৪ সমস্যায় জর্জরিত খুলনার ‘বাতিঘর’ ব্রজলাল কলেজ
Published: 17th, October 2025 GMT
বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের উচ্চশিক্ষার প্রাচীনতম বাতিঘর সরকারি ব্রজলাল কলেজ (বিএল কলেজ)। ১২৩ বছরের ঐতিহ্য বহন করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একসময় পরিচিত ছিল ‘দক্ষিণবঙ্গের অক্সফোর্ড’ নামে। কিন্তু এখন শিক্ষক–সংকট, শ্রেণিকক্ষের অভাব, পরিবহন ও আবাসন সমস্যায় জর্জরিত এ কলেজ।
১৯০২ সালের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজে এখন উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ৩৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন। রয়েছে ২১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ২২টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স। কিন্তু বিপুল শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকসংখ্যা অপ্রতুল। অনুমোদিত ১৯৮ পদের মধ্যে বর্তমানে আছেন মাত্র ১৬৬ জন শিক্ষক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১ : ১৯৯।
শিক্ষকেরা বলছেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও হিসাববিজ্ঞান ছাড়া অন্য কোনো বিভাগে ১২ জন পূর্ণ শিক্ষক নেই। সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানে ৫ জন করে, ভূগোল ও মার্কেটিংয়ে ৪ জন, সমাজকর্মে ৩ জন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে শিক্ষক মাত্র ২ জন।
কলেজে শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র ৯১টি। প্রায় সব বিভাগেই পাঠদানে ঘাটতি দেখা যায়। নতুন বিভাগগুলোতে সমস্যা আরও তীব্র। গত আগস্টে স্নাতক প্রথম বর্ষের পরীক্ষার সময় শ্রেণিতে পাঠ বন্ধ রাখতে হয় পরীক্ষার জন্য। শিক্ষকেরা বলছেন, এটি প্রায়ই ঘটে—যখনই পরীক্ষা হয়, ক্লাস স্থগিত থাকে।
১৩ অক্টোবর ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ক্লাসে দেখা যায়, ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৫ জন। ইতিহাস বিভাগের আরেকটি ক্লাসে ছিলেন ৪ জন।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ঊর্মি পাল বলেন, ‘নন-মেজর ক্লাসে একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থী থাকার কথা, কিন্তু আজ চারজন ছাড়া কেউ আসেনি।’
ছেলেদের হোস্টেলগুলো বন্ধ উল্লেখ করে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন বলেন, ‘মেসে থাকা ব্যয়বহুল। তাই বড় ছুটির পর উপস্থিতি কমে যায়। যদি হল খোলা থাকত, উপস্থিতি অনেক বাড়ত।’
শিক্ষকেরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে পরীক্ষায় অংশ নিতে ৭৫ শতাংশ ক্লাস উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, তবে বাস্তবে এই মান বজায় রাখা কঠিন।
কলেজে বাস আছে মাত্র ৬টি। বাসগুলো দিনে একবার যাতায়াত করে। ফলে বাসে অনেক ভিড় হয়।
ডুমুরিয়ার শিক্ষার্থী সৌভিক বিশ্বাস বলেন, ‘বাস মিস হলে আসা–যাওয়ায় প্রতিদিন ১৪০ টাকা খরচ হয়। তাই অনেক দিন ক্লাস মিস হয়ে যায়।’
ব্রজলাল কলেজ একসময় অবিভক্ত বাংলার প্রথম আবাসিক কলেজ হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন সেই আবাসনব্যবস্থা প্রায় অচল। মোট আটটি হোস্টেলের মধ্যে ছেলেদের পাঁচটি ও মেয়েদের তিনটি। তবে সব মিলিয়ে আসন মাত্র ৭২১টি—অর্থাৎ ৩৩ হাজারের মধ্যে মাত্র সোয়া ২ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী হোস্টেলে থাকতে পারেন। তবে বর্তমানে ছেলেদের সব হোস্টেলই বন্ধ।
কলেজের একটি সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারাই ঠিক করে দিতেন কারা হোস্টেলে উঠবে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হোস্টেলগুলোতে লুটপাট ও ভাঙচুর হয়। এর পর থেকে ‘সংস্কারকাজ চলছে’—এমন অজুহাতে হোস্টেল এ পর্যন্ত খোলা হয়নি।
অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের। হলে থাকলে টিকে থাকা সহজ হতো। মনে হয় আর বিএল কলেজের হলে ওঠা হবে না।’
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ৫০ হাজার বই থাকলেও পড়ার কক্ষ খুব ছোট। একসঙ্গে বসতে পারেন মাত্র ৫০ জন। নতুন সংস্করণের বইয়ের অভাব ও বাইরের বই আনা নিষিদ্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহও কমছে।
কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এফ এম আবদুর রাজ্জাক বলেন, শ্রেণিকক্ষের সংকট খুব বড় নয়, তবে আবাসন সমস্যা আছে। বহুতল হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাজেট এলে কাজ শুরু করা যাবে। তিনি বলেন, ‘ছেলেদের হল বন্ধের পেছনে শুধু রাজনীতি নয়, অবকাঠামোগত সমস্যাও আছে। সংস্কারের কিছু কাজ হয়েছে, বাকিটা বাজেট পেলে শেষ হবে। হলগুলো খোলার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপস থ ত পর ক ষ ল কল জ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
এইচএসসিতে কত পেয়েছিলেন ফারিণ, তটিনী, পূজা, সাদিয়া, হিমিরা
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আজ। এ ফলাফল ঘিরেই একসময় উত্তেজনা, প্রত্যাশা আর একটু ভয় মেশানো আনন্দ ছিল তারকাদের মনে। হাজারো শিক্ষার্থীর মতো দেশের এই অভিনয়শিল্পীরাও একসময় অপেক্ষা করেছিলেন এমন দিনের জন্য। কেউ পেয়েছিলেন দারুণ ফল, কেউ হয়তো ততটা নয়। কিন্তু পরের গল্পটা সবারই অনুপ্রেরণার।
বেশির ভাগ তারকাই জানান, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিনটি ছিল তাঁদের জন্য উৎকণ্ঠার। পরীক্ষায় কত পাবেন, আর কে কী বলবে—এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এই তারকারা। একসময় উৎকণ্ঠা কাটিয়ে সফলতার সঙ্গে কৃতকার্য হন সাফা কবির কবির, পূজা চেরী, তাসনিয়া ফারিণ, দীঘি, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, সাদিয়া আয়মান ও তটিনীরা। কে কত পেয়েছিলেন?
সাফা পেয়েছিলেন ৪.৫০
এক যুগের বেশি সময়ের আগের কথা। ২০১২ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ফলাফল প্রকাশের আগের রাতে চিন্তায় ঘুমাতে পারেননি সাফা। ফলাফল কী হবে—এ চিন্তাই তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভাবায়। পরে দুপুরের দিকে ভয়ে ভয়ে যান ফলাফল জানতে। সাফা জানান, পড়াশোনায় তাঁর খুব বেশি মনোযোগ ছিল না। পড়তে ভালো লাগত না। শুধু মায়ের জন্যই তাঁর পড়তে যাওয়া। তাঁর ভাষায়, মায়ের জন্যই পড়াশোনায় যা মনোযোগ ছিল।