শাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শিক্ষার্থীরা
Published: 19th, October 2025 GMT
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। আজ রোববার বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের সড়কে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই সময়সীমা দেওয়া হয়।
‘শাকসু বানচালের উদ্দেশ্যে চলমান ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও অনতিবিলম্বে শাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী। কর্মসূচি থেকে তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করে রোডম্যাপ প্রকাশ না করলে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক পলাশ বখতিয়ার বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও শাকসু নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কারণ, প্রশাসন দুর্নীতিতে জড়িত। ছাত্র প্রতিনিধি তৈরি হলে তাঁরা এই অন্যায়গুলো করতে পারবেন না। তাঁরা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে চান। তাঁরা শিক্ষার্থীদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এত দিন নীরব রাখার চেষ্টা করেছেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ না পেলে শাবিপ্রবি অচল করে দেওয়া হবে।
ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা নতুন করে কোনো মুলা ঝোলানো আশ্বাস দেখতে চাই না। নভেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। শাকসু বানচালের চেষ্টা করা হলে আপনাদের পতিত স্বৈরাচারের মতো বিতাড়িত করা হবে। রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হলে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলবে। দলমত-নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে একমত।’
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পক্ষের শিক্ষক ও তাঁদের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে শাকসু নির্বাচনে অসহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, যারা শাকসু নির্বাচনে বাধা দিতে চায়, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের কঠোর হাতে মোকাবিলা করব।’
এর আগে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শাকসু নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী। ১২ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন গঠন করে গঠনতন্ত্র হস্তান্তরের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাবিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি
দেশের অন্যতম প্রধান তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মানববন্ধন করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এই মানবন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
ঢাকা-গোপালগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচলের দাবিতে মানববন্ধন
পাঁচ দাবিতে জেলায় জেলায় জামায়াতের মানববন্ধন
মানববন্ধনে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের সহ-সভাপতি (ভিপি) জিএমএম রায়হান কবীরের সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরবঙ্গের ৮ জেলার শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় উপস্থিত বক্তারা উত্তরবঙ্গের কৃষি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং কোটি মানুষের জীবিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে চীনের সহায়তায় আগামী নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরুর তাগিদ দেন এবং ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি জানান।
জাকসুর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ফেরদৌস আল হাসান বলেন, “তিস্তা শুধু উত্তরবঙ্গের বিষয় নয়, এটি দেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ। ভারত বর্ষায় কোনো সতর্কতা ছাড়াই পানি ছেড়ে লাখ লাখ ঘর-বাড়ি ডুবিয়ে দেয়, লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট করে দেয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি বন্ধ করে সেচ ব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলে, ফলে কোনো ফসল আবাদ হয় না।”
তিনি বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে টিকে থাকতে তিস্তার ন্যায্য হিস্সা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে নভেম্বরের মধ্যে চীনা অর্থায়নে এটি বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাই।”
জাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “তিস্তা ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদী হওয়া সত্ত্বেও এটি পশ্চিমবঙ্গের জন্য আশীর্বাদ এবং বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষায় আমাদের ডুবিয়ে মারে, শুষ্ক মৌসুমে পানি বন্ধ করে ফসল চাষাবাদে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের কাছে আমরা আশা করেছিলাম, তারা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু এই সরকার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। সরকারকে জোরালোভাবে বলতে চাই, ভারতীয় যেকোনো চাপকে উপেক্ষা করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুন; আমরা দেশবাসী আপনাদের সঙ্গে থাকব।”
জাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের মিত্র রাষ্ট্র (ভারত) মৈত্রীর পরিচয় দেননি। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলকে গুম করার মাধ্যমে ভারতের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বুঝা গেছে। আমাদের মেরুদণ্ড সোজা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। তিস্তায় ভারতের বাঁধের কারণে উত্তরবঙ্গের আট জেলা সরাসরি আক্রান্ত। প্রতিবেশী মৈত্রী দেশ হিসেবে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে।”
নভেম্বরের মধ্যে চীনা সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জমির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য শফিউজ্জামান শাহীন, ও বাগছাসের যুগ্ম-আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন আয়ান প্রমুখ।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী