খুলনায় ক্রয়কৃত জমির দখল পেতে খোলা আকাশের নিচে একটি পরিবার
Published: 10th, November 2025 GMT
জীবনের শেষ সম্বল ১৬ লাখ টাকা দিয়ে নগরীতে মাত্র ২ শতক জমি কিনেছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. নিজাম উদ্দিন (কালু)। সেখানে একটি ছোট্র দোকান করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু জমি বিক্রেতা সেলিম ও শামীম- এ দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের বলি হন তিনি।
বিক্রেতা সেলিম টাকা নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমালেও খুলনায় থাকা শামীম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কাউন্সিলর ডনকে দিয়ে ব্যবসায়ী কালু ও তার পরিবারকে কাউন্সিলর অফিসে নিয়ে আটকে দোকান-ঘর ভাঙচুর করে রাতারাতি ক্রয়কৃত জমি থেকে তাকে উচ্ছেদ করে।
আরো পড়ুন:
খুবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১৮ ডিসেম্বর
খাবার ও পানি সমস্যায় খুবির ছাত্রী হলে ভোগান্তি চরমে
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর নানা দেনদরবার করেও নিজের জমির দখল না পেয়ে গত ৫ নভেম্বর থেকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী কালু ও তার স্ত্রী ক্রয়কৃত জমিতে উঠেছেন। কিন্তু সেখানে কোনো ঘর না থাকায় পরিবারটির রাত-দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। দিনে প্রখর রোদ এবং রাতের ঠান্ডায় তারা ঝুঁকির মধ্যে সেখানে অবস্থান করছেন।
এমনকি প্রতিনিয়ত জমি বিক্রেতা সেলিমের ভাই শামীম আহমেদ ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর হুমকি-ধামকির কারণেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এ ঘটনায় রবিবার (৯ নভেম্বর) খুলনা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, পরিচিত কেউ এ বিষয়ে কালুর সঙ্গে কথা বলতে গেলেও শামীমের লোকজন তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ছবি তুলে এবং ভিডিও করে রাখছে। এমনকি দেশিয় অস্ত্র নিয়ে কালু ও তার পরিবারকে সেখান থেকে তুলে দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তির দখল বুঝে পেতে এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দিন কালু খুলনা মহানগরীর দোলখোলার ৪৫/১ ইসলামপুর রোড এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। বর্তমানে তিনি কাঁচামালের ব্যবসা করেন। তার স্ত্রী মেরি বেগম ও দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আর ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত।
ভুক্তভোগী কালু অভিযোগ করে জানান, ২০১৭ সালে নগরীর দোলখোলা শীতলাবাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পাশে শেখ মো.
তিনি জানান, তিনি জমি কেনার পর বিক্রেতা সেলিমের ভাই শামিম থানায় তার বিরুদ্ধে জিডি করেন। পরে পুলিশ এসে কালুর কাগজ সঠিক দেখে সেখান থেকে চলে যায়। ২০২১ সালে সেলিমের ভাই শামিম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কেসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর জেডএ মাহমুদ ডনকে দিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে কালুর দোকানঘর ভাঙচুর করে বিপুল অংকের অর্থের মালামাল লুট করে এবং বাইরে ফেলে দেয়।
তিনি আরো জানান, ওইদিন শামিমের কথামতো ডনের সন্ত্রাসী বাহিনী ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের তুলে তার কাউন্সিলর অফিসে তুলে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে কালুকে ডন প্রশ্ন করে ‘কেন তুমি এ জমি কিনেছো’ এ কথা বলে তাকে হুমকি-ধামকি দেন। এভাবে তাদের জোরপূর্বক নিজস্ব জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।
এদিকে, জমির দখল বুঝে পেতে গত ৫ নভেম্বর থেকে অসহায় কালুর পরিবারটি ওই জমিতে উঠে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। খবর পেয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা তথ্য জানতে গেলে অসহায় কালুর প্রতিপক্ষরা বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি সাংবাদিকরা সেখান থেকে আসার কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী শামিম তার ছেলে ছানিম, ভাগ্নে সেতু ও মিজানসহ ৬-৭ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল চাপাতি হাতে নিয়ে গেটে তালা মেরে কালুর ওপর হামলার চেষ্টা করে। ওই সময় তাদের বসবাসের তাবুও কেটে ফেলে দেয় এবং ওই জমি থেকে সবকিছু নিয়ে বের হয়ে যেতে বলে।
ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দীন কালুর স্ত্রী মেরি বেগম বলেন, “সাংবাদিকরা আমাদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শামিম, তার ছেলে ছানিম, ভাগ্নে সেতু ও মিজান সহ ৬-৭ জন একত্রিত হয়ে দা হাতে নিয়ে গেটে তালা দিয়ে হামলার চেষ্টা করে এবং আমাদের মালামাল সবকিছু নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে বলে। আমাদের এখন নিরাপত্তা দেবে কে?” তিনি তাদের জমি বুঝে পেতে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জমি বিক্রেতা শেখ মো. সেলিমের ভাই মো. শামিম আহমেদ বলেন, “নিজাম উদ্দিন কালু যে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি আদালতে মামলা করেছি। আদালতের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে জবাব দেওয়া হবে।”
চাপাতি হাতে গেটে তালা দিয়ে হামলার চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে শামিম সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেন, “ওদের অত্যাচারে আমরাই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।”
লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা সদর থানার এসআই মো. আশরাফ হোসেন বলেন, “নিজাম উদ্দিন কালু থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর খ লন ন জ ম উদ দ ন ক ল র পর ব র ক রয়ক ত ব যবস ব ষয়ট র দখল
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমাকে পাঠিয়ো না’, ৯ বছরের শিশু কেন স্কুল ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করল
ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুরের এক শান্ত বাড়িতে আজও ৯ বছরের আমাইরার কণ্ঠস্বর শোনা যায়। তার মা এক বছর আগে হোয়াটসঅ্যাপে তার কথা রেকর্ড করে রেখেছিলেন। সেই ক্লিপে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীটিকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়, ‘আমি স্কুলে যেতে চাই না...আমাকে পাঠিয়ো না।’
আমাইরার মা শিবানী মীনা অডিওটি রেকর্ড করে মেয়ের শ্রেণিশিক্ষকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন, এর মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষ হয়তো তাঁর সন্তানের কষ্টের কারণ সম্পর্কে সতর্ক হবে।
মা শিবানী অভিযোগ করেন, ‘আমি শ্রেণিশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি, ক্লাসের সমন্বয়কের সঙ্গেও গত এক বছরে একাধিকবার কথা বলেছি। কিন্তু তাঁরা হয় আমাকে এড়িয়ে গেছেন, না হয় অগ্রাহ্য করেছেন।’
এক বছর পর গত বছরের ১ নভেম্বর জয়পুরের নামকরা নীরজা মোদি স্কুলের ৯ বছরের এই ছাত্রী স্কুল ভবনের চতুর্থ তলা থেকে লাফ দেয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
আমাইরার মা–বাবার অভিযোগ, তাঁদের শিশুটির প্রতি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ বুলিং, টিজিং ও মৌখিক নির্যাতনের বিষয়ে বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আমাইরার বাবা বিজয় মীনা অভিভাবক ও শিক্ষকদের একটি বৈঠকের (পিটিএম) কথা স্মরণ করেন। তাঁর ভাষ্য, সেই সময় একদল শিশু আমাইরা ও অন্য একটি ছেলেশিশুকে ইশারা করে দেখাচ্ছিল। আমাইরা লজ্জায় বাবার পেছনে লুকিয়ে পড়েছিল। তিনি পিটিএমে বিষয়টি তুলেছিলেন।
বিজয় মীনা বলেন, ‘শিক্ষক আমাকে বললেন, এটি একটি সহশিক্ষা স্কুল, তাই আমাইরার উচিত সব শিশুর, এমনকি ছেলেদের সঙ্গেও কথা বলা শেখা। আমি শিক্ষককে বলেছিলাম, “আমার মেয়ে যদি ছেলেদের সঙ্গে কথা বলতে না চায়, তবে সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।”’
তদন্তকারী কর্মকর্তারা শ্রেণিকক্ষের যে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন, তাতে দেখা যায়, আমাইরা রেলিং টপকে লাফ দেওয়ার কয়েক মিনিট আগে দুবার তার শিক্ষকের কাছে হেঁটে গিয়েছিল। সে কী বলেছিল, তা জানা যায়নি। কারণ, এই ফুটেজে কোনো শব্দ নেই। তবে সিবিএসই নির্দেশিকা অনুযায়ী, শ্রেণিকক্ষের নজরদারিতে অডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক।
আমাইরার কাকা সাহিল বলেন, ‘আমরা উত্তর চাই। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই, পাঁচ হাজারের বেশি শিশু এবং ছয়তলা এই ভবনে নিরাপত্তার জন্য গ্রিল বা জাল (নেট) না রেখে তারা বাড়তি ফ্লোর তৈরির অনুমতি পেল কী করে? এটা একদম প্রাথমিক একটা বিষয়। এতগুলো শিশু যেখানে রয়েছে, সেখানে কীভাবে খোলা ফ্লোর থাকতে পারে? সিবিএসই নির্দেশিকা অনুযায়ী সিসিটিভিতে অডিও নেই কেন? এমনকি ১৫ দিনের সিসিটিভি ফুটেজও পাওয়া উচিত। এটি জয়পুরের একটি নামকরা স্কুল। তারা প্রচুর ফি নেয়, কিন্তু জবাবদিহি কোথায়?’
জয়পুরের ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ রাজর্ষি রাজ বর্মা এনডিটিভিকে বলেন, শিশুটির মা–বাবার জবানবন্দি নিয়েছে পুলিশ। পুরো বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজর্ষি রাজ বলেন, ‘আমরা সবকিছু রেকর্ড ও যাচাই–বাছাই করছি। মা–বাবা প্রথমে শোকে পাথর হয়ে কথা বলতে পারছিলেন না। কিন্তু এখন তাঁদের যা যা অভিযোগ আছে, আমরা তা রেকর্ড করে যাচাই–বাছাই ও তদন্ত করব।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাথমিক) রামনিবাস শর্মা নিশ্চিত করেছেন, তাঁর বিভাগ আগামী দু–তিন দিনের মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে মা–বাবার বক্তব্য রেকর্ড করবে।
‘খারাপ’ শব্দের ব্যবহার প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি। তবে কিছু শিশু উল্লেখ করেছে, সেদিন সে স্কুলে যেতে চায়নি। অন্য কিছু শিক্ষার্থী ‘খারাপ’ শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ করেছিল।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।