শরীয়তপুরে চিকন্দী আইনজীবী সমিতি ভবনে বোমা হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
Published: 10th, November 2025 GMT
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দী আইনজীবী সমিতি ভবন ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট রুবায়েত আনোয়ার মনির মোল্লার চেম্বারে সামনে হাত বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) রাত ২টার দিকে চিকন্দী আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে একাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণের শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
আরো পড়ুন:
ববি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন’ সংবাদ প্রচারের অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
নান্দাইলের ইউএনও’র দুর্নীতি তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন
পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই ভবনের চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন চিকন্দী আইনজীবী সমিতির সদস্যরা।
এ সময় বক্তারা বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের আগামী ১৩ নভেম্বর ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যে আতঙ্ক ও অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তারই অংশ হিসেবে শরীয়তপুরে চিকন্দি আইনজীবী সমিতির সামনে একাধিক হাতবোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব। এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা।
চিকন্দী আইনজীবী সমিতির সদস্য রুবায়েত আনোয়ার মনির মোল্লা বলেন, “নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে সারাদেশে যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে, শরীয়তপুরে এই বোমা হামলা তারই জঘন্য উদাহরণ। আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিয়ে এমন পরিস্থিতি আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কিন্তু সেখানে ঘটেছে চরম ব্যর্থতা।”
তিনি বলেন, “আমাদের দাবি, দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার সাহস না পায়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, “গতকাল রাতে দুর্বৃত্তরা চিকন্দী পাড়ার এক আইনজীবীর চেম্বারে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়। বিষয়টি জানার পর চিকন্দী ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং আলামত জব্দ করে। এই ঘটনায় যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “আমরা খুব দ্রুতই আসামিদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব এবং তাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়েরসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ঢাকা/আকাশ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের গোপন কারাগার ‘রাকেফেত’, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না কখনো
মাটির নিচে একটি গোপন কারাগারে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে আটক করে রেখেছে ইসরায়েল। সেখানে তাঁরা কখনো সূর্যের আলো দেখতে পান না, পর্যাপ্ত খাবার পান না। পরিবার কিংবা বাইরের পৃথিবীর কোনো খবরও তাঁদের কাছে পৌঁছায় না।
ওই কারাগারে বন্দীদের মধ্যে অন্তত দুজন সাধারণ নাগরিক। তাঁদের মাসের পর মাস কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছে। ওই দুই বন্দীর একজন পুরুষ নার্স। তাঁকে হাসপাতালের পোশাক পরা অবস্থায় আটক করা হয়। অন্যজন তরুণ খাবার বিক্রেতা। আইনি সহায়তা দানকারী প্রতিষ্ঠান পাবলিক কমিটি এগেইনস্ট টর্চার ইন ইসরায়েলের (পিসিএটিআই) আইনজীবীরা তাঁদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আটক ওই দুই ব্যক্তিকে গত জানুয়ারিতে ভূগর্ভস্থ রাকেফেত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তাঁরা সেখানে তাঁদের সঙ্গে সহিংস আচরণের এবং নিয়মিত মারধরের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন।
ইসরায়েলের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অপরাধীদের আটক রাখার জন্য ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে রাকেফেত কারাগার চালু করা হয়। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই অমানবিক আখ্যা দিয়ে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের উগ্রপন্থী নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির কারাগারটি পুনরায় চালুর নির্দেশ দেন।
কারাকক্ষ, ব্যায়ামের মাঠ কিংবা আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কক্ষ—সবই মাটির নিচে। ফলে প্রকৃতির আলো ছাড়াই এখানকার বন্দীদের বেঁচে থাকতে হয়।
পিসিএটিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, কড়া নিরাপত্তাবলয়ে রাখতে হয়, এমন অল্প কিছু বন্দীর জন্য প্রাথমিকভাবে রাকেফেত কারাগার তৈরি করা হয়েছিল। প্রত্যেক বন্দীর জন্য বানানো হয় পৃথক কক্ষ। ১৯৮৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় সেখানে ১৫ জন বন্দী ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেখানে আনুমানিক ১০০ বন্দীকে রাখা হয়েছে।
গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল তাদের আদালতে দোষী সাব্যস্ত ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়। এ ছাড়া গাজা থেকে আটক ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই তাঁদের মাসের পর মাস আটক রাখা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে মুক্তি পেয়েছেন রাকেফেত কারাগারে বন্দী থাকা খাবার বিক্রেতা ওই তরুণও।
তবে এখনো ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে অন্তত এক হাজার ফিলিস্তিনি আটক আছেন। রাকেফেত কারাগারে বন্দী ওই নার্স তাঁদেরই একজন।
ইসরায়েলের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অপরাধীদের আটক রাখার জন্য ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে রাকেফেত কারাগার চালু করা হয়। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই অমানবিক আখ্যা দিয়ে এটি বন্ধ করা হয়।পিসিএটিআই বলেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শেষ হলেও গাজার ফিলিস্তিনিদের এখনো ইসরায়েলি কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন ও নির্যাতনের সমতুল্য।
রাকেফেত কারাগারে বন্দী থাকা ওই নার্স ও তরুণ খাবার বিক্রেতা গত সেপ্টেম্বরে পিসিএটিআইয়ের আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
৩৪ বছর বয়সী ওই নার্সকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে হাসপাতালে কাজ করার সময় আটক করা হয়। আর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি একটি তল্লাশিচৌকি থেকে আটক করা হয় তরুণ খাবার বিক্রেতাকে।
পিসিএটিআইয়ের আইনজীবী জেনান আবদু বলেন, ‘আমরা যে মক্কেলদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম, তাঁরা ছিলেন সাধারণ নাগরিক। আমি যার সঙ্গে কথা বলেছি, সে ছিল ১৮ বছর বয়সী খাবার বিক্রেতা। তাকে রাস্তায় একটি তল্লাশিচৌকি থেকে তুলে আনা হয়েছিল।’
ইসরায়েলি নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী বেন-গভির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং পার্লামেন্টের এক সদস্যকে বলেন, হামাসের বিশেষ বাহিনী নুখবার সদস্য এবং হিজবুল্লাহর বিশেষ যোদ্ধাদের বন্দী রাখার জন্য রাকেফেত কারাগার আবার চালু করা হয়েছে। নুখবার সদস্যরা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সঙ্গে জড়িত কোনো ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। আর খাবার বিক্রেতা ওই তরুণ হামলায় জড়িত না থাকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল তাদের আদালতে দোষী সাব্যস্ত ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়। এ ছাড়া গাজা থেকে আটক ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই তাঁদের মাসের পর মাস আটক রাখা হয়েছিল।ইসরায়েলি কারাগার পরিষেবা (আইপিএস) রাকেফেতের অন্যান্য বন্দীর পরিচয় ও অবস্থা সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।
ইসরায়েলি গোপন নথি অনুযায়ী, যুদ্ধ চলাকালে যেসব ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে আটক করা হয়েছিল, তাঁদের বেশির ভাগই সাধারণ নাগরিক। ২০১৯ সালে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, ভবিষ্যৎ আলোচনার জন্য ফিলিস্তিনিদের মরদেহ রেখে দেওয়া আইনসম্মত। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, একইভাবে ইসরায়েল জীবিত বন্দীদেরও ‘বিনিময়ের হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
পিসিএটিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক তাল স্টেইনার বলেন, ইসরায়েলের সব কারাগারেই ফিলিস্তিনি বন্দীদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করে রাখা হয়েছে। বর্তমান ও সাবেক বন্দী এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে তথ্য ফাঁস করে দেওয়া সদস্যরা—সবাই এসব কারাগারে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন।
তবে রাকেফেত কারাগারে নির্যাতনের ধরন আলাদা। স্টেইনার বলেন, মাটির নিচে মাসের পর মাস বন্দী থাকা মানুষগুলো সূর্যের আলোর দেখা পান না। এতে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। এমন শোষণমূলক ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকা কঠিন। এটি শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর।
মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে ইসরায়েলের তেল আবিবের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত রামলার বিভিন্ন কারাগারে গেলেও সেখানে রাকেফেত কারাগার সম্পর্কে কিছুই জানতেন না স্টেইনার। বেন-গভির এটি আবার চালু করার আদেশ দেওয়ার পর তিনি প্রথম কারাগারটির কথা শোনেন।
আরও পড়ুন‘আমরা কারাগারে নয়, ছিলাম কসাইখানায়’১৪ অক্টোবর ২০২৫মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে ইসরায়েলে তেল আবিবের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত রামলার বিভিন্ন কারাগারে গেলেও সেখানে রাকেফেত কারাগার সম্পর্কে কিছুই জানতেন না স্টেইনার। বেন-গভির এটি আবার চালু করার আদেশ দেওয়ার পর তিনি প্রথম কারাগারটির কথা শোনেন।পিসিএটিআই প্রতিষ্ঠার আগেই রাকেফেত কারাগার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি ইসরায়েলি কারাগার পরিষেবার প্রধান রাফায়েল সুইসার আত্মজীবনী এবং বিভিন্ন সংগ্রহশালা ঘেঁটে এটি সম্পর্কে জানতে পারেন পিসিএটিআইয়ের আইনজীবীরা।
সুইসা তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, ২৪ ঘণ্টা মাটির নিচে কাউকে বন্দী করে রাখা অত্যন্ত নিষ্ঠুর কাজ। যেকোনো মানুষের জন্য এটি অমানবিক, তিনি যত বড় অপরাধীই হোন না কেন।
চলতি গ্রীষ্মে পিসিএটিআইয়ের আইনজীবীদের রাকেফেত কারাগারে বন্দী দুই ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করতে বলা হয়। এরপরই প্রথম সেখানে যান আইনজীবী জেনান আবদু ও তাঁর এক সহকর্মী।
ভারী অস্ত্রে সজ্জিত মুখোশ পরা নিরাপত্তারক্ষীরা ওই দুই আইনজীবীকে মাটির নিচের ওই কারাগারে নিয়ে যান। তাঁরা ময়লা সিঁড়ি বেয়ে একটি কক্ষে প্রবেশ করেন। কক্ষটি ছিল মরা-পচা পোকামাকড়ে ভরা। সেখানকার শৌচাগার এত নোংরা ছিল যে তা ব্যবহারের উপযুক্ত নয়।
কারাগারের দেয়ালগুলোতে নজরদারি ক্যামেরা লাগানো ছিল, যা আইনত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। প্রহরীরা আইনজীবীদের সতর্ক করে বলেন, বন্দীদের সঙ্গে তাঁদের পরিবার কিংবা গাজা যুদ্ধের বিষয়ে কথা বললে সঙ্গে সঙ্গে এ সাক্ষাৎ বাতিল করা হবে।
ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত ফিলিস্তিনিদের বাসে করে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাঁদের স্বাগত জানান। ১৩ অক্টোবর ২০২৫, খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালের বাইরে