কক্সবাজারের টেকনাফে বাড়িতে ঢুকে এক ব্যবসায়ীকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে পশ্চিম লেদা গ্রাম থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের সময় বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের সঙ্গে অস্ত্রধারীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অপহরণকারীরা সবাই রোহিঙ্গা নাগরিক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অপহৃত ওই ব্যবসায়ীর নাম নুরুল ইসলাম। তিনি পশ্চিম লেদা গ্রামের শামশুল আলমের ছেলে। আজ শুক্রবার বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁকে উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ জানায়, নূরুল ইসলাম রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে খাবার পানি সরবরাহ করেন। পানি সরবরাহ নিয়ে তাঁর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরোধ চলে আসছিল।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল রাতে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি দল ভারী অস্ত্র নিয়ে নুরুল ইসলামের বাড়িতে হানা দেয়। ফাঁকা গুলিবর্ষণের পর ঘরের টিনের ছাদ ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তাঁরা। এরপর নুরুল ইসলামকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনেন। এ সময় নুরুল ইসলামের স্ত্রী, মা ও সন্তানদেরও মারধর করা হয়। পাশাপাশি ঘরের আসবাব ভেঙে নগদ টাকাসহ মূলবান জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের বাড়ির পাশেই রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির রয়েছে। গোলাগুলির খবর পেয়ে আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি গুলি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত নুরুল ইসলামকে নিয়েই অস্ত্রধারীরা চলে যান।

অপহৃত নুরুল ইসলামের ছেলে কামাল হোসেন বলেন, রাতে হঠাৎ একদল অস্ত্রধারী তাঁদের বাড়িতে এসে কয়েকটি গুলি ছোড়ে। এরপর ঘরের ভেতরে ঢুকে তাঁর বাবাকে মারধর করতে থাকে। ঘরের ভেতরেও তিনটি গুলির খোসা পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো.

নাজমুন নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘অপহৃত নুরুল ইসলাম ক্ষুদ্র ব্যবসার পাশাপাশি আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাবার পানি সরবরাহ করতেন। তা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল। আবার রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও নুরুল ইসলামের পূর্বশত্রুতা ছিল বলে জানা গেছে। অপহরণের নেপথ্য কী ঘটনা, তার রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তাঁকে উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে।’

ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া একটি গুলি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ল ইসল ম র ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

সৌদি আরবে অপহরণ করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়, মাগুরা থেকে একজন গ্রেপ্তার

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী মো. রাসেলকে আটকে রেখে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে পাঁচ দিন পর গত ১৭ জানুয়ারি সেখানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি রিয়াদে ব্যবসা করতেন। অপহরণে জড়িত অভিযোগে গতকাল বুধবার মাগুরা থেকে অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বুধবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। আগে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সিআইডির গণমাধ্যম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সকালে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিতভাবে রাসেলকে সৌদি আরবের রিয়াদ শহর থেকে অপহরণ করে। পরে রাসেলের বড় ভাই ঢাকার বাড্ডার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের কাছে একটি ইমো আইডি থেকে ও ভিওআইপির মাধ্যমে ফোন করে রাসেলের জন্য ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের টাকা দেওয়া না হলে রাসেলের ক্ষতি করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। অপহরণকারীরা মুক্তিপণের অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের কয়েকটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নম্বর এবং বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বর দেয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাইফুলসহ স্বজনেরা উপায়ন্তর না পেয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের মুক্তিপণ দিতে রাজি হন। সাইফুল ইসলাম খিলগাঁও ঝিলপাড় এলাকা থেকে বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নম্বরে ধাপে ধাপে ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং অপহরণকারীদের দেওয়া ব্যাংক হিসাবে মোট ২৫ লাখ টাকা পাঠান। মোট ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ পেয়ে রাসেলকে ১৭ জানুয়ারি সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। চলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা আসামিরা রাসেলের হাতের ছাপ এবং আকামা আইডি নিজেদের হেফাজতে নেয়। অপহরণের ঘটনা ফাঁস হলে রাসেলকে খুন করা হবে বলে ভয়ভীতি দেখান অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। পরে রিয়াদের স্থানীয়দের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে গিয়ে রাসেল পরিবারকে সব খুলে বলেন। রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে থাকছেন এবং সেখানে ব্যবসা করছেন। গত ২১ জানুয়ারি রাসেলের শ্বশুর বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলার তদন্তে জানা যায়, অপহরণকারীরা যেসব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নম্বর ও ব্যাংকের হিসাব নম্বর অপহৃতের স্বজনদের দিয়েছিল, সেগুলোর তথ্যাদি পর্যালোচনা করে মো. জিয়াউর রহমান (৪২) নামের একজনের তথ্য পায় সিআইডি। গ্রেপ্তার জিয়াউর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডি কর্মকর্তাদের বলেছেন, সৌদি আরবে অবস্থানরত অপহরণকারীদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে এই কাজে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিপণ হিসেবে নেওয়া টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পেয়েছেন তিনি।

সিআইডির কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, মামলাটি বর্তমানে সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে। গ্রেপ্তার জিয়াউর রহমানকে রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদ্‌ঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেকনাফে ঘরের দরজা ভেঙে স্থানীয় বাসিন্দাকে অপহরণ করেছে রোহিঙ্গারা
  • অপহৃত স্কুল ছাত্রী উদ্ধার, অপহরণকারী গ্রেপ্তার
  • সৌদি আরবে অপহরণ করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়, মাগুরা থেকে একজন গ্রেপ্তার
  • গ্রী গ্লোবাল বাংলাদেশের পার্টনারস মিট: কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে দিকনির্দেশনা
  • বেবি’স ডে আউট: বাস্তবে একটি শিশুর চরিত্রে দুই শিশু ছিল
  • ঢাকার কম্পিউটার বাজারে প্রসেসর সরবরাহে ঘাটতি
  • আগামী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ জ্বালানি সরবরাহ
  • ট্রলারসহ ৬ জেলে অপহরণ 
  • ইরান কেন ভারতীয়দের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণ স্থগিত করল