ভোলায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৩ জেলে ভারতের কারাগারে বন্দী
Published: 1st, December 2025 GMT
সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ২০ দিন ধরে নিখোঁজ ভোলার লালমোহনের ১৩ জেলের খোঁজ মিলেছে। আজ সোমবার দুপুরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন তাঁরা। হঠাৎ বিকল হয়ে যাওয়া তাঁদের ট্রলার স্রোতের টানে ভারতের সীমানায় ঢুকে পড়ে। বর্তমানে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলে আটক রয়েছেন বলে ভিডিও কলে জানিয়েছেন।
ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌড়নগর ইউনিয়নে ‘মা বাবার দোয়া’ নামের একটি ট্রলার গত ১০ নভেম্বর রাতে ১৩ জন জেলে নিয়ে চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ ঘাট থেকে সাগরে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পাঁচ দিন পরে ফিরে আসার কথা থাকলেও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁদের কোনো খোঁজ না মেলায় পরিবারগুলো হতাশ হয়ে পড়ে।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চরকালাচাঁদ গ্রামের মো.
জেলে মো. খোকনের স্ত্রী মোসাম্মত নিপা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘১০ নভেম্বর আমার স্বামী সমুদ্রে যায়। আজ ভিডিওতে শুধু তার চোখের পানি দেখেছি। আমার একটা প্রতিবন্ধী ছেলে আর ছোট একটা মেয়ে সারা দিন বাবাকে ডাকতে ডাকতে কান্না করে। আমি নিজেও অসুস্থ, সন্তানসম্ভবা। সরকারের কাছে মিনতি—আমার স্বামীসহ সব জেলেকে ফিরিয়ে এনে দিন।’
জেলে মো. সাব্বির হোসেনের স্ত্রী সীমা আক্তার বলেন, ‘চার মাস হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছু বলতে পারেনি, শুধু কাঁদছিল। সবাইকে যেন দ্রুত দেশে আনা হয়, এই আবেদন করছি।’
নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের দাবি, ভিডিও কলটি ভারতীয় পুলিশের সহায়তায় সম্ভব হয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন জেলেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, খাওয়াদাওয়াসহ অনেক কষ্টে তাঁদের দিন কাটছে। তাঁরা দ্রুত দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন স্বজনদের কাছে।
ট্রলারের প্রধান ফারুক মাঝির ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৩ জন জেলের কেউ না ফেরায় তাঁরা লালমোহন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। ঘাটে ঘাটে খুঁজেছেন। সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন। সব গণমাধ্যমে এসব সংবাদ প্রচার হয়েছে। অবশেষে খোঁজ পাওয়া গেছে।
লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাগরে মাছ শিকার করার সময় লালমোহনের জেলেদের ফিশিংবোট বিকল হয়ে যায়। ভাসতে ভাসতে ভারতের সীমানায় চলে গেলে ভারতের নৌবাহিনী তাঁদের আটক করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। আজ সোমবার দুপুরের দিকে নিখোঁজ জেলেদের একজনের মুঠোফোনে ভিডিও কল দেন তাঁর চাচাতো ভাই। সেই সূত্র ধরে পশ্চিমবঙ্গের জেল-পুলিশের সহযোগিতায় নিখোঁজ জেলেদের সঙ্গে স্বজনেরা কথা বলে জানতে পারেন এসব ঘটনা। ওসি আরও বলেন, ‘আমরা ইমিগ্রেশনে চিঠি লিখেছি। পরবর্তীতে সরকার তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ড ও কল
এছাড়াও পড়ুন:
জাহাঙ্গীরনগরে ‘বাউলের দ্রোহ’ গানের আসর বন্ধের অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে
সারা দেশে বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাউলের দ্রোহ’ শিরোনামে গতকাল রোববার বিচারগানের আসরের আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী। তবে অনুষ্ঠানটি জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গতকাল রাত পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
প্রশাসনের দাবি, বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা চলছে। গানের উচ্চ শব্দে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছিল—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজকদের অনুরোধ করলে তাঁরা গান বন্ধ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, আয়োজক ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ‘বাউলের দ্রোহ’ শিরোনামে গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাত ৯টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি শিক্ষার্থীভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপে গানের উচ্চ শব্দে পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোস্ট করেন। রাত ১০টার দিকে প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে যায়।
প্রক্টর এসে গান বন্ধ করতে বললে আমরা বলি, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে যেহেতু পালাগান, এটা শেষ হলেই বন্ধ করে দেব। কিন্তু প্রক্টর ডিরেক্ট এসে বলছেন, “প্রোগ্রাম বন্ধ, গান থামাও।”নবীন কিশোর গোস্বামী, আয়োজকদের একজনএ সময় প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম আয়োজকদের শব্দ কমানোর এবং রাত ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার অনুরোধ জানান। এরপর আয়োজকেরা শব্দ কমিয়ে অনুষ্ঠান চালাতে থাকেন।
রাত ১টার দিকে পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দ বন্ধ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান চালাবেন বলে ঘোষণা দেন। পরে সোয়া একটার দিকে তাঁরা হ্যান্ডমাইক ও ছোট সাউন্ডবক্স নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে গান বাজাতে থাকেন।
রাত ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গানের উচ্চ শব্দে তাঁরা পড়তে পারছেন না, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আয়োজকেরা সেসব মান্য করেননি এবং প্রশাসনেরও টনক নড়েনি। প্রশাসন যখন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, আমরা ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ গান বাজিয়েছি।সিফাতউল্লাহ সিফাত, ভিপি, তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদএকপর্যায়ে প্রক্টর পরিবহন চত্বরে ‘বাউলের দ্রোহের’ মঞ্চে গিয়ে আয়োজকদের গান বন্ধ করতে বলেন। তখন আয়োজকদের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, এ সময় প্রক্টর দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব আহমেদকে গালিগালাজও করেন।
আয়োজকদের অন্যতম নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী নবীন কিশোর গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানের সাউন্ড ছিল খুবই কম। শুধু মনিটরে সাউন্ড ছিল। তারপরও প্রক্টর এসে গান বন্ধ করতে বললে আমরা বলি, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে যেহেতু পালাগান, এটা শেষ হলেই বন্ধ করে দেব। কিন্তু প্রক্টর ডিরেক্ট এসে বলছেন, “প্রোগ্রাম বন্ধ, গান থামাও।” অনেক মানুষ সাক্ষী আছেন।’
পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দের গানের প্রতিবাদস্বরূপ একদল শিক্ষার্থী মাননীয় ভিসি স্যারের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাঁরাও কিছুটা উচ্চ স্বরে কিছু অ্যাকটিভিটিস করেছেন। সেগুলোও আমরা তাঁদের কাছে আশা করি না।এ কে এম রাশিদুল আলম, প্রক্টর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়অন্যদিকে গভীর রাতে পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান বাজান কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) সিফাতউল্লাহ সিফাত বলেন, ‘রাত ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গানের উচ্চ শব্দে তাঁরা পড়তে পারছেন না, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আয়োজকেরা সেসব মান্য করেননি এবং প্রশাসনেরও টনক নড়েনি। প্রশাসন যখন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, আমরা ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ গান বাজিয়েছি।’
আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে বাউল সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে ফরহাদ মজহার বললেন, পেটালে পিটুনি খাব২৪ নভেম্বর ২০২৫বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শব্দ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। কারণ, তাদের পরীক্ষা চলছে, এখন পরীক্ষার মৌসুম। অনেক শিক্ষার্থী গানের উচ্চ শব্দে মাইগ্রেনের সমস্যার কথাও জানিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজকদের শব্দ কমাতে বলেছিলাম। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য অনুরোধ করলে তারা ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় চায় এবং সে সময়ের পর আমার অনুরোধে অনুষ্ঠান শেষ করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এবং বাজে শব্দ ব্যবহার করেছে।’
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আরেকদল শিক্ষার্থীর গান বাজানো প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, ‘পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দের গানের প্রতিবাদস্বরূপ একদল শিক্ষার্থী মাননীয় ভিসি স্যারের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাঁরাও কিছুটা উচ্চ স্বরে কিছু অ্যাকটিভিটিস করেছেন। সেগুলোও আমরা তাঁদের কাছে আশা করি না।’