শহিদুল আলমকে নিরাপদে দেশে ফেরাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আহ্বান
Published: 8th, October 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে নিরাপদে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
আজ বুধবার বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, গণসংহতি আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম তিনিসহ বহরে থাকা ব্যক্তিদের আটকে দেওয়ার খবর জানান। শহিদুল আলম বলেন, তাঁদের বহনকারী গাজা অভিমুখী জাহাজটি মাঝসমুদ্রে আটকে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি অপহরণের শিকার হয়েছেন।
শহিদুল আলম কনশেনস নামের যে জাহাজে আছেন, তা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) নৌবহরের একটি জাহাজ। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীবাহী এই জাহাজ ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছিল।
শহিদুল আলমের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রতি অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
পৃথক বিবৃতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ক্ষুধার্ত ও অবরুদ্ধ গাজাবাসীর প্রাণ রক্ষায় ত্রাণবাহী জাহাজগুলো যাতে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, সে জন্য ইসরাইলের ওপর অবিলম্বে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে আটক বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ সব মানবাধিকারকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
শহিদুল আলমের নিরাপত্তা ও মুক্তির বিষয়ে সরকারকে জরুরি সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘শহিদুল আলম গাজার জনগণের প্রতি আমাদের সম্মিলিত ভালোবাসা বহন করেছেন। তাঁর নিরাপত্তা ও মুক্তি আমাদের জাতীয় সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পৃথক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের দ্রুত মুক্তি এবং নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, আলোকচিত্রী, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমসহ গাজা অভিমুখী গ্লোবাল ফ্লোটিলা থেকে আটক সব ত্রাণকর্মীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাঁদের মুক্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনে মার্কিন মদদে চলমান গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক মহলে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।
এ ছাড়া ভিন্ন বিবৃতিতে শহিদুল আলমের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে নাগরিক সমাজের সংগঠন নাগরিক কোয়ালিশনের পক্ষ থেকেও।
ঢাকায় সমাবেশ
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক অধিকারকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এবং ফিলিস্তিনে জায়নবাদী আগ্রাসনের প্রতিবাদে রাজধানীর ইস্কাটনে সমাবেশ করেছে গণসংহতি আন্দোলন। সেখান ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়া বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ অধিকারকর্মীদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
সভায় গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অপহৃত শহিদুল আলমের মুক্তির জন্য আমাদের সোচ্চার হতে হবে। সেখানে যাঁরা ছিলেন তাঁদের অপহরণ করে কীভাবে, কোথায় রাখা হয়েছে—আমরা জানি না। তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে তাঁদের মুক্তির জন্য সর্বোচ্চ ভূমিকা নিতে হবে।’
আরও পড়ুনইসরায়েলি বাহিনী আমাদের আটকে দিয়েছে, আমাকে অপহরণ করেছে: শহিদুল আলম৯ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহ ব ন জ ন য় ছ ধ ক রকর ম ইসর য় ল আম দ র ন র পদ সরক র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে চার জেলে অপহৃত, মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন একজন
সুন্দরবনের লোনাজলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে চার জেলে অপহরণের স্বীকার হয়েছেন। তাঁদের ছাড়তে মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে বনদস্যুরা। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা রেঞ্জের আঠারবেকি এলাকার একটি খালে কাকড়া ধরার সময় তাঁদের অপহরণ করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, দস্যু আলিম বাহিনীর সদস্যরাই জেলেদের অপহরণ করেন। অপহৃত জেলেদের মধ্যে একজন মুক্তিপণ দিয়ে গতকাল রোববার বাড়ি ফিরেছেন।
শ্যামনগর উপজেলার বড়ভেটখালী গ্রামের ইউসুফ গাজী বলেন, তিনি ২০ নভেম্বর কৈখালী স্টেশন থেকে অনুমতিপত্র (পাস) নিয়ে নিজের নৌকায় মরগাং গ্রামের ইব্রাহিম শেখ ও আনিস শেখকে নিয়ে বনে প্রবেশ করেন। একইভাবে পাস নিয়ে মরগাং গ্রামের হাসান শেখ ও বড়ভেটখালী গ্রামের আবদুল গাজীও বনে ঢোকেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় আঠারবেকি ভাইজো খালে কাঁকড়া ধরার সময় দস্যুরা তাঁদের নৌকা আটকে দেয়। তিনটি নৌকা থেকে তারা চারজনকে তুলে নেয়। পরে জানায়, মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা দিলে ছাড়া পাওয়া যাবে। গতকাল ভোরে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের পর দস্যুরা হাসান শেখকে একটি নৌকায় তুলে দেয়। সকাল ৯টার দিকে তিনি বাড়ি পৌঁছান।
শ্যামনগর মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাসেম মোরেল জানান, সুন্দরবনে দস্যুতা আবারও বেড়ে উঠেছে। ভেটখালী ও মরগাং গ্রামের বেশ কয়েকজন জেলে সম্প্রতি আঠারবেকি এলাকা থেকে অপহৃত হয়েছেন বলে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়েছেন।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা হক বলেন, ‘জেলেরা আমাদের কিছুই জানায় না। মহাজন বা পরিবারের লোকজন মুক্তিপণ দিয়ে তাঁদের ছাড়িয়ে আনে, পরে আমরা খবর পাই। দুর্গম বনাঞ্চলে দ্রুত অভিযান চালানোও কঠিন। বনদস্যু দমনে একটি স্মার্ট পেট্রোল টিম ও দুটি বিশেষ দল মাঠে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে।’