সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে সুদানের যুদ্ধের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।

হোয়াইট হাউস আগে থেকেই সুদানের জটিল পরিস্থিতি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিল। বিশেষ করে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) ও র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যকার চলমান যুদ্ধ নিয়ে। তবে সৌদি যুবরাজের সফরের পর হোয়াইট হাউসের সেই আগ্রহ আরও বেড়েছে বলে মনে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লোহিত সাগরে জাতীয় নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সন্ত্রাসবাদ দমন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেওয়ার কারণে তাদের অগ্রাধিকারও সেভাবেই নির্ধারিত হচ্ছে।

আগেও হোয়াইট হাউস সতর্ক করে বলেছিল, সুদানের যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। শান্তির পথ তৈরি করতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তথাকথিত ‘কোয়াড’ বা যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমন্বিত মঞ্চযুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে।

আরও পড়ুনসুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন০২ নভেম্বর ২০২৫

গত সপ্তাহে ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, সুদানের যুদ্ধ আগে তার ‘এজেন্ডায় ছিল না’ এবং বিষয়টি তিনি যুবরাজের অনুরোধের পর গুরুত্ব দিয়েছেন। ট্রাম্পের এ বক্তব্য কোনো বড় কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না; বরং একে সৌদি যুবরাজের প্রতি সৌজন্য ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ বলেই ধরা যেতে পারে।

এটি মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য বিশ্বাসযোগ্য আঞ্চলিক নেতা ও শান্তি উদ্যোগের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সামনে আসার সুযোগ, যার ওপর ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে নির্ভর করতে পারে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প আঞ্চলিক কূটনীতিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন ভূমিকার প্রতি তার সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার আগ্রহের প্রতিফলন দেখিয়েছেন।

ট্রাম্পের বক্তব্যের পর সুদান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতাও বেড়েছে। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন, যা সুদান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর সম্পৃক্ততা এবং ‘কোয়াড’ অংশীদারদের সঙ্গে চলমান সমন্বয়ের ইঙ্গিত দেয়।

জাতিসংঘ বারবার বলেছে, সুদান বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটগুলোর একটির মুখে রয়েছে। আগেভাগে হস্তক্ষেপ করা গেলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেত। যেমন সম্প্রতি এল-ফাশির শহরটি আরএসএফ বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার ঘটনা ঠেকানো গেলে নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা রোধ করা সম্ভব হতো।

তবে নতুন করে সক্রিয় হওয়া এই উদ্যোগ এসেছে অত্যন্ত দেরিতে, এক সংকটময় সময়ে। জাতিসংঘ বারবার বলেছে, সুদান বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটগুলোর একটির মুখে রয়েছে। আগেভাগে হস্তক্ষেপ করা গেলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেত। যেমন সম্প্রতি এল-ফাশির শহরটি আরএসএফ বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার ঘটনা ঠেকানো গেলে নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা রোধ করা সম্ভব হতো। একই সঙ্গে মানবিক বিপর্যয়ও কিছুটা কমানো যেত। দেশটিতে এখন বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের তীব্র সংকট, জরুরি অবকাঠামোর ধ্বংস এবং ব্যাপক হারে বাস্তুচ্যুতিও এই মানবিক বিপর্যয়ের অন্তর্ভুক্ত।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুদানের পরিস্থিতিকে প্রায়ই ‘ভুলে যাওয়া যুদ্ধ’ বলা হয়। কারণ, বড় বড় বৈশ্বিক শক্তি একে তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নিচের দিকে রাখে। শান্তিপ্রক্রিয়ায় ট্রাম্পের যুক্ত হওয়া হয়তো সাময়িকভাবে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ফিরিয়ে আনবে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মনোযোগ আবারও মলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

আরও পড়ুনসুদানে জেনারেলদের এই যুদ্ধে কেউ কি জয়ী হবে?৩০ এপ্রিল ২০২৩

সুদানের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে দেশটির রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব কাউন্সিল সবার আগে সৌদি আরবের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিও তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

এর আগের কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা কোয়াডের মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পরোক্ষভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছিল। এ অবস্থান পরিবর্তনের কারণ হতে পারে ট্রাম্পের সরাসরি তত্ত্বাবধানে শান্তিপ্রক্রিয়াটি নতুনভাবে গুরুত্ব পাওয়া। কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা মানতে গিয়ে দেশের ভেতরে যে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সে বিষয়ে বুরহানকে দেওয়া কোনো আশ্বাস।

সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে বুরহানের এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টের পর দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ কিছুটা কমে আসে। সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর (এসএএফ) সমর্থকেরা ও সুদানের ইসলামিক মুভমেন্টের মহাসচিব আলী কার্তিও নতুন করে স্থিতিশীলতার আশা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে আরএসএফ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানালেও ‘যারা সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে’ তাদের ‘শান্তির পথে বাধা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। একই সঙ্গে তারা সংকটের মূল কারণগুলো সমাধান এবং একটি ‘নতুন সুদান’ গড়ার আকাঙ্ক্ষার কথাও তুলে ধরে।

এরপর কী ঘটবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সৌদি-ট্রাম্প সমঝোতা যে কোয়াডের জন্য হোয়াইট হাউসের পরিকল্পিত ও সমর্থিত রূপরেখাকে মৌলিকভাবে বদলে দেবে—এমনটা ধরে নেওয়া ভুল হবে। তবে ট্রাম্পের সম্পৃক্ততা কোনো পক্ষকে বাড়তি সুবিধা না দিলেও বা নির্দিষ্ট অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ না করলেও সমঝোতা বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে পারে।

সংক্ষিপ্ত মেয়াদে সমাধান ছাড়াও সুদানে শান্তির পথে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে। যেসব পক্ষ যুদ্ধ থেকে লাভবান হচ্ছে, তারা হয়তো শান্তি উদ্যোগের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হবে। শান্তি রক্ষা করা সহজ হবে না। যদি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তবে এটি মানবিক সুযোগ তৈরি করতে পারে। মধ্যস্থতাকারী গোষ্ঠী যুদ্ধরত পক্ষগুলোর কাছ থেকে অর্থবহ ছাড় বা সমঝোতা বের করতে সম্মিলিত চাপ প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু মূল ক্ষমতার কাঠামোয় পরিবর্তন না–ও আসতে পারে। যুদ্ধবিরতি কেবল সাময়িক হতে পারে এবং রাজনৈতিক আলোচনার শুরুতে তা ভেঙেও যেতে পারে।

ট্রাম্পের সম্পৃক্ততা দুটি দিকই বহন করে। একদিকে দেশটির বাস্তবতায় এটা রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাবকে দৃঢ় করতে পারে, আবার সুদানের ভবিষ্যৎকে দেনদরবারের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গেও জড়িয়ে দিতে পারে।

বুরহানের প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া শান্তির ক্ষেত্রে একটি অর্থবহ সুযোগের ইঙ্গিত হলেও সফলতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন সত্যিকারের প্রয়োগ, সুদানিদের নেতৃত্বে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপান্তর ও নিশ্চয়তা।

মুহূর্তটি সঠিকভাবে কাজে লাগালে সুদান সম্ভবত শেষ পর্যন্ত নাগরিক নেতৃত্বাধীন ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারবে। তা না হলে সুযোগটি আবারও ট্র্যাজেডিতে পরিণত হতে পারে।

ওসামা আবুজাইদ গবেষক, গ্রাসরুটস ও মানবিক নিরাপত্তা প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর

মিডিল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র জন ত ক ব রহ ন র জন য য বর জ ম নব ক প রক শ উদ য গ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের এজেন্ডায় সুদানের গৃহযুদ্ধ, কী ঘটতে যাচ্ছে

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে সুদানের যুদ্ধের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।

হোয়াইট হাউস আগে থেকেই সুদানের জটিল পরিস্থিতি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিল। বিশেষ করে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) ও র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যকার চলমান যুদ্ধ নিয়ে। তবে সৌদি যুবরাজের সফরের পর হোয়াইট হাউসের সেই আগ্রহ আরও বেড়েছে বলে মনে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লোহিত সাগরে জাতীয় নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সন্ত্রাসবাদ দমন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেওয়ার কারণে তাদের অগ্রাধিকারও সেভাবেই নির্ধারিত হচ্ছে।

আগেও হোয়াইট হাউস সতর্ক করে বলেছিল, সুদানের যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। শান্তির পথ তৈরি করতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তথাকথিত ‘কোয়াড’ বা যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমন্বিত মঞ্চযুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে।

আরও পড়ুনসুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন০২ নভেম্বর ২০২৫

গত সপ্তাহে ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, সুদানের যুদ্ধ আগে তার ‘এজেন্ডায় ছিল না’ এবং বিষয়টি তিনি যুবরাজের অনুরোধের পর গুরুত্ব দিয়েছেন। ট্রাম্পের এ বক্তব্য কোনো বড় কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না; বরং একে সৌদি যুবরাজের প্রতি সৌজন্য ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ বলেই ধরা যেতে পারে।

এটি মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য বিশ্বাসযোগ্য আঞ্চলিক নেতা ও শান্তি উদ্যোগের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সামনে আসার সুযোগ, যার ওপর ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে নির্ভর করতে পারে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প আঞ্চলিক কূটনীতিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন ভূমিকার প্রতি তার সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার আগ্রহের প্রতিফলন দেখিয়েছেন।

ট্রাম্পের বক্তব্যের পর সুদান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতাও বেড়েছে। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন, যা সুদান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর সম্পৃক্ততা এবং ‘কোয়াড’ অংশীদারদের সঙ্গে চলমান সমন্বয়ের ইঙ্গিত দেয়।

জাতিসংঘ বারবার বলেছে, সুদান বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটগুলোর একটির মুখে রয়েছে। আগেভাগে হস্তক্ষেপ করা গেলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেত। যেমন সম্প্রতি এল-ফাশির শহরটি আরএসএফ বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার ঘটনা ঠেকানো গেলে নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা রোধ করা সম্ভব হতো।

তবে নতুন করে সক্রিয় হওয়া এই উদ্যোগ এসেছে অত্যন্ত দেরিতে, এক সংকটময় সময়ে। জাতিসংঘ বারবার বলেছে, সুদান বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটগুলোর একটির মুখে রয়েছে। আগেভাগে হস্তক্ষেপ করা গেলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেত। যেমন সম্প্রতি এল-ফাশির শহরটি আরএসএফ বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার ঘটনা ঠেকানো গেলে নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা রোধ করা সম্ভব হতো। একই সঙ্গে মানবিক বিপর্যয়ও কিছুটা কমানো যেত। দেশটিতে এখন বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের তীব্র সংকট, জরুরি অবকাঠামোর ধ্বংস এবং ব্যাপক হারে বাস্তুচ্যুতিও এই মানবিক বিপর্যয়ের অন্তর্ভুক্ত।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুদানের পরিস্থিতিকে প্রায়ই ‘ভুলে যাওয়া যুদ্ধ’ বলা হয়। কারণ, বড় বড় বৈশ্বিক শক্তি একে তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নিচের দিকে রাখে। শান্তিপ্রক্রিয়ায় ট্রাম্পের যুক্ত হওয়া হয়তো সাময়িকভাবে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ফিরিয়ে আনবে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মনোযোগ আবারও মলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

আরও পড়ুনসুদানে জেনারেলদের এই যুদ্ধে কেউ কি জয়ী হবে?৩০ এপ্রিল ২০২৩

সুদানের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে দেশটির রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব কাউন্সিল সবার আগে সৌদি আরবের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিও তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

এর আগের কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা কোয়াডের মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পরোক্ষভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছিল। এ অবস্থান পরিবর্তনের কারণ হতে পারে ট্রাম্পের সরাসরি তত্ত্বাবধানে শান্তিপ্রক্রিয়াটি নতুনভাবে গুরুত্ব পাওয়া। কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা মানতে গিয়ে দেশের ভেতরে যে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সে বিষয়ে বুরহানকে দেওয়া কোনো আশ্বাস।

সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে বুরহানের এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টের পর দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ কিছুটা কমে আসে। সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর (এসএএফ) সমর্থকেরা ও সুদানের ইসলামিক মুভমেন্টের মহাসচিব আলী কার্তিও নতুন করে স্থিতিশীলতার আশা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে আরএসএফ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানালেও ‘যারা সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে’ তাদের ‘শান্তির পথে বাধা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। একই সঙ্গে তারা সংকটের মূল কারণগুলো সমাধান এবং একটি ‘নতুন সুদান’ গড়ার আকাঙ্ক্ষার কথাও তুলে ধরে।

এরপর কী ঘটবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সৌদি-ট্রাম্প সমঝোতা যে কোয়াডের জন্য হোয়াইট হাউসের পরিকল্পিত ও সমর্থিত রূপরেখাকে মৌলিকভাবে বদলে দেবে—এমনটা ধরে নেওয়া ভুল হবে। তবে ট্রাম্পের সম্পৃক্ততা কোনো পক্ষকে বাড়তি সুবিধা না দিলেও বা নির্দিষ্ট অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ না করলেও সমঝোতা বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে পারে।

সংক্ষিপ্ত মেয়াদে সমাধান ছাড়াও সুদানে শান্তির পথে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে। যেসব পক্ষ যুদ্ধ থেকে লাভবান হচ্ছে, তারা হয়তো শান্তি উদ্যোগের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হবে। শান্তি রক্ষা করা সহজ হবে না। যদি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তবে এটি মানবিক সুযোগ তৈরি করতে পারে। মধ্যস্থতাকারী গোষ্ঠী যুদ্ধরত পক্ষগুলোর কাছ থেকে অর্থবহ ছাড় বা সমঝোতা বের করতে সম্মিলিত চাপ প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু মূল ক্ষমতার কাঠামোয় পরিবর্তন না–ও আসতে পারে। যুদ্ধবিরতি কেবল সাময়িক হতে পারে এবং রাজনৈতিক আলোচনার শুরুতে তা ভেঙেও যেতে পারে।

ট্রাম্পের সম্পৃক্ততা দুটি দিকই বহন করে। একদিকে দেশটির বাস্তবতায় এটা রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাবকে দৃঢ় করতে পারে, আবার সুদানের ভবিষ্যৎকে দেনদরবারের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গেও জড়িয়ে দিতে পারে।

বুরহানের প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া শান্তির ক্ষেত্রে একটি অর্থবহ সুযোগের ইঙ্গিত হলেও সফলতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন সত্যিকারের প্রয়োগ, সুদানিদের নেতৃত্বে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপান্তর ও নিশ্চয়তা।

মুহূর্তটি সঠিকভাবে কাজে লাগালে সুদান সম্ভবত শেষ পর্যন্ত নাগরিক নেতৃত্বাধীন ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারবে। তা না হলে সুযোগটি আবারও ট্র্যাজেডিতে পরিণত হতে পারে।

ওসামা আবুজাইদ গবেষক, গ্রাসরুটস ও মানবিক নিরাপত্তা প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর

মিডিল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ