Prothomalo:
2025-11-10@14:03:53 GMT

তারুণ্যের জয় মানে দেশের জয়

Published: 10th, November 2025 GMT

দেশের রাজপথে গত বছর তরুণেরা ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত তৈরি করেছিলেন, গণ-অভ্যুত্থান। চাকরিতে কোটা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনটা শুরু করেছিলেন জেন-জিরা, তা ক্রমে এক সামাজিক জাগরণে রূপ নিয়েছিল।

লাখো মানুষ সেদিন রাস্তায় নেমেছিলেন। তাঁদের অনেকেই ছিলেন ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে। কেউ যদি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি উদ্যোগ শুরু করেন, তার মধ্যে অন্তত ১০ হাজার টাকা চলে যায় ঘুষ আর অনিয়মে। অথচ এই টাকাটা একজন তরুণের তিন মাসের খরচ। ওই সময় তিনি কোডিং করে পৃথিবীর সেরা অ্যাপগুলোর একটি বানাতে পারতেন। এই অর্থ আধুনিক প্রজন্মের কাছে ‘ব্লাড মানি’। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সেদিন তরুণদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে এসেছিল সাধারণ মানুষ।

এমন বৈষম্য কেবল আর্থিক নয়-বৈষম্য আছে শিক্ষায়, সরকারি নীতিমালায়, এমনকি স্বপ্ন দেখায়ও। আর এই বৈষম্যের আমি ও আমার প্রজন্ম প্রতিদিন লড়াই করে যাচ্ছি।

রাস্তায় স্বপ্নের শুরু

২০০৯ সাল। তখন আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ক্লাসে ইলেকট্রিক মোটর শেখানো হচ্ছিল। আমি মুগ্ধ হয়ে শিখি। প্রতিদিন উত্তরার বাসা থেকে মহাখালীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হতো। পথে মোটর মেরামতের দোকানগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে দেখতাম, কীভাবে গাড়ির যন্ত্রপাতি খুলে আবার জোড়া লাগানো হয়। তখন থেকেই নিজের হাতে গাড়ি বানানোর স্বপ্ন জাগে মনে।

পুলিশ স্টেশনের সামনে যেসব পরিত্যক্ত গাড়ি পড়ে থাকে, সেখান থেকে একটি নিখরচায় পাওয়া গেলে তাতে হাইটর্ক মোটর লাগিয়ে একটি ইলেকট্রিক গাড়ি বানানো যেতে পারে—মাথার ভেতর এমন ভাবনাই ছিল। তখন টেসলা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না।

পরে এমন একটি গাড়ির ডিজাইন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাদ্দেক স্যারের হাতে দিই। তিনি উৎসাহ দিয়েছিলেন। পরে ওই ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে একটি গাড়ি বানানো হয়। এরপর ক্রেডিট ট্রান্সফার করে পড়তে যাই যুক্তরাষ্ট্রে, মন্টানা ইউনিভার্সিটিতে। অর্ধেক স্কলারশিপ পেলেও বাকি খরচ জোগাতাম পুরোনো গাড়ি কিনে মেরামতের পর তা বিক্রি করে। পাশাপাশি দু-তিনটি ছোট চাকরিও করেছি।

তবে সব সময় একটাই চিন্তা ঘুরত মাথায়—আমি কবে দেশে ফিরব! কারণ, বাংলাদেশের বৃষ্টি, সবুজ প্রকৃতি, মাটির গন্ধ আর নিজের ভাষায় কথা বলার আনন্দ ও শান্তি পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

‘পালকি’র গল্প

শেষমেশ পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালে দেশে ফিরলাম। স্বপ্ন ছিল নিজের একটি গাড়ি কোম্পানি গড়ব। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব কিছুই জানা নেই। তাই সময় লেগে গেল। বহু বাধা পেরিয়ে ২০২২ সালের মার্চে ‘পালকি মোটরস’ যাত্রা শুরু করল। আমাদের কারখানা ঢাকার উত্তর বাড্ডায় সাতারকুল সড়কে।

পালকি মোটরসের আইডিয়াটা এসেছিল মেডিটেশনের সময়, সঙ্গে ছিল নেপোলিয়ন হিলের থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ বইটি। বইয়ের পরামর্শমতো প্রথমে নিজের স্বপ্নগুলো লিখে ফেলি। কী করতে চাই, জীবনে কী অর্জন করতে চাই—সব। যেমন বাংলার এন্ডেমিক গাছপালা ও প্রাণী সংরক্ষণে বন তৈরি করব, যা মহাকাশ থেকেও দেখা যাবে।

ওয়েটেড ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করে কোন আইডিয়ার বাজার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তার বিশ্লেষণ করি। এতে পালকি সবার ওপরে থাকে। তারপর শুরু হয় মনের প্রোগ্রামিং। প্রতিদিন আমার স্বপ্নকে কল্পনায় দেখি। অনুভব করি আমার ফ্যাক্টরি, কর্মচারী, গাড়ি—সবকিছু।

কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। গাড়ির যন্ত্রপাতি আনতে লাগবে সাড়ে সাত লাখ টাকা, অথচ আমার তিনটা ক্রেডিট কার্ডেরই সীমা শেষ। এই পরিস্থিতিতে একটা ফ্ল্যাট বিক্রি করে ঋণ শোধ করার পর হাতে থাকল মাত্র ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মামার কাছ থেকে ধার করলাম ৫০ হাজার। সেই টাকা দিয়েই যন্ত্রপাতি অর্ডার করে এনে কাজ শুরু করা হলো।

অবশেষে আমরা বানালাম নিজেদের ডিজাইনে বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বৈদ্যুতিক গাড়ি। যার প্রতিটি ইঞ্চি তৈরি হয়েছে এই দেশের তরুণদের হাতে।

২০২২ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে দেশীয় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ‘পালকি মোটরস’.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিবিসির মহাপরিচালক ও বার্তাপ্রধান কেন পদত্যাগ করলেন, ট্রাম্পের তথ্যচিত্রে সমস্যাটা কোথায়

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং সংবাদ বিভাগের প্রধান ডেবোরাহ টারনেস গতকাল রোববার পদত্যাগ করেছেন। প্যানোরমা অনুষ্ঠানে প্রচারিত এক তথ্যচিত্রকে কেন্দ্র করে বিবিসি ব্যাপক বিতর্কের মধ্যে আছে। আর এর মধ্যেই তাঁরা দুজন পদত্যাগ করেছেন।

বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠানে প্রচারিত তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের একটি ভাষণ ভুলভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ট্রাম্পের ভাষণের আলাদা আলাদা অংশ সেখানে জোড়া দেওয়া হয়েছে এবং সেটি শুনে মনে হচ্ছে ট্রাম্প মানুষকে ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ করতে প্ররোচিত করছেন।

কর্মীদের কাছে পাঠানো ই–মেইলে ডেভি ও টারনেস দুজনই ভুলভ্রান্তি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বিবিসির অভ্যন্তরীণ একটি চিঠি ফাঁস হয়েছে। বিবিসির সম্পাদকীয় মান পর্যালোচনাবিষয়ক কমিটির সাবেক স্বাধীন উপদেষ্টা মাইকেল প্রেসকট চিঠিটি দিয়েছিলেন।

টিম ডেভি ও ডেবোরাহ টারনেস কে

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান টিম ডেভি। তিনি বিবিসির বিভিন্ন বিভাগ ও শাখার কার্যক্রম তদারক করতেন এবং এর সম্পাদকীয়, কার্যক্রম পরিচালনা ও অন্য সৃজনশীল কাজগুলোতে নেতৃত্ব দিতেন।

ডেভি যে বিবিসিতে নতুন মুখ ছিলেন, তা নয়। মহাপরিচালক হওয়ার আগে তিনি সাত বছর ধরে বিবিসি স্টুডিওসের প্রধান নির্বাহী পদে ছিলেন।

বিবিসিতে যোগদানের আগে প্রোক্টার অ্যান্ড গ্যাম্বল এবং পেপসিকোর মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন ডেভি।

আর ডেবোরাহ টারনেস ২০২২ সাল থেকে বিবিসি নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। যেখানে তিনি বিবিসি নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স প্রোগ্রামের তদারক করেন।

টিম ডেভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ