জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় গ্রিন বায়োটেকনোলজি নামের একটি কারখানায় চাঁদা না পেয়ে ফাঁকা ও ককটেল বিস্ফোরণ করে হামলা চালিয়েছে একদল দুষ্কৃতকারী। মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার নাংলা ইউনিয়নের মুন্সী নাংলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে গ্রামবাসীর সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার নাংলা ইউনিয়নের মুন্সী নাংলা গ্রামের জান্নাতুল হুমায়রা (২২), বরগুনার মরখালী গ্রামের মো.

মাসুম (২৭), মেলান্দহের বাসুদেবপুর গ্রামের মোহাম্মদ সানি মিয়া (২২), একই উপজেলার বয়রাডাঙ্গা গ্রামের লিখন আহমেদ (১৯) ও একই গ্রামের মোশারফ মিয়া (২৭)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে গেছে, আজ ভোরে একদল দুষ্কৃতকারী গ্রিন বায়োটেকনোলজি কারখানার সামনে গিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও দুটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে। এরপর কারখানায় প্রধান ফটকে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে গ্রামবাসী এগিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন দুষ্কৃতকারীদের ধাওয়া দিয়ে তিনজনকে আটক করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। আগেও একাধিকবার কারখানাটিতে চাঁদা না পেয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের চেষ্টা করেছে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

গ্রিন বায়োটেকনোলজি কারখানার ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে আজ ভোরে পরিকল্পিতভাবে চিহ্নিত সস্ত্রাসীরা রড, হকিস্টিক, পেট্রলবোমা, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কারখানায় হামলা চালায়। প্রথমে তারা দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে কারখানার ফটকে ভাঙচুর করে। আগেও এই দলটি চাঁদার দাবিতে হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় তাঁরা থানায় মামলা করেছেন।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু মেলান্দহ নয়, বরং জামালপুর জেলার গ্রামীণ অর্থনীতি তথা সারা দেশে কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। শত শত পরিবার কারখানার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। অথচ কিছু দুষ্কৃতকারীর অব্যাহত সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কারখানা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এই ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ না হলে উদ্যোক্তারা উপজেলা শহরে প্রতিষ্ঠান করতে নিরুৎসাহিত হবেন।’

মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাস বলেন, অস্ত্রধারী একদল চিহ্নিত দুষ্কৃতকারী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কারখানায় হামলার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ও এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আটকের সময় দুষ্কৃতকারীরা পুলিশের কাজেও বাধা দেয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তরুণ অবরুদ্ধ, পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা

ফরিদপুরের নগরকান্দায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক তরুণকে অবরুদ্ধ করে একদল লোক। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার গোড়াইল বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে থানায় আনে।

এদিকে ওই ঘটনার সময় গোড়াইল বাজারের অদূরে ওই তরুণের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করে একদল লোক। এ সময় তারা বাড়ির সামনে একটি পাটখড়ির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

গ্রেপ্তার তরুণ (২১) গত বছর নগরকান্দা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি গোড়াইল বাজারে একটি ফার্মেসিতে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। থানায় আনার পর তাঁর বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণ তাঁর ফেসবুক আইডিতে কাবা শরিফের ছবি বিকৃত করে ধর্মীয় অবমাননাকর বাক‌্য লিখে পোস্ট করেন। গতকাল বিকেলে ওই মন্তব্যের স্ত্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে। সন্ধ্যার পর থেকে গোড়াইল বাজার এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন এসে ওই তরুণের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই বাজারের কয়েকজন ওষুধের দোকানের সাটার নামিয়ে ওই তরুণকে আটকে রাখেন। এর মধ্যেই বাজারে জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পরে বিষয়টি নগরকান্দা থানার পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নগরকান্দার ইউএনও দবির উদ্দিন ও নগরকান্দা থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরিস্থিতি ততক্ষণে উতপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ওষুধের দোকান জনতা ঘিরে ফেলে। দোকানের সামনে থেকে হ্যান্ডমাইকে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য জনতার উদ্দেশে কথা বলেন স্থানীয় আলেম সমাজের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিরা। এ সময় ইউএনও দবির উদ্দিন এক দিনের মধ্যে দৃশ্যমান শাস্তির আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই তরুণকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়।

লস্করদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিরু ফকির বলেন, পুলিশ ওই তরুণকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর গোড়াইল বাজার থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ির দিকে ছুটে যায় একদল লোক। তারা ওই তরুণের বাড়ি ভাঙচুর করে। ফিরে আসার পথে ওই বাড়ির সামনে একটি পাটখড়ির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় সেই আগুন নেভানো হয়।

নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাইবার সুরক্ষা আইনের ২৬ ও ২৭ ধারায় ওই তরুণকে আসামি করে মামলা করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ওই তরুণের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেই স্কিনশর্ট তিনি দেখেছেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নানা ধরনের গুজব ছড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ দল দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। প্রকৃত তথ্য উদ্‌ঘাটন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওই তরুণের বাড়িতে ভাঙচুরের বিষয়ে ওসি রেজাউল করিম বলেন, ঘটনাটা তেমন বড় কিছু নয়। ওই এলাকায় বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফরিদপুরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তরুণ অবরুদ্ধ, পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা