প্রায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীর পাশাপাশি পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়। যাত্রীরা টার্মিনাল দিয়ে চলাচল করেন। সেখানেই সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।

কিন্তু পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়াটি কিছুটা ভিন্ন। পণ্যের চালান বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরপরই তা বিমানে তুলে বিদেশে পাঠানো হয় না। কিংবা বিদেশ থেকে পণ্যের চালান বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তা খালাস হয় না। শুল্ক বিভাগ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। এটিকেই কার্গো ভিলেজ বলা হয়।

আজ দুপুরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে (আমদানি কমপ্লেক্স) ভয়াবহ আগুন লাগে। এ পর্যন্ত ২০টি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। বিপুল পরিমাণ মালামাল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

কার্গো ভিলেজ কী

পণ্য আমদানি–রপ্তানি হয় তিনভাবে। এগুলো হলো স্থলপথ, সমুদ্রপথ ও আকাশপথ।

আকাশপথের আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিমানবন্দর থেকে। বিমানবন্দর দিয়ে সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম ওজনের মেশিনপত্র, তৈরি পোশাক, শাকসবজিসহ পচনশীল পণ্য, ইলেকট্রনিক পণ্য ইত্যাদি বাংলাদেশে রপ্তানি ও আমদানি হয়। ডিএইচএলসহ বিশ্বখ্যাত কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও এ দেশে আকাশপথে পণ্য ও দলিলপত্র (ডকুমেন্ট) আসে।

শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যেখানে আমদানি-রপ্তানির পণ্য রাখা হয়, সেই জায়গা বা গুদামটিকে কার্গো ভিলেজ বলা হয়। অনেক বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স থাকে। যেমন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো ভিলেজ বা কমপ্লেক্স আছে। আজ দুপুরে আমদানি কমপ্লেক্সে আগুন লেগেছে।

কার্গো ভিলেজে কী কী থাকে

কার্গো ভিলেজে আমদানি-রপ্তানির পণ্য জাহাজীকরণ বা খালাসের জন্য অপেক্ষমাণ থাকে। শুল্কায়ন শেষে সেখান থেকে চালান বুঝে নেন আমদানিকারক বা আমদানিকারকের প্রতিনিধিরা। শুল্কায়ন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে কত দিন পণ্য কার্গো ভিলেজ বা কমপ্লেক্সে থাকবে।

সাধারণত পচনশীল পণ্য বা শাকসবজি, ফলমূল হলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পণ্য জাহাজীকরণ হয় কিংবা খালাস হয়।

আবার অনেক তৈরি পোশাক মালিকেরা লিড টাইমের মধ্যে বিদেশি ক্রেতার কাছে পণ্যের চালান পৌঁছাতে দ্রুত বিমানযোগে পণ্য পাঠান। তখন হয়তো দু-তিন দিনের মধ্যেই পণ্যের চালান বিদেশে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে যায়।

আবার কার্গো বিমানে (পণ্যবাহী বিমান) স্পেস (জায়গা) সংকটের জন্য রপ্তানিমুখী পণ্যের চালানকে কয়েক দিন কার্গো ভিলেজ বা কমপ্লেক্সে অপেক্ষা করতে হয়। সে জন্য কার্গো ভিলেজে জায়গার ভাড়া দিয়ে কয়েক দিন পর্যন্ত পণ্য রাখেন দেশের রপ্তানিকারকেরা।

আবার আমদানিকারকেরা শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মালামাল খালাস করতে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হতে পারেন। তখন পণ্যের চালান আমদানি কার্গো ভিলেজে থাকে।

মোট কথা, যেকোনো পণ্যের চালান আমদানি ও রপ্তানির যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ বা কমপ্লেক্স থেকে। সেখানে শুল্ক বিভাগ, বিমান সংস্থা, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ও থাকে। থাকে নানা ধরনের দলিলপত্র।

আগুনের কারণে কী ক্ষতি হতে পারে

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ (আমদানি কমপ্লেক্স) ভয়াবহ আগুন লাগায় আমদানি করা শত শত টন পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি হবে—এটা ধরেই নেওয়া যায়। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন আমদানিকারকেরা। বিমা দাবি করে এসব পণ্যের ক্ষতিপূরণ আদায় করাও বেশ সময়সাপেক্ষ বিষয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আমদানির কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বোঝা যাবে, ক্ষয়ক্ষতি কত হয়েছে, কবে নাগাদ আবার কার্গো ভিলেজ চালু করা যাবে।

আকাশপথে পণ্য পরিবহনকারী আরএমকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান ইবনে আমিন সোহাইল প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনায় আমদানিকারকদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বোঝা যাবে কোন কোন আমদানিকারকের পণ্য পুড়েছে। সেই অনুযায়ী বিমা দাবিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আমদানিকারক তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেছেন। কার্গো ভিলেজে আমদানি কমপ্লেক্সে তাঁদের স্যাম্পল বা নমুনা পণ্যও আছে।

তবে বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের আগুন লাগল এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনার সময় অনেক বেশি লাগল। তাহলে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ বন্দোবস্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। এতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সুরক্ষা শ্রেণিতে অবনতি হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন আমদ ন ক র কমপ ল ক স প রক র য় আগ ন ল গ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সমাজসেবা কর্মকর্তা ও এতিমখানার সুপারকে আসামি করে দুদকের মামলা

মাদারীপুরে একটি এতিমখানার অন্তত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সমাজসেবা কর্মকর্তা ও এতিমখানার সুপারকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন মাদারীপুরের সাবেক শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা শ্যামল পাণ্ডে ও হজরত শাহ মাদার (র.) দরগাহ শরিফ এতিমখানার সুপার মোহাম্মদ আল-আমিন। সমাজসেবা কর্মকর্তা শ্যামল বর্তমানে মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

এর আগে গত ১৫ জুলাই মাদারীপুর পৌর এলাকার দরগাহ শরিফ–সংলগ্ন এলাকায় হজরত শাহ মাদার (র.) দরগাহ শরিফ এতিমখানায় অভিযান চালায় দুদক। এ সময় দুদকের সদস্যরা এতিমখানার মোহতামিম মোহাম্মদ আল-আমিনসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। অভিযানে এতিমদের জন্য প্রাপ্ত সরকারি বরাদ্দ, ছাত্রসংখ্যা এবং আর্থিক লেনদেনের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হলে সেখানে ব্যাপক অনিয়ম লক্ষ করা যায়।

দুদকের সূত্র জানায়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে সরকারি হিসাবে ১৪৫ জন এতিম শিশুর জন্য মাসে ২ হাজার টাকা হারে প্রায় ২ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে এতিমখানায় মাত্র ৪০ জন শিক্ষার্থী আছে। এ ছাড়া এতিমখানার সুপার আল-আমিনের বিরুদ্ধে ৪৭ লাখ টাকার এফডিআর (স্থায়ী আমানত) জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে উত্তোলন করার অভিযোগ আছে।

মামলায় দুদক উল্লেখ করে, সমাজসেবা কর্মকর্তা ও এতিমখানার সুপার দুজনে পরস্পর যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তাঁরা উভয়ই এতিমখানায় প্রকৃত এতিমের সংখ্যা গোপন করেছেন। ৪ বছরে অতিরিক্ত ক্যাপিটেশনগ্র্যান্ট–ভুক্ত দুস্থ ও এতিম নিবাসী দেখিয়ে ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এতিমদের কল্যাণে ব্যবহৃত ইসলামী ব্যাংক, মাদারীপুর শাখার এমএমপিডিআর (মুদারাবা মান্থলি প্রফিট ডিপোজিট স্কিম) ৪৭ লাখ টাকা, অনুদানকৃত ১০ লাখ ৯৯ হাজার ৯১৭ টাকাসহ মোট ১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৯১৭ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মামলা রেকর্ডকারী কর্মকর্তা ও দুদকের উপসহকারী পরিচালক শ্যামল চন্দ্র সেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০–এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার প্রমাণ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তাঁদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।’

দুদকের মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের অভিযানের পর কমিশন থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে আজ মামলা করা হয়। এখন পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হলেই আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বারবার অগ্নিকাণ্ড স্পষ্ট করেছে নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা: তারেক রহমান
  • শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুন
  • বিমানবন্দরে ক্রিকেটারদের হেনস্থা, জড়িতদের ধরতে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য চেয়েছে বিসিবি
  • কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সমাজসেবা কর্মকর্তা ও এতিমখানার সুপারকে আসামি করে দুদকের মামলা