দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি পেল বিএনপি, অপেক্ষায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স
Published: 19th, October 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বাচনী প্রচারের নিরাপত্তায় দলটিকে এই গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একটি বুলেটপ্রুফ বাস কেনার অনুমতি দেওয়া হয় চলতি মাসের শুরুর দিকে। আর গত জুন মাসে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়।
কোন দেশ থেকে কোন মডেলের এই বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি বিএনপি। তবে জাপান থেকে গাড়ি কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.
বুলেটপ্রুফ গাড়ির পর আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বিএনপি। মন্ত্রণালয় সূত্র সম্প্রতি প্রথম আলোকে জানায়, একটি শটগান ও দুটি পিস্তলের লাইসেন্সের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন।
বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ ধরনের অনুমতি সাধারণত দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি দূতাবাস, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের। রাজনৈতিক দলের জন্য এ ধরনের অনুমতি খুব কমই দেওয়া হয়েছে অতীতে।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) সূত্রে জানা যায়, সাধারণত জাপান, কানাডা ও জার্মানি বুলেটপ্রুফ গাড়ি তৈরি করে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য গত শতকের নব্বইয়ের দশকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়েছিল। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর তাঁর জন্য আরেকবার বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানি করা হয়।
নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জনসংযোগ করতে সারা দেশে যাবেন। মানুষের সঙ্গে মিশবেন। একদিকে তাঁদের নিরাপত্তা, অন্যদিকে জনসম্পৃক্ততা। এই সময়ে তাঁদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জরুরি। সে কারণে বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা হচ্ছে।মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টাবারভিডার নেতারা বলছেন, বাংলাদেশে আগে বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানি করা হয়েছে জাপান ও কানাডা থেকে। যেমন শেখ হাসিনার জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি জাপান থেকে আনা হয়েছিল। পরে সে গাড়ি কানাডা থেকে পরিবর্তন (কনভার্সন) করা হয়।
বারভিডার সভাপতি আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বেসরকারিভাবে কেউ বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানি করতে পারেন না। সরকারিভাবে আনা হয় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কারও ব্যবহারের জন্য। জাপান, কানাডা ও জার্মানি থেকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়। বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনতে খরচ হয় ২ লাখ ডলার (ডলারপ্রতি ১২২ টাকা হিসেবে ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা)। ৮০০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আনতে গেলে খরচ পড়বে প্রায় ২২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন১৭ বছর পর সাক্ষাৎকার: কবে ফিরবেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, কী বললেন তারেক রহমান০৬ অক্টোবর ২০২৫স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানা, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত গত জুনে খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন দেন। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বুলেটপ্রুফ বাস কেনারও অনুমতি চাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের ব্যবহারের কথা বলা হয়।
বুলেটপ্রুফ গাড়ি-বাস আমদানির অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সারা দেশে প্রচারে যাবেন। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) জানিয়েছে, এই দুজন নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার সময় গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মদদে কিংবা তাদের নিয়োগ করা দেশি-বিদেশি এজেন্টের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন। এসব দিক বিবেচনায় বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বুলেটপ্রুফ গাড়ির পর আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বিএনপি। মন্ত্রণালয় সূত্র সম্প্রতি প্রথম আলোকে জানায়, একটি শটগান ও দুটি পিস্তলের লাইসেন্সের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন।বর্তমানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এমন আশঙ্কা আছে, অস্থিরতা সৃষ্টিসহ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালাতে পারে আওয়ামী লীগ। এই সময়ে জিয়া পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন।
আরও পড়ুনখালেদা জিয়ার জন্য প্রস্তুত ‘ফিরোজা’, বেড়েছে নিরাপত্তা, আসছেন নেতা–কর্মীরা০৫ মে ২০২৫২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দ্রুতই দেশে ফিরবেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন।
বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় বিশেষ করে তারেক রহমানের দেশে না ফেরার পেছনে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা বলেছেন।
২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়েছিল। সেদিন খালেদা জিয়ার গাড়িসহ বহরের আরও চারটি গাড়ি ভাঙচুর করেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। খালেদা জিয়ার সেই গাড়িটি বুলেট প্রুফ ছিল না।
বুলেটপ্রুফ গাড়ির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সারা দেশে নির্বাচনী প্রচারে সম্পৃক্ত হবেন। দুজন নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণ করবেন। নির্বাচনী জনসভায় তাঁদের গমনাগমনের পথে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ও তাদের নিয়োগ করা এজেন্ট অথবা সন্ত্রাসীদের কারণে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জীবননাশের হুমকি আছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবের কারণে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা জনসভা, রোডমার্চ বা রাজনৈতিক শোডাউনের সময় আক্রমণের শিকার হতে পারেন। খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বহুমাত্রিক নিরাপত্তা হুমকি বা ঝুঁকি থাকায় তাঁদের সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনতে সংস্থার (এসবি) অনাপত্তি প্রদান করা হলো।
আরও পড়ুনখালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ১৩ আগস্ট ২০২৪পুলিশ প্রটোকলের পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে। এটি চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) নামে পরিচিত। খালেদা জিয়া কোথাও গেলে তাঁর নিরাপত্তায় বিশেষ পোশাকে সিএসএফের সদস্যদের দেখা যায়।
আরও পড়ুনতারেক রহমানের ঢাকায় বাড়ি নেই, তাই ভাড়া বাড়ি খুঁজছেন: আবদুস সালাম১০ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ল টপ র ফ গ ড় ও ত র ক রহম ন পর ব র র সদস প রথম আল ক ব যবহ র র র জন ত ক ব এনপ র ন র সময় র র জন র জন য আমদ ন সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
লালনের চিরপরিচিত মাজার ফিরে চাই
এক জাপানি গবেষক, লালন–ভক্ত মাসাহিকো তোগাওয়া। বারবার বাংলাদেশে এসেছেন লালন ফকিরের টানে। ছুটে গেছেন বারবার কুষ্টিয়ার আখড়ায়। লালন শাহের মাজার ঘেঁষে কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তব কাজ তাঁকে আহত করেছে। বিস্তর বাদ-প্রতিবাদের পর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী সেই নির্মাণকাজ বন্ধের ঘোষণা দিলেন। কিন্তু মাসাহিকো গত ২৬ নভেম্বর আখড়া ঘুরে এসে প্রথম আলোকে জানালেন, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর নিজেই আমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন নিচের নিবন্ধটি। ওপরে প্রকাশিত ছবিটিও ২৬ নভেম্বর তাঁরই তোলা।জাপানের সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ববিদ হিসেবে বাউল সংগীতের ওপর গবেষণামূলক কাজের প্রয়োজনে বেশ কয়েকবারই আমি বাংলাদেশ সফর করেছি। এখানে এসেই ফকির লালন শাহের গান শুনে, তাঁর মাজারের কাছে গিয়ে আমি অভিভূত হয়ে পড়ি। তাঁর প্রতি জন্মেছে আমার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। লালন শাহের শিক্ষা থেকে আমি অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি। আমি তাঁর সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে কুষ্টিয়ার এক গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছি। লালন শাহের সংগীতের মায়াজালে আবদ্ধ হয়েই জাপানে বসে আমি রচনা করেছি বেশ কয়েকটি নিবন্ধ।
যে কেউই লালন শাহের কর্মকাণ্ডের সান্নিধ্যে এলেই তাঁর কবিতা, গান এবং ধর্মীয় চিন্তাচেতনায় বিস্মিত হবেন। বেশির ভাগ জাপানি মনে করেন, বাংলাদেশ হচ্ছে একটি দরিদ্র দেশ। যেখানে সব সময়ই লেগে থাকে বন্যা আর দুর্ভিক্ষ। সেতু এবং সড়ক নির্মাণে বিদেশি সাহায্য ছাড়া বুঝি গত্যন্তর নেই। কিন্তু আমার বন্ধুরাই লালনের কবিতা পড়ে বিস্মিত হয়েছেন। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির প্রতি তাঁদের জন্মেছে অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধ।
আমি গত ২১ আগস্ট পরিদর্শন করেছি সেই খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের মাজার। কুষ্টিয়ার সেই মাজারের পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে আমি ব্যথিত না হয়ে পারিনি। বাউল সংগীতের পথিকৃতের মাজার কত অবহেলিত! মাজারের পার্শ্ববর্তী দেয়াল ধ্বংসের পথে। আর অসংখ্য ট্রাক বিকট আওয়াজে মাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া-আসা করছে। মাজারের আশপাশেই চলছে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ। সেখানকার বাউল ও ফকিরদের পক্ষে এ বেদনাদায়ক নির্মাণ দেখে যাওয়া ছাড়া কিছুই যেন আর করার নেই! কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ফিরে যথাসম্ভব অনেককেই নিজের যন্ত্রণার কথা জানিয়েছি।
লালন কমপেক্সের পরিকল্পনাকারীরা আমাকে জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ এবং বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার জন্যই এখানে ভবন নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু আমি লালন শাহের ভালোবাসায় সিক্ত একজন ভক্ত। বেশ অনেকবার মাজার ঘুরে আসা সত্ত্বেও কংক্রিটের সুদৃশ্য ভবনে থাকার একবারও প্রয়োজন পড়েনি আমার।মাসাহিকো তোগাওয়াচলতি মাসে আবারও আমাকে বাংলাদেশে আসতে হলো। গত ২৬ নভেম্বর লালনের মাজারেও আমি গেলাম। কিন্তু সেখানে বিস্মিত হয়ে দেখলাম, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও মাজারের গা ঘেঁষে কমপেক্সের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়নি।
লালন কমপেক্সের পরিকল্পনাকারীরা আমাকে জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ এবং বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার জন্যই এখানে ভবন নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু আমি লালন শাহের ভালোবাসায় সিক্ত একজন ভক্ত। বেশ অনেকবার মাজার ঘুরে আসা সত্ত্বেও কংক্রিটের সুদৃশ্য ভবনে থাকার একবারও প্রয়োজন পড়েনি আমার। মাজারের পাশে আমার দীক্ষাগুরু বাউলের বাড়িতেই আমি থাকি। মাটির ঘরের বারান্দায় বসে সাধারণ খাবার খাই। আমার গুরুর ছোট্ট কন্যা আমিনার কণ্ঠে লালন শাহের গান শুনি। একতারা বাজিয়ে আমি তাকে সঙ্গ দিই। মাটির ঘরের পরিবেশে যে সংগীত আমি উপভোগ করি, বিশাল মিলনায়তনে তা কখনোই উপভোগ্য হতো না।
লালনের মাজারের সেই পুরোনো চিরপরিচিত স্নিগ্ধ পরিবেশ আমি ফিরে চাই। সেখানেই আমি বারবার শুনতে চাই—
কেমন ন্যায় বিচারক খোদা
বল গো আমায়।
তাহা হলে ধনী-গরিব
কেন এ ভুবনে রয় \
ভালো-মন্দ সমান হলে
আমরা কেন পড়ি তলে
কেউ দালান কোঠার কোলে
শুয়ে আরাম পায় \
সেই আমরা মরণের পরে
যাব নাকি স্বর্গপুরে
কে মানিবে এসব হেরে
এই দুনিয়ার \
ভোগ করে ত্যাগ ভালো কথা
এ সংসারে কে করে তা
লালন বলে নাড়ি মাথা
আন্দাজে সবায় \