বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের উচ্চশিক্ষার প্রাচীনতম বাতিঘর সরকারি ব্রজলাল কলেজ (বিএল কলেজ)। ১২৩ বছরের ঐতিহ্য বহন করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একসময় পরিচিত ছিল ‘দক্ষিণবঙ্গের অক্সফোর্ড’ নামে। কিন্তু এখন শিক্ষক–সংকট, শ্রেণিকক্ষের অভাব, পরিবহন ও আবাসন সমস্যায় জর্জরিত এ কলেজ।

১৯০২ সালের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজে এখন উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ৩৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন। রয়েছে ২১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ২২টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স। কিন্তু বিপুল শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকসংখ্যা অপ্রতুল। অনুমোদিত ১৯৮ পদের মধ্যে বর্তমানে আছেন মাত্র ১৬৬ জন শিক্ষক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১ : ১৯৯।

শিক্ষকেরা বলছেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও হিসাববিজ্ঞান ছাড়া অন্য কোনো বিভাগে ১২ জন পূর্ণ শিক্ষক নেই। সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানে ৫ জন করে, ভূগোল ও মার্কেটিংয়ে ৪ জন, সমাজকর্মে ৩ জন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে শিক্ষক মাত্র ২ জন।

কলেজে শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র ৯১টি। প্রায় সব বিভাগেই পাঠদানে ঘাটতি দেখা যায়। নতুন বিভাগগুলোতে সমস্যা আরও তীব্র। গত আগস্টে স্নাতক প্রথম বর্ষের পরীক্ষার সময় শ্রেণিতে পাঠ বন্ধ রাখতে হয় পরীক্ষার জন্য। শিক্ষকেরা বলছেন, এটি প্রায়ই ঘটে—যখনই পরীক্ষা হয়, ক্লাস স্থগিত থাকে।

১৩ অক্টোবর ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ক্লাসে দেখা যায়, ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৫ জন। ইতিহাস বিভাগের আরেকটি ক্লাসে ছিলেন ৪ জন।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ঊর্মি পাল বলেন, ‘নন-মেজর ক্লাসে একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থী থাকার কথা, কিন্তু আজ চারজন ছাড়া কেউ আসেনি।’

ছেলেদের হোস্টেলগুলো বন্ধ উল্লেখ করে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন বলেন, ‘মেসে থাকা ব্যয়বহুল। তাই বড় ছুটির পর উপস্থিতি কমে যায়। যদি হল খোলা থাকত, উপস্থিতি অনেক বাড়ত।’

শিক্ষকেরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে পরীক্ষায় অংশ নিতে ৭৫ শতাংশ ক্লাস উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, তবে বাস্তবে এই মান বজায় রাখা কঠিন।

কলেজে বাস আছে মাত্র ৬টি। বাসগুলো দিনে একবার যাতায়াত করে। ফলে বাসে অনেক ভিড় হয়।

ডুমুরিয়ার শিক্ষার্থী সৌভিক বিশ্বাস বলেন, ‘বাস মিস হলে আসা–যাওয়ায় প্রতিদিন ১৪০ টাকা খরচ হয়। তাই অনেক দিন ক্লাস মিস হয়ে যায়।’

ব্রজলাল কলেজ একসময় অবিভক্ত বাংলার প্রথম আবাসিক কলেজ হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন সেই আবাসনব্যবস্থা প্রায় অচল। মোট আটটি হোস্টেলের মধ্যে ছেলেদের পাঁচটি ও মেয়েদের তিনটি। তবে সব মিলিয়ে আসন মাত্র ৭২১টি—অর্থাৎ ৩৩ হাজারের মধ্যে মাত্র সোয়া ২ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী হোস্টেলে থাকতে পারেন। তবে বর্তমানে ছেলেদের সব হোস্টেলই বন্ধ।

কলেজের একটি সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারাই ঠিক করে দিতেন কারা হোস্টেলে উঠবে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হোস্টেলগুলোতে লুটপাট ও ভাঙচুর হয়। এর পর থেকে ‘সংস্কারকাজ চলছে’—এমন অজুহাতে হোস্টেল এ পর্যন্ত খোলা হয়নি।

অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের। হলে থাকলে টিকে থাকা সহজ হতো। মনে হয় আর বিএল কলেজের হলে ওঠা হবে না।’

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ৫০ হাজার বই থাকলেও পড়ার কক্ষ খুব ছোট। একসঙ্গে বসতে পারেন মাত্র ৫০ জন। নতুন সংস্করণের বইয়ের অভাব ও বাইরের বই আনা নিষিদ্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহও কমছে।

কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এফ এম আবদুর রাজ্জাক বলেন, শ্রেণিকক্ষের সংকট খুব বড় নয়, তবে আবাসন সমস্যা আছে। বহুতল হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাজেট এলে কাজ শুরু করা যাবে। তিনি বলেন, ‘ছেলেদের হল বন্ধের পেছনে শুধু রাজনীতি নয়, অবকাঠামোগত সমস্যাও আছে। সংস্কারের কিছু কাজ হয়েছে, বাকিটা বাজেট পেলে শেষ হবে। হলগুলো খোলার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপস থ ত পর ক ষ ল কল জ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

২২ বছর বয়সে সিরাজউদ্দৌলা নবাব হন

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

সৃজনশীল প্রশ্ন: অধ্যায়–১

শহীদ মিয়া তরুণ বয়সে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম থেকেই কিছু আত্মীয় নিজেদের সুবিধার জন্য শহীদ মিয়াকে জনগণের কাজে বাধা সৃষ্টি করে। সুযোগ বুঝে একসময় তারা তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সক্ষম হয় এবং হত্যা করে।

প্রশ্ন

ক. সম্রাট আকবরের সেনাপতি কে ছিলেন?

খ. বাংলায় নবজাগরণ কী, ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকের শহীদ মিয়ার ঘটনার সঙ্গে ঐতিহাসিক কোন ঘটনার মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উক্ত ঘটনা কি বাংলার স্বাধীনতা হারানোর কারণ? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর

ক. সম্রাট আকবরের সেনাপতি ছিলেন মানসিংহ।

খ. বাংলায় ইংরেজ শাসনের প্রভাবে এ দেশের মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা তৈরি হয়, তাকেই নবজাগরণ বলে। ইংরেজরা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে এলেও একসময় তারা এখানে বিভিন্ন সমাজসংস্কার, শিক্ষা বিস্তার প্রভৃতি কাজ করে থাকে। আধুনিক শিক্ষার কারণে এখানকার মানুষের মধ্যে অধিকার নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়। তারা সমাজের কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ইতিহাসে এটাই বাংলায় নবজাগরণ।

আরও পড়ুনজুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা—বিজ্ঞান : টিকটিকি সরীসৃপ কেন০১ ডিসেম্বর ২০২৫

গ. উদ্দীপকের শহীদ মিয়ার ঘটনার সঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে হত্যার সঙ্গে মিল রয়েছে। নবাব আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর প্রিয় নাতি সিরাজউদ্দৌলা মাত্র ২২ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। তখন তাঁর সামনে একদিকে ইংরেজ শক্তি, পাশাপাশি বড় খালা ঘসেটি বেগম ও সিপাহশালার মীর জাফর আলী খানের ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত হন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে তিনি নিহত হন। তখন বাংলায় শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ইংরেজদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা পায়। শহীদ মিয়ার তরুণ বয়সে চেয়ারম্যান হওয়ার সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলার কম বয়সে নবাব হওয়ার মিল দেখা যায়।

অন্যদিকে সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের লোকজনও এই ক্ষমতা গ্রহণকে নেতিবাচক বলে মনে করে। উদ্দীপকের শহীদ মিয়াও ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তাঁর পরিবারের আত্মীয়েরা বিরোধিতা করে, যা শহীদ মিয়ার ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। তাই পারিবারিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সিরাজউদ্দৌলার পতনের ঘটনার মিল রয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, সিরাজউদ্দৌলার ক্ষমতা হারানো ও মৃত্যু বাংলার পরাধীনতার কারণ। এ ঘটনায় শাসন ক্ষমতায় ইংরেজরা প্রভাব রাখতে শুরু করে।

মীর জাফর ও পরবর্তী সময়ে মীর কাশিমকে ইংরেজরা বাংলার নবাব মনোনীত করলেও নানা কারণে তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে খাজনা ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। অন্যদিকে নবাব ভাতা ভোগ করেন। নবাব শাসন ও বিচারের দিকটি দেখার সুযোগ পান। ক্লাইভ কর্তৃক এ অদ্ভুত শাসনই ইতিহাসে ‘দ্বৈত শাসন’ নামে পরিচিত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে শাসন ক্ষমতা সুদৃঢ় করে। কিন্তু ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেরাই শাসন শুরু করে। ব্রিটিশদের এই শাসন ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। ফলে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলার স্বাধীনতা ছিল ইংরেজদের হাতে। তাই সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও মৃত্যু বাংলার স্বাধীনতা হারানোর বড় কারণ।

মো. আবুল হাছান, সিনিয়র শিক্ষক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২২ বছর বয়সে সিরাজউদ্দৌলা নবাব হন
  • অপূর্ব বললেন, বয়স হয়েছে, বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে পারি না