যে সময়ে সাইবার হামলা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি, সেই সময়ে সরকারের সাইবার নিরাপত্তা দেখভালের একমাত্র প্রতিষ্ঠান বিজিডি ই-গভ সার্টের কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরামর্শকদের তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ, অর্থছাড় না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার ও টুলসের লাইসেন্স নবায়ন করা যায়নি। এর ফলে যে শুধু প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ও সরকারি ডেটা সেন্টারের নিরাপত্তা গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক।

বিজিডি ই-গভ সার্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর এর কাজের পরিসর বাড়ে। ২০১৯ সাল থেকে এটি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) স্বতন্ত্র প্রকল্প হিসেবে কাজ করছিল। গত জুন মাসে এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দুই মাস পর আগস্টে আবার মেয়াদ বাড়ানো হলেও অর্থ বরাদ্দ হয়নি। অর্থবছর শুরুর পর মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে টাকা ছাড়তে দেরি হচ্ছে—এই সরল যুক্তি প্রকল্পের পরিচালক দিলেও, একটি অত্যাবশ্যকীয় ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে এই দীর্ঘসূত্রতা প্রশাসনিক দুর্বলতার চরম উদাহরণ।

চলতি বছর জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের বেতন না পাওয়ায় অন্তত ৩৫ জন পরামর্শকের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা নিরীক্ষা ও ঝুঁকি নজরদারির জন্য ব্যবহৃত অত্যাধুনিক সফটওয়্যার ও টুলের লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় সরকারি সংস্থায় আইটি নিরীক্ষা এখন কার্যত বন্ধ। কর্মকর্তারা বলছেন, এখন কোনো সংস্থা অডিট চাইলে আগামী ছয় মাসেও তা করা সম্ভব নয়।

সাইবার নিরাপত্তা কেবল প্রযুক্তির বিষয় নয়, এটি সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। সামনে নির্বাচনসহ নানা ধরনের সাইবার ঝুঁকির আশঙ্কা থাকবে। অথচ এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটিকে এখনো প্রকল্পনির্ভর করে রাখা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (এনসার্ট) গঠনের কথা বলা হলেও তা হয়নি। সরকারি প্রতিবেদনে এই প্রকল্পের কাজকে ‘অত্যন্ত বিশেষায়িত ও অত্যাবশ্যকীয়’ উল্লেখ করে এর কার্যক্রম ও জনবলকে বিসিসির রাজস্ব খাতে নেওয়া এবং সংস্থায় অঙ্গীভূত হওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। অথচ এই পরামর্শগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।

বিজিডি ই-গভ সার্টের অচলাবস্থা সরকারের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা। লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনার পর যদি সরকারের সাইবার নিরাপত্তা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের এই বেহাল হয়, তবে তা কেবল হতাশার নয়, দায়িত্বে অবহেলারও পরিচয়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিজিডি ই-গভ সার্ট নিয়ে সংকট অনতিবিলম্বে নিরসন করা হোক। 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ঘোড়া

ছোট্ট পুমুকেলকে দেখে যে কেউ অবাক হবেন—এটি ঘোড়া, গাধা, কুকুর নাকি পুতুল, তা বুঝতে কারও কারও কয়েক সেকেন্ড সময়ও লেগে যেতে পারে।

পুমুকেলের বাস জার্মানিতে। এটি দেখে আপনার যা–ই মনে হোক, পুমুকেল কিন্তু একটি জীবন্ত ঘোড়া। বাদামি ও উজ্জ্বল সাদা রঙের ঘোড়াটির ঘাড়ে-মাথায় বেশ বড় বড় লোম। সেগুলো অনেকটা চুলের মতো ঝুলে থাকে। এ কারণে হঠাৎ দেখায় সেটিকে একটি পুতুল বলে মনে হতে পারে।

তবে এসবের কিছুই পুমুকেলের মূল বৈশিষ্ট্য নয়। প্রাণীটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সেটির উচ্চতা। পুমুকেলের উচ্চতা মাত্র ২১ দশমিক ১ ইঞ্চি। নিজের এ উচ্চতার কারণে প্রাণীটি এখন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মালিক। পুমুকেল এখন সবচেয়ে কম উচ্চতার জীবন্ত ঘোড়া।

২০২০ সালে ক্যারোলা ভাইডেমান নামের এক নারী পুমুকেলকে পালন করতে নেন। সে সময় এটির বয়স ছিল মাত্র ৫ মাস, উচ্চতা মাত্র ১৮ ইঞ্চি।

পুমুকেলকে প্রথমবার দেখার দিনের কথা এখনো স্পষ্ট মনে আছে ক্যারোলার। তিনি একটি থেরাপি ঘোড়া খুঁজছিলেন। তখন এক বন্ধু তাঁকে পুমুকেলের কথা জানান এবং তিনি পুমুকেলকে দেখতে যান।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষকে ক্যারোলা বলেন, ‘আমি গাড়ি চালিয়ে সেখানে গিয়ে ওকে দেখি এবং সত্যিই, পুরোপুরি ধাক্কা খাই। এর আগে আমি এত ছোট ঘোড়া কখনো দেখিনি।’

এর আগে যে ঘোড়া এই রেকর্ডের মালিক ছিল, সেটির চেয়ে পুমুকেলের উচ্চতা দেড় ইঞ্চি কম।

পুমুকেল একটি প্রশিক্ষিত ঘোড়া। প্রাণীটি থেরাপি দেওয়ার কাজ করে। এ জন্য সেটিকে নিয়মিত বিভিন্ন নার্সিং হোম, হাসপাতাল, স্কুল ও প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য নানা প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়।

ক্যারোলা বলেন, ‘সে খুবই মিষ্টি স্বভাবের। সে শিশুদের সঙ্গে অবিশ্বাস্য রকম ভালো আচরণ করে, খোঁচাখুঁচি ও আলিঙ্গন পছন্দ করে। পুমুকেল মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতে খুবই পছন্দ করে।’

পুমুকেল কোনো ছোট আকারের ঘোড়ার প্রজাতি নয়। ক্যারোল বলেন, পুমুকেল স্বাভাবিক আকারের ঘোড়ার প্রজাতি। প্রকৃতিই প্রাণীটিকে এই আকার দিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ