জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের বক্তব্যের সূত্র ধরে দেশের রাজনীতিতে এখন অন্যতম আলোচিত বিষয় ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান)’। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের সামনে এ প্রসঙ্গ তুললেন লেখক–অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। রসিকতা করে তিনি বলেছেন, ‘সেফ এক্সিট’ আর নেই কারোরই।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমে জুলাই ও তারপর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সলিমুল্লাহ খান। একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে পিআইবির পাঁচটি প্রকাশনার (‘তারিখে জুলাই’, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিতা’, ‘নিরীক্ষা: অভ্যুত্থান মিডিয়া বয়ান’, ‘যে সাংবাদিকদের হারিয়েছি’ এবং ‘ঘটনাপঞ্জি ২০২৪’) প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মাহফুজ আলমের আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে সলিমুল্লাহ খান রসিকতা করে বলেন, সেফ এক্সিট আর নেই কারোরই। এ সময় মাহফুজের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘মাহফুজ, একটি রাজনৈতিক দলের নেতা বলছেন, মৃত্যু ছাড়া আর কোনো সেফ এক্সিট নেই।’ এরপর তিনি বলেন, ‘কম মানুষ তো প্রাণ দেয়নি। এত মানুষ যে প্রাণ দিল, এগুলো কি সংখ্যামাত্র? এগুলো একেকটা পরিবার।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচার নিয়ে গত মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘তারা বলেছে, এরা তালেবান এবং এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা এমনটাও বলেছে, আমিও একজন তালেবান। আমার দাড়ি নেই, মাত্রই তা বাড়িতে রেখে এসেছি।’ অধ্যাপক ইউনূসের এ বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘এটা না বললেই তিনি পারতেন।’
‘সেকেন্ড রিপাবলিক’–এর কথা মাহফুজ আলমরা বলা শুরু করলেও পরে বন্ধ করে দিয়েছেন, এ কথাও বক্তব্যে উল্লেখ করেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক বলাটা যেন একটা পাপ। মোটেও না। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরে তিন-চারবার সংবিধান বদলেছে। কিন্তু আমরা এখনো বাহাত্তরের সংবিধানকে পুনরুদ্ধার করার সংগ্রামে এত দৃঢ় পায়ে দাঁড়িয়ে আছি, বাংলাদেশ যেন বঙ্গোপসাগরে পড়ে যাবে এই সংবিধান পরিবর্তন করা হলে। সংবিধান তো পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কিন্তু আরেকটা নতুন সংবিধান নিতে আপনি এতই ভয় পাচ্ছেন যে এটাকে সংশোধন, পুনরুদ্ধারের কথা বলছেন। রাজবংশ ফিরিয়ে আনতে আর কয় দিন! বাংলাদেশকে রাজতন্ত্র ঘোষণা করে দিলে আমি বিস্মিত হব না।’
আলোচনা সভায় সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও চীনের বিপ্লবের ইতিহাস পড়লে দেখা যাবে, সেখানে বিপ্লবের পরে শত শত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তার তুলনায় আমাদের দেশে বিপ্লব-পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ অনেক কম। দয়া করে আমাকে হত্যাকাণ্ডের উৎসাহদাতা হিসেবে প্রচার করবেন না।’ তিনি এ কথাও বলেন, গত এক বছরে বাংলাদেশে যা দেখা গেছে, তা উৎসাহব্যঞ্জক নয়।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে নানা প্রচারের বিষয়েও কথা বলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন, এই বিপ্লব হয়েছে সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেক্যুলারিজম মানে যদি বর্বরতা, অসভ্যতা বা দেশের অর্থ পাচার হয়, তাহলে আমি সেই সেক্যুলারিজম চাইব কেন?’
সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, পৃথিবীতে কোনো বিপ্লবই ষোলো আনা সফল হয় না। বিপ্লবে কিন্তু নানা রূপান্তর হয়। বিপ্লব স্মৃতি আকারেও ফেরত আসে। যে ঘটনা একবার ঘটে গেছে, এটা আর না করা যাবে না।
অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান ছিলেন পিআইবির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরদৌস আজিম। সলিমুল্লাহ খান ছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ এবং লেখক ও গবেষক সাইমুম পারভেজ। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিআইবির তথ্য ও গবেষণা কর্মকর্তা সহুল আহমেদ মুন্না। পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনার পাশাপাশি এই অনুষ্ঠানে পিআইবির ফ্যাক্টচেকিং উদ্যোগ ‘বাংলা ফ্যাক্টের’ ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করেন তথ্য উপদেষ্টা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ফ এক স ট অন ষ ঠ ন প আইব র উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
আসন্ন নির্বাচনে কমনওয়েলথের পূর্ণ সমর্থন চাই: প্রধান উপদেষ্টা
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের জন্য কমনওয়েলথের পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বচওয়ের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ সমর্থন চান।
আরো পড়ুন:
জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
এ সময়ে তিনি বলেন, “আমাদের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে আপনারা সমর্থন দেবেন বলে আশা করি।”
তিনি কমনওয়েলথ মহাসচিবকে বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রতি গভীর আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
জবাবে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেন, “কমনওয়েলথ বাংলাদেশের নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী রূপান্তরের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমর্থন দেবে।”
তিনি বলেন, “কমনওয়েলথের ৫৬টি দেশ-যেখানে জি-৭ ও জি-২০-এর সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত-যাদের হাতে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এই দেশগুলো একে অপরকে শক্তিশালী করতে সেই সম্পদ ব্যবহার করতে পারে।”
মহাসচিব আরো জানান, তিনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি যোগ করেন, “দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুব আশাবাদী।”
মহাসচিব নিশ্চিত করেন, “আসন্ন নির্বাচনের আগে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর জন্য কমনওয়েলথ প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
বৈঠকে দুই নেতা তরুণদের ক্ষমতায়ন, উদ্যোক্তা তৈরি, সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টি এবং বেকারত্ব, কার্বন নির্গমন ও বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্য নিয়ে তিন-শূন্য ভিশন বাস্তবায়ন সম্পর্কেও আলোচনা করেন। খবর বাসসের।
ঢাকা/এসবি