তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা (এসএমপি) পরিচালনাকারী হিসেবে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) দেওয়া চিঠিতে গ্রামীণফোন বলেছে, এসব নির্দেশনা উচ্চ আদালতের রায় ও এসএমপি নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীন বিটিআরসি ২০১৮ সালে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা প্রবিধানমালা জারি করে। এতে কোনো মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকসংখ্যা, রাজস্ব অথবা তরঙ্গ—এ তিন ক্ষেত্রের একটিতে ৪০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যাধারী হলে তাকে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণার বিধান করা হয়।

সে হিসাবে গ্রামীণফোন গ্রাহকসংখ্যা ও অর্জিত বার্ষিক রাজস্বের দিক দিয়ে ৪০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যাধারী। প্রবিধানমালার আওতায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর ঘোষণা করে বিটিআরসি।

এসএমপি ঘোষণার পর গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসি কিছু নির্দেশনা (বিধিনিষেধ) জারি করে। এগুলোর মধ্যে আছে নতুন কোনো সেবার ক্যাম্পেইনের আগে অনুমোদন নেওয়া; এমএনপির (নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল) ‘লক ইন পিরিয়ড’ ৬০ দিন নির্ধারণ, যা অন্যদের ক্ষেত্রে ৯০ দিন; অপারেটরদের মধ্যে আন্তকলের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন প্রতি মিনিটে ৭ পয়সা পাবে, যেখানে অন্য অপারেটরা পাবে ১০ পয়সা। এসব নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে গিয়েছিল গ্রামীণফোন।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীন বিটিআরসি ২০১৮ সালে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা প্রবিধানমালা জারি করে। প্রবিধানমালার আওতায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারটের গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর ঘোষণা করে বিটিআরসি। এসএমপি ঘোষণার পর গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসি কিছু নির্দেশনা (বিধিনিষেধ) জারি করে।

বিষয়গুলো নিয়ে চলতি বছরের মে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিটিআরসিকে গ্রামীণফোন চিঠি দেয়। এসব চিঠিতে গ্রামীণফোন জানায়, ২০২০ সালের জুনে আরোপিত নির্দেশনাগুলো এসএমপি নীতি ও হাইকোর্টের রায়ের লঙ্ঘন।

নীতিমালার ৯ ধারায় বলা আছে, কোনো এসএমপির কার্যক্রমের ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা কমলে বা কমার আশঙ্কা দেখা দিলে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। গ্রামীণফোন বলছে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো বিশ্লেষণ বা প্রতিবেদন তাদের জানানো হয়নি।

আরও পড়ুনজিপিকে 'আটকাতে' নতুন বিধিনিষেধ বিটিআরসির২১ জুন ২০২০

চিঠিতে গ্রামীণফোন আরও বলেছে, হাইকোর্ট বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আগের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নীতিমালার ৯ ধারার আলোকে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু তা পরিপালন করা হয়নি।

অ্যাসিমেট্রিক কল টার্মিনেশন রেট-সংক্রান্ত নির্দেশনা (মোবাইল অপারেটরদের আন্তকলে ভিন্ন ভিন্ন চার্জ নির্ধারণ) নিয়ে গ্রামীণফোন চিঠিতে উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই নীতির ফলে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই নন-এসএমপি অপারেটরদের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে গেছে। এতে শুধু গ্রামীণফোনেরই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে; পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব হারিয়েছে।

সঠিক প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে, এমন সুপরিকল্পিত এসএমপি নীতিমালা তাঁরা সমর্থন করেন। বর্তমান এসএমপি নীতিমালাটি পুনর্বিবেচনার জন্য তাঁরা বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সবার জন্য ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত হয়, এসএমপি অপারেটরের অগ্রগতি ও উদ্ভাবন ব্যাহত না হয়।তানভীর মোহাম্মদ, গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার

গ্রামীণফোনের দাবি, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত নন-এসএমপি অপারেটররা প্রায় ৬৯০ কোটি টাকা কেটে রেখেছে, যা গ্রামীণফোনের প্রাপ্য ছিল। এর ফলে সরকার প্রায় ২৭৬ কোটি টাকার কর ও ভ্যাট হারিয়েছে।

হাইকোর্টের রায় ও এসএমপি নীতির ৯ ধারার আলোকে নির্দেশনাগুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে গ্রামীণফোন। পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান নির্দেশনাগুলো স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছে তারা।

আরও পড়ুনরেকর্ড ৪,৪৫৬ কোটি টাকা লভ্যাংশ দিচ্ছে গ্রামীণফোন০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, সঠিক প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে, এমন সুপরিকল্পিত এসএমপি নীতিমালা তাঁরা সমর্থন করেন। বর্তমান এসএমপি নীতিমালাটি পুনর্বিবেচনার জন্য তাঁরা বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সবার জন্য ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত হয়, এসএমপি অপারেটরের অগ্রগতি ও উদ্ভাবন ব্যাহত না হয়।

অ্যাসিমেট্রিক ইন্টারকানেকশন রেট কার্যত দক্ষ অপারেটরের অর্জিত অর্থ কম দক্ষ অপারেটরদের ভর্তুকি দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তানভীর মোহাম্মদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে দক্ষতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিবর্তে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, যা প্রতিযোগিতামূলক বাজার পরিবেশকে ব্যাহত করছে। তাই একটি সুষ্ঠু বাজার বিশ্লেষণ না হওয়া পর্যন্ত ইন্টারকানেকশন চার্জে এ ধরনের বৈষম্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা।

এসএমপি ঘোষণার পর গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসি কিছু নির্দেশনা (বিধিনিষেধ) জারি করে। এগুলোর মধ্যে আছে নতুন কোনো সেবার ক্যাম্পেইনের আগে অনুমোদন নেওয়া। এমএনপির (নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল) ‘লক ইন পিরিয়ড’ ৬০ দিন নির্ধারণ, যা অন্যদের ক্ষেত্রে ৯০ দিন। অপারেটরদের মধ্যে আন্তকলের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন প্রতি মিনিটে ৭ পয়সা পাবে, যেখানে অন্য অপারেটরা পাবে ১০ পয়সা। এসব নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে গিয়েছিল গ্রামীণফোন।

গত আগস্টে বিটিআরসির ২৯৮তম কমিশন সভায় এসএমপি ও নন-এসএমপি অপারেটরদের মধ্যকার কল টার্মিনেশন রেট নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের ১৬ জুলাই থেকে রবি ও বাংলালিংকের ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এবং টেলিটকের ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোবাইল টার্মিনেশন রেট (এমটিআর—অন্য নেটওয়ার্ক থেকে আসা কল চার্জ) খাতে ৭০০ কোটি ৩৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৮৭ টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে ২২০ কোটি টাকা অব্যবহৃত পড়ে আছে।

আরও পড়ুননিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোন ৩৫ লাখ গ্রাহক হারিয়েছে০২ জানুয়ারি ২০২৩

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি জানায়, নন-এসএমপি অপারেটররা এসএমপি নীতি অনুযায়ী এমটিআর থেকে ৩ পয়সা/মিনিট হারে পাওয়া অর্থের আলাদা হিসাব রাখবে। তারা এই অর্থ দুর্গম, প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ব্যয় করবে। বছরের জানুয়ারি ও জুলাই মাসে এসব অর্থের আয়-ব্যয়ের হিসাব তারা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবে।

টেলিযোগাযোগ খাতে মাত্রই একটি বড় পরিবর্তনের নীতিমালা হয়েছে। এর অধীন নির্দেশিকা (গাইডলাইন) হবে। এরপর এসএমপির বিষয়ে দেখতে হবে যে বাজার প্রতিযোগিতায় কী হচ্ছে। এসএমপির অধীন অন্তত ২০ ধরনের বিধিনিষেধ আছে। যার মধ্যে তিনটি গ্রামীণফোনের ওপরে কার্যকর। বিটিআরসি যখন এগুলো পর্যালোচনা করতে যাবে, তখন বিশ্লেষণ করবে, এই তিনটি তুলে নেওয়া হবে, নাকি আরও কিছু আরোপ করা হবে।মেজর জেনারেল (অব.

) মো. এমদাদ উল বারী, বিটিআরসি চেয়ারম্যান

গ্রামীণফোনের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী প্রথম আলোকে বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে মাত্রই একটি বড় পরিবর্তনের নীতিমালা হয়েছে। এর অধীন নির্দেশিকা (গাইডলাইন) হবে। এরপর এসএমপির বিষয়ে দেখতে হবে যে বাজার প্রতিযোগিতায় কী হচ্ছে। এসএমপির অধীন অন্তত ২০ ধরনের বিধিনিষেধ আছে, যার মধ্যে ৩টি গ্রামীণফোনের ওপরে কার্যকর। বিটিআরসি যখন এগুলো পর্যালোচনা করতে যাবে, তখন বিশ্লেষণ করবে, এই তিনটি তুলে নেওয়া হবে, নাকি আরও কিছু আরোপ করা হবে।

আরও পড়ুনগ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার০২ জানুয়ারি ২০২৩আরও পড়ুনগ্রামীণফোন একাডেমি দিচ্ছে তরুণদের দক্ষতা বিকাশের সুযোগ০৪ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহ ব ন জ ন য় ছ ব ট আরস র এসএমপ র ন এসএমপ র জন য র পর ব

এছাড়াও পড়ুন:

বিধিনিষেধ প্রত্যাহার চায় গ্রামীণফোন, বিটিআরসিকে চিঠি

তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা (এসএমপি) পরিচালনাকারী হিসেবে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) দেওয়া চিঠিতে গ্রামীণফোন বলেছে, এসব নির্দেশনা উচ্চ আদালতের রায় ও এসএমপি নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীন বিটিআরসি ২০১৮ সালে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা প্রবিধানমালা জারি করে। এতে কোনো মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকসংখ্যা, রাজস্ব অথবা তরঙ্গ—এ তিন ক্ষেত্রের একটিতে ৪০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যাধারী হলে তাকে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণার বিধান করা হয়।

সে হিসাবে গ্রামীণফোন গ্রাহকসংখ্যা ও অর্জিত বার্ষিক রাজস্বের দিক দিয়ে ৪০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যাধারী। প্রবিধানমালার আওতায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর ঘোষণা করে বিটিআরসি।

এসএমপি ঘোষণার পর গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসি কিছু নির্দেশনা (বিধিনিষেধ) জারি করে। এগুলোর মধ্যে আছে নতুন কোনো সেবার ক্যাম্পেইনের আগে অনুমোদন নেওয়া; এমএনপির (নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল) ‘লক ইন পিরিয়ড’ ৬০ দিন নির্ধারণ, যা অন্যদের ক্ষেত্রে ৯০ দিন; অপারেটরদের মধ্যে আন্তকলের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন প্রতি মিনিটে ৭ পয়সা পাবে, যেখানে অন্য অপারেটরা পাবে ১০ পয়সা। এসব নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে গিয়েছিল গ্রামীণফোন।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীন বিটিআরসি ২০১৮ সালে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা প্রবিধানমালা জারি করে। প্রবিধানমালার আওতায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারটের গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর ঘোষণা করে বিটিআরসি। এসএমপি ঘোষণার পর গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসি কিছু নির্দেশনা (বিধিনিষেধ) জারি করে।

বিষয়গুলো নিয়ে চলতি বছরের মে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিটিআরসিকে গ্রামীণফোন চিঠি দেয়। এসব চিঠিতে গ্রামীণফোন জানায়, ২০২০ সালের জুনে আরোপিত নির্দেশনাগুলো এসএমপি নীতি ও হাইকোর্টের রায়ের লঙ্ঘন।

নীতিমালার ৯ ধারায় বলা আছে, কোনো এসএমপির কার্যক্রমের ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা কমলে বা কমার আশঙ্কা দেখা দিলে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। গ্রামীণফোন বলছে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো বিশ্লেষণ বা প্রতিবেদন তাদের জানানো হয়নি।

আরও পড়ুনজিপিকে 'আটকাতে' নতুন বিধিনিষেধ বিটিআরসির২১ জুন ২০২০

চিঠিতে গ্রামীণফোন আরও বলেছে, হাইকোর্ট বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আগের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নীতিমালার ৯ ধারার আলোকে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু তা পরিপালন করা হয়নি।

অ্যাসিমেট্রিক কল টার্মিনেশন রেট-সংক্রান্ত নির্দেশনা (মোবাইল অপারেটরদের আন্তকলে ভিন্ন ভিন্ন চার্জ নির্ধারণ) নিয়ে গ্রামীণফোন চিঠিতে উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই নীতির ফলে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই নন-এসএমপি অপারেটরদের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে গেছে। এতে শুধু গ্রামীণফোনেরই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে; পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব হারিয়েছে।

সঠিক প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে, এমন সুপরিকল্পিত এসএমপি নীতিমালা তাঁরা সমর্থন করেন। বর্তমান এসএমপি নীতিমালাটি পুনর্বিবেচনার জন্য তাঁরা বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সবার জন্য ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত হয়, এসএমপি অপারেটরের অগ্রগতি ও উদ্ভাবন ব্যাহত না হয়।তানভীর মোহাম্মদ, গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার

গ্রামীণফোনের দাবি, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত নন-এসএমপি অপারেটররা প্রায় ৬৯০ কোটি টাকা কেটে রেখেছে, যা গ্রামীণফোনের প্রাপ্য ছিল। এর ফলে সরকার প্রায় ২৭৬ কোটি টাকার কর ও ভ্যাট হারিয়েছে।

হাইকোর্টের রায় ও এসএমপি নীতির ৯ ধারার আলোকে নির্দেশনাগুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে গ্রামীণফোন। পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান নির্দেশনাগুলো স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছে তারা।

আরও পড়ুনরেকর্ড ৪,৪৫৬ কোটি টাকা লভ্যাংশ দিচ্ছে গ্রামীণফোন০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, সঠিক প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে, এমন সুপরিকল্পিত এসএমপি নীতিমালা তাঁরা সমর্থন করেন। বর্তমান এসএমপি নীতিমালাটি পুনর্বিবেচনার জন্য তাঁরা বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সবার জন্য ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত হয়, এসএমপি অপারেটরের অগ্রগতি ও উদ্ভাবন ব্যাহত না হয়।

অ্যাসিমেট্রিক ইন্টারকানেকশন রেট কার্যত দক্ষ অপারেটরের অর্জিত অর্থ কম দক্ষ অপারেটরদের ভর্তুকি দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তানভীর মোহাম্মদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে দক্ষতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিবর্তে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, যা প্রতিযোগিতামূলক বাজার পরিবেশকে ব্যাহত করছে। তাই একটি সুষ্ঠু বাজার বিশ্লেষণ না হওয়া পর্যন্ত ইন্টারকানেকশন চার্জে এ ধরনের বৈষম্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা।

এসএমপি ঘোষণার পর গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসি কিছু নির্দেশনা (বিধিনিষেধ) জারি করে। এগুলোর মধ্যে আছে নতুন কোনো সেবার ক্যাম্পেইনের আগে অনুমোদন নেওয়া। এমএনপির (নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল) ‘লক ইন পিরিয়ড’ ৬০ দিন নির্ধারণ, যা অন্যদের ক্ষেত্রে ৯০ দিন। অপারেটরদের মধ্যে আন্তকলের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন প্রতি মিনিটে ৭ পয়সা পাবে, যেখানে অন্য অপারেটরা পাবে ১০ পয়সা। এসব নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে গিয়েছিল গ্রামীণফোন।

গত আগস্টে বিটিআরসির ২৯৮তম কমিশন সভায় এসএমপি ও নন-এসএমপি অপারেটরদের মধ্যকার কল টার্মিনেশন রেট নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের ১৬ জুলাই থেকে রবি ও বাংলালিংকের ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এবং টেলিটকের ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোবাইল টার্মিনেশন রেট (এমটিআর—অন্য নেটওয়ার্ক থেকে আসা কল চার্জ) খাতে ৭০০ কোটি ৩৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৮৭ টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে ২২০ কোটি টাকা অব্যবহৃত পড়ে আছে।

আরও পড়ুননিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোন ৩৫ লাখ গ্রাহক হারিয়েছে০২ জানুয়ারি ২০২৩

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি জানায়, নন-এসএমপি অপারেটররা এসএমপি নীতি অনুযায়ী এমটিআর থেকে ৩ পয়সা/মিনিট হারে পাওয়া অর্থের আলাদা হিসাব রাখবে। তারা এই অর্থ দুর্গম, প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ব্যয় করবে। বছরের জানুয়ারি ও জুলাই মাসে এসব অর্থের আয়-ব্যয়ের হিসাব তারা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবে।

টেলিযোগাযোগ খাতে মাত্রই একটি বড় পরিবর্তনের নীতিমালা হয়েছে। এর অধীন নির্দেশিকা (গাইডলাইন) হবে। এরপর এসএমপির বিষয়ে দেখতে হবে যে বাজার প্রতিযোগিতায় কী হচ্ছে। এসএমপির অধীন অন্তত ২০ ধরনের বিধিনিষেধ আছে। যার মধ্যে তিনটি গ্রামীণফোনের ওপরে কার্যকর। বিটিআরসি যখন এগুলো পর্যালোচনা করতে যাবে, তখন বিশ্লেষণ করবে, এই তিনটি তুলে নেওয়া হবে, নাকি আরও কিছু আরোপ করা হবে।মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী, বিটিআরসি চেয়ারম্যান

গ্রামীণফোনের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী প্রথম আলোকে বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে মাত্রই একটি বড় পরিবর্তনের নীতিমালা হয়েছে। এর অধীন নির্দেশিকা (গাইডলাইন) হবে। এরপর এসএমপির বিষয়ে দেখতে হবে যে বাজার প্রতিযোগিতায় কী হচ্ছে। এসএমপির অধীন অন্তত ২০ ধরনের বিধিনিষেধ আছে, যার মধ্যে ৩টি গ্রামীণফোনের ওপরে কার্যকর। বিটিআরসি যখন এগুলো পর্যালোচনা করতে যাবে, তখন বিশ্লেষণ করবে, এই তিনটি তুলে নেওয়া হবে, নাকি আরও কিছু আরোপ করা হবে।

আরও পড়ুনগ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার০২ জানুয়ারি ২০২৩আরও পড়ুনগ্রামীণফোন একাডেমি দিচ্ছে তরুণদের দক্ষতা বিকাশের সুযোগ০৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ