প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “আমাদের কাছে এটা পরিষ্কার হতে হবে যে আমরা আর পরনির্ভর হতে চাই না। আমাদেরকে স্বনির্ভর হতে হবে। এখন যেহেতু পরনির্ভর হয়ে আছি, এর থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের হওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এর বাইরে আর কোনো কথা নাই।”

স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণকে মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে প্রণীত মসৃণ উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্য গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

জুলাই সনদ: একমত গণভোটে, অনিশ্চয়তা বাস্তবায়নে

‘শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’

বুধবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতে এই সভায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।

পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বৈঠকের বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরেন।

স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে বলেন, “এজন্য আমাদের অভ্যাস পাল্টাতে হবে। আত্মনির্ভর হতে গেলে বুদ্ধি খাটাতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে, লড়াই করতে হবে। এটা কঠিন হলেও এ কাজে আনন্দ আছে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশের কথা বলি, নতুন বাংলাদেশ মানেই হলো স্বনির্ভর বাংলাদেশ।”

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই জাতির যথেষ্ট ক্ষমতা আছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। তারুণ্য ও সৃজনশীলতা আমাদের শক্তি। এই শক্তি আর সুযোগ আমাদের আছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। আত্মনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলে জাতিকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে হবে। আমরা আর দাসত্বের মধ্যে থাকতে চাইনা।”

সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, কৃষি উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসের।

ঢাকা/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ম হ ম মদ ইউন স আম দ র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

চাকসু: ছাত্রদল-শিবিরের পাল্টাপাল্টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে একইদিনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির।

বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুর ১টায় চাকসু নির্বাচন কমিশনে প্রথম লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেয় ছাত্রদল। এরপর বিকেল ৫টায় লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেয় ছাত্রশিবির।

আরো পড়ুন:

চাকসু: ছাত্রদলের ৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা

চাকসু: ছাত্রশিবিরের ১২ মাসে ৩৩ ইশতেহার

ছাত্রদলের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বুধবার ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. ইব্রাহীম রনি দুপুরে শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনের (নতুন কলা ভবন) ইতিহাস বিভাগের ৩২৩ নম্বর কক্ষে প্রায় ২০ মিনিট ধরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে প্রচার চালিয়েছেন, যা চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। 

অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “শিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। এ নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। তিনি প্রায় ২০ মিনিট ধরে শ্রেণীকক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও উপস্থিত শিক্ষকরা সেটাকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।”

তিনি বলেন, “চবিতে যেন বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হয়। অভিযোগের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আমরা নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাচ্ছি।”

তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে শিবিরের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম রনি বলেন, “আমি আমার বিভাগের কাজে গিয়েছিলাম, নির্বাচনী কোনো প্রচার চালাতে যাইনি। সেখানে কিছু শিক্ষার্থী আমাদের অ্যালামনাইয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল, আমি শুধু সেটার উত্তর দিয়েছি। এছাড়া, অভিযোগপত্রে যে ২০ মিনিট বক্তব্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি মাত্র কয়েক মিনিট ছিলাম সেখানে।”

অপরদিকে, ছাত্রশিবিরের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বুধবার আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের এলএলএম শ্রেণীকক্ষে অনুষ্ঠিত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস চলাকালে আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম উদ্দিন (ছাত্রদলের কর্মী) ক্লাসে প্রবেশ করে নির্বাচনী প্রচার চালান।

এ সময় তিনি চাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারমূলক বক্তব্য প্রদান ও লিফলেট বিতরণ করেন। এছাড়া অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক ও উত্তেজনাকর মন্তব্য করেন, যা চলমান পাঠদান কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে।

অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, ওই ফ্যাকাল্টির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করলে ঘটনার যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যাবে। এছাড়াও, আমাদের কাছে ঘটনাটির ভিডিও প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে, যা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

অভিযোগের ব্যাপারে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, “আইন অনুষদে আমাদের প্রার্থীরা যখন প্রচার চালাতে যায়, সেখানে তারা একজন ছাত্রদল কর্মীকে ক্লাসে ঢুকে লিফলেট নিয়ে ছাত্রদলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালাতে দেখে। আমাদের কাছে এর ভিডিওসহ প্রমাণ আছে।”

তিনি বলেন, “শুধু প্রচার নয়, সেখানে তিনি বিভিন্ন দল ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও উস্কানিমূলক বক্তব্যও দিয়েছে। এ নিয়ে আমরা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। আশা করি, নির্বাচন কমিশন এর যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।”

অভিযোগের বিষয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি নাঈম উদ্দিন নামে ছাত্রদলের কাউকে চিনতে পারছি না। তবে যে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক, আমরা এটাই চাই।”

এ নিয়ে চাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, “আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে তাদের দুটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। আমরা অভিযোগপত্রটি আচরণবিধি লঙ্ঘন কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছি। অভিযোগের যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

চাকসু নির্বাচনী আচরণবিধিমালার ৪ এর (ঙ) বিধিতে নির্বাচনী প্রচারের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, প্রতিটি অনুষদের যেখানে ক্লাস-পরীক্ষা হয়, সেখানে কিংবা আশে পাশে সভা সমাবেশ করা যাবে না। ক্লাস-পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়- এমন কোনো কাজ করা যাবে না। যেমন- কোনো ধরনের সাউন্ড সিস্টেম বা মাইক ব্যবহার করা যাবে না। সেদিকে সব প্রার্থী বা তার সমর্থকদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ