গণ–অভ্যুত্থানের পর নারীর অধিকারের বিষয়টি হারিয়ে যাচ্ছে
Published: 28th, November 2025 GMT
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীর উপস্থিতি এখনো পুরুষের সমান নয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর নারীর অধিকারের বিষয়টি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। নারী অধিকার নিয়ে বিভিন্নভাবে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। নারীর প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিতে তাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দরকার।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘ফেমিনিস্ট কো ক্রিয়েশন ক্যাফে’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এমন কথা উঠে আসে। কর্মশালাটির আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অ্যাডভাইজার দ্রাগন পোপোভিক। তিনি বলেন, নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এ ধরনের উদ্যোগ ইউরোপীয় দেশগুলোতেও কম আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে এই উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোও নারীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করবে বলে মনে করেন তিনি।
চার পর্বের এই অংশগ্রহণমূলক কর্মশালায় অংশ নেন শতাধিক তরুণ অ্যাকটিভিস্ট, উন্নয়ন অংশীজন, শিক্ষাবিদ ও নারী অধিকারকর্মীরা।
তাঁরা নারীবান্ধব আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা, উত্তরাধিকারসহ সব সম্পদে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার, রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ে ও সর্বস্তরের নির্বাচনে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং প্রতিবন্ধীবান্ধব পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
নারীদের মতামত তুলে ধরার জন্য অংশগ্রহণমূলক কর্মশালা আয়োজনের প্রশংসা করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের ‘ব্যালট প্রজেক্টের’ প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা আন্দ্রেস কেসিলো। তিনি বলেন, এর ফলে নারী আসলে কী চায়, তা রাজনৈতিক দলগুলো বুঝতে পারবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি মনে করে, নারীর এই মতামতগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে তারা তাদের মেনিফেস্টোতে সেটা যুক্ত করবে, এ উদ্যোগ সেই পথকে উন্মুক্ত করবে।
বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পথচলাকে বৈশ্বিক অঙ্গনের সঙ্গে তুলনা করে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন ইউএন উইমেনের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ তপতী সাহা। তিনি বলেন, নারীর অধিকার বাস্তবায়নের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।
জরিপ ও অংশগ্রহণমূলক কর্মশালার মাধ্যমে নারীদের অধিকার আদায়ে চ্যালেঞ্জ, প্রয়োজনীয়তা এবং সে আলোকে পরামর্শ উঠে আসবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক। তিনি এ প্রজেক্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘উইমেন মেনিফেস্টো ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্রের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইশরাত জাহান।
এই গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক শাইখ ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পরে নারীর কথাগুলোকে আমরা হারিয়ে যেতে দেখছি। নারীরা কী চায়, তারা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কী প্রতিশ্রুতি চায়, সে প্রসঙ্গে সারা দেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার নারীর মতামত এই জরিপের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। যেখানে মতামত দেবেন সমাজের উচ্চশিক্ষিত থেকে শুরু করে গ্রামীণ, পাহাড়ি ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নারীরা। রাজনৈতিক দলগুলো যাতে তাদের মেনিফেস্টোতে নারীদের অধিকারের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয় সেই প্রত্যাশা থাকবে।’
অধ্যাপক শাইখ ইমতিয়াজ জানান, গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে বিভাগের ডিজাইন থিঙ্কিং ইনোভেশন অ্যান্ড জেন্ডার ল্যাবের তত্ত্বাবধানে।
সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন সাবিহা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এখনো নারীর উপস্থিতি পুরুষের সমান নয়। এর পেছনে রয়েছে, যথাযথ আইনি কাঠামোর অভাব, কাঠামোগত বৈষম্য, জনপরিসরে নারীর চলাচলের সীমাবদ্ধতা, বৈষম্যমূলক সামাজিক রীতি ও প্রথা, অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভরতার অভাব এবং নারীকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কার্যক্রমে পর্যাপ্ত অর্থায়নের ঘাটতি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইম ন অ য ন ড জ ন ড র স ট ড জ ব ভ গ র উদ য গ মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় জার্মানি
বাংলাদেশে আসন্ন এয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক হবে এমনটি প্রত্যাশা করছে জার্মানি।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ এই প্রত্যাশা করেন।
আরো পড়ুন:
ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন দিলেন ট্রাম্প
আখাউড়া স্থলবন্দর পরিদর্শন করলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার
তিনি বলেন, “নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। সেইসঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ৬০ শতাংশ ভোট পড়বে, এটা আমরাও প্রত্যাশা করি। ভোটের ক্যাম্পেইন করার সময় যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কম হয়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।"
ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।
ঢাকা/রায়হান/মাসুদ