রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল এবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ডিরেক্ট রিলিফ থেকে বিনামূল্যে উচ্চ মূল্যের আধুনিক ইনজেকশন পেয়েছে। বাতসহ বিভিন্ন অটোইমিউন রোগে ব্যবহৃত হয় অ্যাডালিমুমাব নামের এই বায়োলজিক ওষুধ। রামেক হাসপাতাল ৯০০ পিস ইনজেকশন পেয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রতিটি ইনজেকশনের দাম প্রায় ৪ লাখ টাকা হলেও রোগীরা তা পাবেন বিনামূল্যেই।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অ্যাডালিমুমাব মূলত রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস, অ্যাংকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস, জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিসসহ কয়েক রকম অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। সাধারণ ওষুধে যাদের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসে না, তাদের জন্য এই ইনজেকশন কার্যকর। একজন রোগীর একাধিক ডোজ নেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। বায়োলজিক হওয়ায় ওষুধটির উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

রামেকের সঙ্গে ডিরেক্ট রিলিফের যোগাযোগ শুরু হয় কলেজের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শীর্ষ শ্রেয়ানের হাত ধরে। গত জুলাইয়ে এমবিবিএস শেষ করা শীর্ষ বর্তমানে রামেক হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক। পঞ্চম বর্ষে পড়ার সময় তিনি ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএসও) গবেষকদলে যুক্ত হন। তাদের যৌথ গবেষণা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয় এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরে সেরা গবেষণার স্বীকৃতি পায়।

ডিরেক্ট রিলিফের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক গর্ডন উইলকক গবেষণাপত্রটি দেখে শীর্ষকে গত মার্চে ই-মেইল করেন। তিনি জানান, সংস্থাটি রামেককে স্ট্রোক চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যাল্টেপ্লেস দিতে চায়। শীর্ষ বিষয়টি জানালে এতে যুক্ত হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা.

আজিজুল হক আযাদ এবং পরে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ।

এ উদ্যোগে গত ২৫ আগস্ট রামেকে পৌঁছায় আড়াই হাজার ভায়াল অ্যাল্টেপ্লেস, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা। স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ফলে জমাট বাঁধা রক্ত গলাতে ব্যবহৃত এই ওষুধের প্রায় ৬০ শতাংশ ইতোমধ্যেই রোগীদের প্রয়োগ করা হয়েছে রামেক হাসপাতালে।

এ সফলতার পর বাতের ওষুধ আনার উদ্যোগ নেন অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আযাদ। দুই মাস আগে তিনি ডিরেক্ট রিলিফের কাছে আধুনিক বায়োলজিক ইনজেকশন সরবরাহের অনুরোধ করেন। সংস্থাটি দ্রুত সাড়া দেয়। ওষুধটি আনতে প্রয়োজন হয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন।

এরপর গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) ওষুধগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় পৌঁছায়। কাস্টমস প্রক্রিয়া শেষ করে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে ৯০০ পিস ইনজেকশন রামেক হাসপাতালে আনা হয়। ইনজেকশনগুলোর মেয়াদ আগামী বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময়সীমার মধ্যেই রোগীদের দেওয়া হবে।

অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আযাদ বলেন, “বাংলাদেশে অ্যাডালিমুমাবের কপি সংস্করণ আছে। এটাও খুব দামি। গরিব মানুষের নাগালের বাইরে। ডিরেক্ট রিলিফের এই অনুদানের ফলে অনেক রোগী দীর্ঘ সময় ব্যথামুক্ত থাকতে পারবেন।”

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ জানিয়েছেন, এর আগে পাওয়া ১৭ কোটি টাকার স্ট্রোক ও হৃদরোগের ওষুধ এখনো বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। নতুন যোগ হওয়া বাতের ইনজেকশন অসচ্ছল রোগীদের জন্য আশীর্বাদ হবে। কোন রোগী ইনজেকশন পাবেন, তা মেডিসিন ইউনিট-৫-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আযাদ নির্ধারণ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা/কেয়া/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইনজ কশন প ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় দলে বাইরে অস্থিরতা, ভেতরে ‘ওয়েল সেট’!

প্রকাশ‌্যে বিরোধ সামনে নিয়ে এসেছেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ও লিটন দাস। একজন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক। আরেকজন জাতীয় দলের অধিনায়ক। দল নির্বাচন নিয়ে দুজন দুই মেরুতে। কেউ কাউকেই সম্মান দিয়েও কথা বলছেন না।

মাঠে সেই বিরোধের কী প্রভাব পড়েছে? কিংবা ড্রেসিংরুমে? উপমহাদেশের ক্রিকেটের যে সংস্কৃতি, আরও গভীরে গেলে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের যে সংস্কৃতি তাতে দল নির্বাচনের মতের পার্থক‌্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু নির্বাচক-অধিনায়ক প্রক‌্যাশেই একে অপরকে দোষারোপ করছেন তা কিছুটা বিরল। মাঠের বাইরে এই অস্থিরতার প্রভাব কি দলের ভেতরে পড়ছে?

আরো পড়ুন:

লিটনের কাঠগড়ায় শুরুর ব‌্যাটিং

বিব্রতকর পরাজয়ের সঙ্গে মিলল ‘ভুয়া, ভুয়া’ দুয়োধ্বনি

ওই সংস্কৃতির জোর দিয়েই বলা যায়, বাইরের অস্থিরতার বড় প্রভাব পড়েছে দলের ভেতরেও। জয়-পরাজয় ছাপিয়ে সেই অস্থিরতাই বড় আতঙ্কের নাম। যদিও আয়ারল‌্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম‌্যাচে ব‌্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ানো তাওহীদ হৃদয় বিষয়টি স্বীকারই করলেন না, ‘‘দল তো ওয়েল সেট।’’

তাওহীদ অবশ‌্য দলের কম্বিনেশন নিয়ে ওয়েল সেটের কথা বলেছেন। কিন্তু সেই কম্বিনেশনের কারণেই তো এতো অস্থিরতা, বিরোধ। শামীম হোসেন পাটোয়ারীকে দলে না নেওয়াতে নির্বাচক-অধিনায়কের বিরোধ। বিশ্বকাপের আগে শেষ সিরিজে যা প্রকট আকারেই ধারণ করলো। এই সময়ে দলের এমন বিবর্ণ রূপ দেখে শঙ্কার জায়গা আছে বটে।

অথচ এই বছরই টানা চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। পারফরম‌্যান্সের সূচক উঠা-নামা করলেও ভারসাম‌্যপূর্ণ দল গড়ে তুলতে পেরেছিলেন অধিনায়ক-কোচ। কিন্তু সেই দলেই এখন নানা কারণে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে তাওহীদের কথায় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি মনে হলো না মোটেও, “আমার কাছে এরকম মনে হয়নি (বিশ্বকাপের আগে শঙ্কা জাগছে)। দল তো ওয়েল সেট। আপনি যদি দেখেন, সব ক্রিকেটার গত এক বছরে অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছে। সবাই পর্যাক্রমে খেলেছ ও ভালো খেলছে। সব ক্রিকেটার যদি সুযোগ পায়, অবশ্যই কাজে লাগাবে আর প্রত্যেকটা ক্রিকেটার চায় যে, সুযোগ যখনই আসুক, সেটা যেন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে।”

এ বছর টি-টোয়েন্টিতে বেশি সময় দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টিতে পা রাখার পর এবারই সবচেয়ে বেশি ২৮ ম‌্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর আগে গত বছর খেলেছিল ২৪ ম‌্যাচ। এ বছর ২৮ টি-টোয়েন্টির ১৩টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ১৪টিতে। ১টিতে ফল আসেনি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম‌্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর আয়ারল‌্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম‌্যাচেই হার। টানা চার টি-টোয়েন্টিতে হারের পর দল লাগছে অগোছালো। সাম্প্রতিক সময়টা খারাপ লেগেও তাওহীদ মনে করিয়ে দিলেন, অতীতের সাফল‌্য। সঙ্গে একটি জয়ই পুরো দলকে ছন্দে ফেরাবে বলে বিশ্বাস তার, ‘‘দলটা ভালো ছিল। এখনও ভালোই আছে। আমরা কখনো তো ভাবছি না যে, দল আমাদের ডাউন হয়ে গেছে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমরা টানা চারটা সিরিজ জিতেছি। একটা-দুইটা সিরিজ বা চারটা-তিনটা ম্যাচ খারাপ যেতে পারে। টি-টোয়েন্টি খেলাটা ছন্দের খেলা খেলা। আমরা হারছি, আবার যখন দেখবেন যে আমরা জিততে শুরু করি তখন দেখবেন কন্টিনিউ চলতে থাকবে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ