ফরিদপুরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তরুণ অবরুদ্ধ, পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা
Published: 25th, November 2025 GMT
ফরিদপুরের নগরকান্দায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক তরুণকে অবরুদ্ধ করে একদল লোক। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার গোড়াইল বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে থানায় আনে।
এদিকে ওই ঘটনার সময় গোড়াইল বাজারের অদূরে ওই তরুণের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করে একদল লোক। এ সময় তারা বাড়ির সামনে একটি পাটখড়ির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
গ্রেপ্তার তরুণ (২১) গত বছর নগরকান্দা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি গোড়াইল বাজারে একটি ফার্মেসিতে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। থানায় আনার পর তাঁর বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণ তাঁর ফেসবুক আইডিতে কাবা শরিফের ছবি বিকৃত করে ধর্মীয় অবমাননাকর বাক্য লিখে পোস্ট করেন। গতকাল বিকেলে ওই মন্তব্যের স্ত্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে। সন্ধ্যার পর থেকে গোড়াইল বাজার এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন এসে ওই তরুণের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই বাজারের কয়েকজন ওষুধের দোকানের সাটার নামিয়ে ওই তরুণকে আটকে রাখেন। এর মধ্যেই বাজারে জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পরে বিষয়টি নগরকান্দা থানার পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নগরকান্দার ইউএনও দবির উদ্দিন ও নগরকান্দা থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরিস্থিতি ততক্ষণে উতপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ওষুধের দোকান জনতা ঘিরে ফেলে। দোকানের সামনে থেকে হ্যান্ডমাইকে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য জনতার উদ্দেশে কথা বলেন স্থানীয় আলেম সমাজের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিরা। এ সময় ইউএনও দবির উদ্দিন এক দিনের মধ্যে দৃশ্যমান শাস্তির আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই তরুণকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়।
লস্করদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিরু ফকির বলেন, পুলিশ ওই তরুণকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর গোড়াইল বাজার থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ির দিকে ছুটে যায় একদল লোক। তারা ওই তরুণের বাড়ি ভাঙচুর করে। ফিরে আসার পথে ওই বাড়ির সামনে একটি পাটখড়ির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় সেই আগুন নেভানো হয়।
নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাইবার সুরক্ষা আইনের ২৬ ও ২৭ ধারায় ওই তরুণকে আসামি করে মামলা করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ওই তরুণের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেই স্কিনশর্ট তিনি দেখেছেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নানা ধরনের গুজব ছড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ দল দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই তরুণের বাড়িতে ভাঙচুরের বিষয়ে ওসি রেজাউল করিম বলেন, ঘটনাটা তেমন বড় কিছু নয়। ওই এলাকায় বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগরক ন দ
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে গরুচোর সন্দেহে পিটুনিতে একজন নিহত, তিনজন আহত
ফরিদপুরের নগরকান্দায় গরুচোর সন্দেহে গ্রামবাসীর পিটুনিতে শাহীন মিয়া (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের ভোজেরডাঙ্গী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত শাহীন মিয়া রামনগর ইউনিয়নের গজগাহ গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে। আহতরা হলেন একই ইউনিয়নের মাশাউজান গ্রামের পারভেজ মিয়া (২৪), সুমন শেখ (২২) এবং কুঞ্জনগর গ্রামের ইনামুল সরদার (২৬)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘটনায় মাশাউজান গ্রামের বাসিন্দা মাহিন্দ্রাচালক সবুজ মোল্লা (২৬) পালিয়ে গেছেন। আহত তিনজনকে পুলিশ পাহারায় নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ভোজেরডাঙ্গী গ্রাম মূলত নির্জন এলাকা এবং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গত তিন মাসে গ্রামের বাসিন্দা মিনা ফকিরের দুটি, সাহাজান মাতুব্বরের দুটি এবং লাল মিয়ার দুটি গরুসহ মোট ছয়টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। গ্রামবাসী পাহারার ব্যবস্থা করেছিলেন। গতকাল গভীর রাতে মাহিন্দ্রায় চড়ে পাঁচজন গ্রামে ঢোকেন। তাঁদের নিয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। গ্রামবাসী তাঁদের ধাওয়া দিয়ে চারজনকে আটক করেন। তবে একজন পালিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ সময় অন্তত দুই শতাধিক মানুষ জড়ো হয়। তারা ওই চার ব্যক্তিকে পিটুনি দেয়। আধা ঘণ্টা ধরে চলে পিটুনি। পরে পুলিশ আসার খবর পেয়ে স্থানীয়রা চারজনকে মোটা রশি দিয়ে বেঁধে গ্রামীণ সড়কের ওপর ফেলে রাখে।
ভোজেরডাঙ্গী এলাকায় গ্রাম পুলিশের সদস্য বায়েজিদ মোল্লা বলেন, আজ ভোর পাঁচটার দিকে তিনি আহত শাহীনকে নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে আনার অনেক আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পরে নগরকান্দা থানা-পুলিশ লাশটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শেখ গিয়াসউদ্দিন বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে খবর পেয়ে তিনি গ্রাম পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠান এবং নিজেও যান। পাশাপাশি থানা-পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ এসে আহতদের উদ্ধার করে নেয়।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘গত কয়েক মাসে এলাকায় বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। এ জন্য গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত ছিল। রাতে ওই ব্যক্তিদের এমন অবস্থায় দেখে তারা চোর ভেবে মারধর করেন। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে চারজনকে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পাই। তখন তাদের আশপাশে কেউ ছিলেন না। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’