আমার বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার আগুনিয়াপাড়া গ্রামে। বাড়িতে সবকিছু প্রায় ঠিকঠাক চলছিল। অনেক পরিশ্রম আর যত্ন করে কাজটাও প্রায় শেষ করে এনেছিলাম। শুধু ক্লায়েন্টকে ডেলিভারি দেওয়া বাকি। এমন সময় হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে এল। শুরু হলো তুমুল ঝড়বৃষ্টি। বিদ্যুৎ চলে গেল। এদিকে দ্রুত কাজ জমা দিতে হবে, কিন্তু বিদ্যুতের আর দয়া হয় না। দুই দিন পর বিদ্যুৎ এল ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে ক্লায়েন্ট কাজটা ক্যানসেল করে দিয়েছেন। মনটা ভীষণ খারাপ হলো। যে কাজ নিয়ে এত পরিশ্রম, সেটিই পাঠানো গেল না।

 আমি একজন ফ্রিল্যান্সার। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং শেখাই। শুরুটা শহরে হলেও পরে গ্রামে ফিরে আসি। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় কারও সঙ্গে অনলাইনে, কারও সঙ্গে সরাসরি কাজের সূত্রে সম্পৃক্ত। এই অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছি—গ্রাম ও শহরের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির গভীর বৈষম্য আছে। কোথাও ইন্টারনেট এত ধীরগতির যে একটি ফাইল আপলোড করতেই চলে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা; কোথাও আবার বৃষ্টি বা ঝড়ের পর বিদ্যুৎ–সংযোগ ঠিক হতে লেগে যায় দু-তিন দিন। 

দুর্বল নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামো

গ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্বল ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো। একটু বৃষ্টি বা ঝড় হলেই কোথাও ফাইবার অপটিক লাইন কেটে যায়, কোথাও গাছ পড়ে পুরো এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে।

শহরে এসব সমস্যা এক দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু গ্রামে একই সমস্যা সমাধানে লেগে যায় দুই থেকে তিন দিন, কখনো–বা তারও বেশি। বিদ্যুৎ না থাকলে মুঠোফোন টাওয়ারও বন্ধ হয়ে যায়। তখন পুরো গ্রাম নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে চলে যায়। এতে অনলাইন ক্লাস, মোবাইল ব্যাংকিং, সাধারণ ব্যাংকিং বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ—সব থেমে যায়। 

কোথাও কোথাও মুঠোফোন টাওয়ারে ব্যাকআপ জেনারেটর থাকলেও সেসবের রক্ষণাবেক্ষণ দুর্বল। এ কারণে দীর্ঘ সময় নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকলে মানুষ পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই বাস্তবতা শুধু ইন্টারনেটের নয়, বরং পুরো ডিজিটাল জীবনের সীমাবদ্ধতাকেই সামনে নিয়ে আসে।

গ্রামের নারীরা তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিবিসির মহাপরিচালক ও বার্তাপ্রধান কেন পদত্যাগ করলেন, ট্রাম্পের তথ্যচিত্রে সমস্যাটা কোথায়

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং সংবাদ বিভাগের প্রধান ডেবোরাহ টারনেস গতকাল রোববার পদত্যাগ করেছেন। প্যানোরমা অনুষ্ঠানে প্রচারিত এক তথ্যচিত্রকে কেন্দ্র করে বিবিসি ব্যাপক বিতর্কের মধ্যে আছে। আর এর মধ্যেই তাঁরা দুজন পদত্যাগ করেছেন।

বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠানে প্রচারিত তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের একটি ভাষণ ভুলভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ট্রাম্পের ভাষণের আলাদা আলাদা অংশ সেখানে জোড়া দেওয়া হয়েছে এবং সেটি শুনে মনে হচ্ছে ট্রাম্প মানুষকে ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ করতে প্ররোচিত করছেন।

কর্মীদের কাছে পাঠানো ই–মেইলে ডেভি ও টারনেস দুজনই ভুলভ্রান্তি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বিবিসির অভ্যন্তরীণ একটি চিঠি ফাঁস হয়েছে। বিবিসির সম্পাদকীয় মান পর্যালোচনাবিষয়ক কমিটির সাবেক স্বাধীন উপদেষ্টা মাইকেল প্রেসকট চিঠিটি দিয়েছিলেন।

টিম ডেভি ও ডেবোরাহ টারনেস কে

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান টিম ডেভি। তিনি বিবিসির বিভিন্ন বিভাগ ও শাখার কার্যক্রম তদারক করতেন এবং এর সম্পাদকীয়, কার্যক্রম পরিচালনা ও অন্য সৃজনশীল কাজগুলোতে নেতৃত্ব দিতেন।

ডেভি যে বিবিসিতে নতুন মুখ ছিলেন, তা নয়। মহাপরিচালক হওয়ার আগে তিনি সাত বছর ধরে বিবিসি স্টুডিওসের প্রধান নির্বাহী পদে ছিলেন।

বিবিসিতে যোগদানের আগে প্রোক্টার অ্যান্ড গ্যাম্বল এবং পেপসিকোর মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন ডেভি।

আর ডেবোরাহ টারনেস ২০২২ সাল থেকে বিবিসি নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। যেখানে তিনি বিবিসি নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স প্রোগ্রামের তদারক করেন।

টিম ডেভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ