গৌতম ঘোষের স্ত্রী নীলাঞ্জনা মারা গেছেন
Published: 19th, October 2025 GMT
ভারতীয় বাংলা সিনেমার বরেণ্য পরিচালক গৌতম ঘোষের স্ত্রী মারা গেছেন। শনিবার (১৮ অক্টোবর) ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নীলাঞ্জনা ঘোষ। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
গৌতম-নীলাঞ্জনা দম্পতির কন্যা আনন্দী ঘোষ ভারতীয় গণমাধ্যম জানান, তার মায়ের সে রকম কোনো অসুস্থতা ছিল না। আচমকাই অঘটনটি ঘটেছে।
আরো পড়ুন:
‘সমস্যা কিছু না কিছু থাকবেই, দুটো আলাদা দেশ তো’
পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরে কিসের শুটিং করছেন চঞ্চল?
গত শুক্রবারও নীলাঞ্জনা সুস্থ ছিলেন। শারীরিক কোনো সমস্যা বা অসুস্থতার লেশমাত্র ছিল না। বহু বছর ধরে কাঁথাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নীলাঞ্জনা। তার মহিলাকর্মীদের সঙ্গে ওই দিন দুপুরেও কাজ করেন। কাজ করতে করতেই শরীরে অস্বস্তি শুরু হয় তার। তড়িঘড়ি বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। চিকিৎসকরা জানান, আচমকা ‘অ্যানিউরিজম’-এর কারণে পরিচালক-পত্নীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এখান থেকেই তার মৃত্যু হয়েছে।
আনন্দী ঘোষ বলেন, “মায়ের শরীরে অস্বস্তি শুরু হওয়ার পর আমরা আর দেরি করিনি। চিকিৎসকেরা মাকে সুস্থ করতে অস্ত্রোপচারের কথাও বলেছিলেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তার আগেই সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল।”
নীলাঞ্জনার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গৌতম ঘোষকে সমবেদনা জানাতে হাসপাতালে ছুটে যান শোবিজ অঙ্গনে অনেকে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও শোক প্রকাশ করেছেন।
ওপার বাংলার কাঁথা শিল্পকে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছিলেন নীলাঞ্জনা। ‘বাংলার কাঁথা’ নামে একটি বইও লিখেছেন তিনি। কাঁথার বুননের প্রতি নীলাঞ্জনার ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল মা শ্রীলতা সরকারের কাছ থেকে।
শ্রীলতা কাঁথা শিল্পকে ফিরিয়ে আনার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন। নীলাঞ্জনার কাছে কাঁথা ছিল ক্যানভাসের মতো। মনের মাধুরী মিশিয়ে নানা কল্পনাকে সুতার বুননে গাঁথা তার অন্যতম ভালোবাসা ছিল।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র ন ল ঞ জন
এছাড়াও পড়ুন:
আচমকা সিদ্ধান্তে তৈরি হবে গভীর সংকট
গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই স্বাস্থ্য সেক্টর কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই পদক্ষেপ প্রশাসনের পুনর্গঠনের অংশ হতে পারে, তবে সিদ্ধান্তটি কোনো পূর্ব আলোচনা, অংশীজনের মতামত বা বাস্তব মূল্যায়ন ছাড়াই নেওয়া হয়েছে। এটাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের জনস্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য তৈরি হবে গভীর অনিশ্চয়তার দ্বার। গত ২৬ বছরে গড়ে ওঠা বৃহৎ স্বাস্থ্য সেক্টর কাঠামো হঠাৎ থমকে গেলে তার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে বাধ্য।
এ সিদ্ধান্ত জারি থাকলে জনবলসংকট ও সেবার স্থবিরতা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে স্বাস্থ্য খাতে। সেক্টর কর্মসূচির আওতায় থাকা প্রায় ১৬ হাজার কর্মীর মধ্যে ২ হাজার ৬০০ জনের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। অনেকের বেতন ২০২৪ সালের জুলাই থেকে বন্ধ। এদিকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ৬৩৪ জন রয়েছেন চাকরি হারানোর আশঙ্কায়। দেশে এখনো যক্ষ্মা ও সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ। জনবল কমে গেলে রোগনিয়ন্ত্রণে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে। যক্ষ্মা কর্মসূচিতে থাকা একজন নারী কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ১০ বছরের বেশি সময় জেলা পর্যায়ে কাজ করেছি। ১৭ মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। এখন শুনছি, আমাদের বাদ দেবে। এই বয়সে নতুন কাজ পাওয়াও কঠিন। আমাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতারও কোনো দাম নেই?’
এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যে দেশের ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ১১টি জেলা সদর হাসপাতালে এসব কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব কেন্দ্রে শিশুদের স্নায়ুবিকাশগত সমস্যা, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক সমস্যা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, দেরিতে কথা বলা, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, অটিজম, মৃগীরোগ—এসব বিষয়ে সেবা দেওয়া হতো। এসব কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শিশু সেবা পেয়েছে। এখন সেবার সেই ধারাবাহিকতা থেমে গেলে হাজারো পরিবারের জীবনমান সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
একসময় স্বাস্থ্য খাত কর্মসূচি ও এর অপারেশন প্ল্যানগুলোতে দাতা সংস্থার অর্থায়ন বেশি ছিল। এখন তা কমে এসেছে। স্বাস্থ্য খাত কর্মসূচিতে এখন বেশির ভাগ অর্থায়ন সরকারের। কিন্তু দাতাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই দাতানির্ভর এসব কর্মসূচি থেকে সরে আসা আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে। বিশ্বব্যাংক, ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফ, ইউএসএআইডি, জাইকাসহ দীর্ঘদিনের উন্নয়ন–সহযোগীদের বাদ দিয়ে বড়সড় নীতিনির্ধারণে যাওয়া শুধু কূটনৈতিকভাবেই অস্বস্তিকর নয়, বরং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে।
সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য সেক্টর কর্মসূচি থেকে হঠাৎ সরে আসা কোনোভাবেই সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত মনে হয় না। সরকারের উচিত হবে দ্রুত অংশীজনদের নিয়ে আলোচনায় বসা, জনবল ও সেবার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা এবং জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা। স্বাস্থ্য খাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টি জটিল, এখানে ভুল সিদ্ধান্তের মূল্য দিতে হয় মানুষের জীবন দিয়ে।
আশা করি, সরকার দ্রুত সব অংশীজন, দাতা সংস্থা, জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ, মাঠপর্যায়ের কর্মী ও সাধারণ নাগরিকের মতামত নিয়ে একটি সুসমন্বিত সিদ্ধান্ত নেবে। ঝুলে থাকা জনবলকে স্থায়ী সমাধান দেবে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া সেবা দ্রুত আবার চালু করবে। জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে না ফেলে একটি টেকসই, জবাবদিহিমূলক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া কোনো প্রশাসনিক পুনর্গঠনই ফলপ্রসূ হবে না।