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আজ বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সচিব পদে কাকে, কবে নিয়োগ দেওয়া হবে—তা নিয়ে কর্মকর্তারাও অনিশ্চয়তায় আছেন। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি, নিয়োগ ও পদোন্নতির কাজ প্রায় স্থবির হয়ে আছে। আটকে আছে কিছু আর্থিক বিষয়ও। আপাতত একজন অতিরিক্ত সচিব কেবল রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আশা করছেন শিগগির জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগ হয়ে যাবে।। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় তাঁরাও বলতে পারছেন না। কারণ, এই নিয়োগের বিষয়টি তাঁদের হাতে নেই।
আরও পড়ুনএই সরকারও পুরোনো পথে, প্রশাসনে পদ ছাড়াই পদোন্নতি ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫কবে নাগাদ জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ হবে, সে বিষয়ে জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির সভাপতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বা কমিটির অন্য সদস্যদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২২ দিন মা ইলিশ রক্ষা করতে পারলে উৎপাদন বাড়বে: উপদেষ্টা
ডিম ছাড়া ও প্রজননের জন্য সরকার নির্ধারিত ২২ দিন সফলভাবে কার্যকর করার মধ্য দিয়ে মা ইলিশ রক্ষা করতে পারলে আগামী মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার সাভার উপজেলার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের কেন্দ্রীয় কৃত্রিম প্রজনন ল্যাবরেটরির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
মেঘনায় মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানিক দলের ওপর হামলা
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মৎস্যকর্মীর ইলিশ শিকার: তদন্ত কমিটি গঠন
ইলিশের ডিম ছাড়া ও প্রজনন বৃদ্ধির জন্য মা ইলিশ রক্ষায় ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন দেশের নদী-সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এ সময় ইলিশ ধরা, বিক্রয়, পরিবহন বন্ধ থাকবে।
সাভারে ল্যাবরেটরি পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমাদের যে সুযোগ-সুবিধা আছে, তা যদি কাজে লাগানো যায়, দেশের খামারিরা তাদের গো-প্রজননের ক্ষেত্রে বড় সেবা পাবে। এর মাধ্যমে উন্নত ও সংকর প্রজাতির প্রজনন এবং গো-মাংস ও দুগ্ধ উৎপাদন বাড়বে।’’
এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বছর ইলিশের আকাল হওয়ার পেছনে অন্যান্য আরো কারণ আছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘নদীতে নাব্যতার অভাব, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি ঠিকমতো না হওয়া এছাড়াও এখন বড় দুটি সমস্যা আছে, একটি হচ্ছে অবৈধ জালের ব্যবহার, আরেকটি হচ্ছে জাটকা ধরা।’’
ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘এই জাটকা নিধন বন্ধে আমরা যদিও এপ্রিল মাসে ৫৮ দিনের (মাছ ধরার ওপর) নিষেধাজ্ঞা দেই, সেসময় কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, নৌপুলিশ এবং আমাদের কর্মকর্তারা অনেক কাজ করেন, কিন্তু তারপরও এটা দুঃখজনক, অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা স্বল্পমেয়াদী মুনাফা চান, তারা জেলেদের বাধ্য করেন এগুলো (জাটকা) ধরতে। এটার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, আগামী মৌসুমে আপনারা ভালো রেজাল্ট পাবেন।’’
ঢাকা/সাব্বির/বকুল