ডিএনসিসির প্রশাসক এজাজের দুর্নীতি-ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তদন্তে নথিপত্র চেয়েছে দুদক
Published: 1st, December 2025 GMT
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের তদন্তে প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান। চিঠি পেয়ে নথিপত্র পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুদক।
আজ ঢাকা উত্তর সিটিকে দেওয়া দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রশাসক এজাজের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান (দলনেতা) ও উপসহকারী পরিচালক সুবিমল চাকমার (সদস্য) সমন্বয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বিভিন্ন রেকর্ড ও তথ্য চেয়ে সেগুলো ৭ ডিসেম্বরের (রোববার) মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।
দুদক যেসব নথিপত্র চেয়েছেমোহাম্মদ এজাজ ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রশাসক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর যেসব কার্যক্রম করেছেন, এ–সংক্রান্ত বেশ কিছু কার্যক্রমের নথিপত্র চেয়েছে দুদক কর্তৃপক্ষ। দুদকের চাওয়া এসব তথ্যে আটটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গাবতলী পশুর হাটের ইজারা দেওয়া–সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র। পাশাপাশি ইজারা দেওয়ায় নিয়মের ব্যত্যয় নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন। ডিএনসিসি ই-রিকশা প্রকল্পের রেকর্ডপত্র (নীতিমালা, অর্থ বরাদ্দ, দরপত্র প্রক্রিয়াসহ যাবতীয় রেকর্ডপত্র এবং প্রদানকৃত ই-রিকশা তালিকা)। বনানীর বোরাক টাওয়ার–সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের রেকর্ডপত্র (মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসহ চুক্তিপত্র সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র)। বনানী কাঁচাবাজারের দোকান বরাদ্দ–সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র (সিটি করপোরেশনের দোকান বরাদ্দ আইন, নীতিমালা, বিধিবিধান ও বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের যাবতীয় তথ্য)। খিলগাঁওয়ের তালতলা সুপার মার্কেটে পার্কিংয়ের স্থানসহ অন্যান্য স্থানে দোকান নির্মাণ ও বরাদ্দ–সংক্রান্ত তথ্য।
এ ছাড়া মোহাম্মদ এজাজ প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের পর উত্তর সিটিতে যেসব সভা ও বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেসব সভার কার্যবিবরণীসহ সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ও অগ্রগতির তথ্যাদি। এর সঙ্গে ভ্যান সার্ভিস (গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহের) প্রকল্পের দরপত্র ও যাবতীয় তথ্যাদিও চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে দুদক বলেছে, তথ্যগুলোর মধ্যে যেসব কাজে দরপত্রপ্রক্রিয়া হয়েছে, সেসব কাজের ক্ষেত্রে প্রাক্কলন, অর্থ বরাদ্দপত্র, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদারের দেওয়া দর প্রস্তাব, দরপত্র উন্মুক্তের নথি, দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন, নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড, কার্যাদেশ, চুক্তি, পরিমাপের বই, চূড়ান্ত বিল ভাউচার ও চেকের যাবতীয় তথ্য।
ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুদকের দেওয়া চিঠি তারা পেয়েছেন। দুদক যেসব তথ্য চেয়েছে, সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে ওই সব তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড এনস স দরপত র র কর ড বর দ দ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, দরপত্র প্রতিযোগিতামূলক হয়নি: সিপিডি
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হওয়ায় বিদেশি কোম্পানি দরপত্রে অংশ নেয়নি বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, চার ধাপে ৫৫টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২টিতে দরপত্র পড়েছে একটি করে। ১৩টিতে কোনো দরপত্র পড়েনি। গড়ে প্রতিটি দরপত্রের বিপরীতে দর পড়েছে ১ দশমিক ৪টি। এর মানে হলো দরপত্র প্রতিযোগিতামূলক হয়নি।
সম্প্রতি সিপিডি পরিচালিত এক গবেষণা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ সোমবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিয়োজিত ১০৫টি কোম্পানির ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি কোম্পানি দরপত্র কিনেও জমা দেয়নি। ৪৪টি দরপত্রে অংশ নিয়েছে। আর বাকি ১৩টি দরপত্র কেনেনি।
সংলাপে অনলাইনে যোগ দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত একটা প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা চলছে। এতে কিছু ভুল–বোঝাবুঝির সুযোগ আছে। সবাইকে বুঝতে হবে, উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। এখন দরপত্রের মাধ্যমে যে দর পাওয়া গেছে, এগুলোর দাম অনেক কম। এটি প্রতিযোগিতামূলক দর, আর এটাই এ প্রকল্পের গ্যারান্টি। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদনের জন্য এগুলো পাঠানো হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বিশেষ ছাড়ের কোনো সুযোগ নেই। আগের মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তবে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দর পাওয়া যায়নি, সেগুলোর জন্য নতুন করে দরপত্রের ক্ষেত্রে সেমিনারের সুপারিশ বিবেচনা করা হবে।
সিপিডির জরিপ বলছে, দরপত্রে অংশ নেওয়ার জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো শিথিল করা প্রয়োজন। বিশেষ করে আর্থিক সক্ষমতা বেশি চাওয়া হয়েছে। দরপত্রে কারিগরি ও আর্থিক যোগ্যতার আলাদা বিষয় ছিল। দরপত্র কেনা ৯২টি কোম্পানির মধ্যে ৫২টি কারিগরিভাবে যোগ্য হলেও ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র করার আর্থিক সক্ষমতা দেখাতে পেরেছে ৩৫টি। আর ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র করার আর্থিক সক্ষমতা আছে ৩০টির।
জরিপ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় সৌর বিকিরণ আলাদা, তাই সব দরপত্রে একই শর্ত রাখা ঠিক হয়নি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জায়গা কাগজে–কলমে আগের চেয়ে অনেক ভালো। তবে চর্চার জায়গায় অত স্বচ্ছতা আসেনি। দরপত্র আহ্বানের পর কার্যাদেশ দেওয়ার মাঝখানের সময় অনেক বেড়ে গেছে। তবে দরপত্রে আগের চেয়ে কম দর পাওয়া গেছে।
পাওয়ার গ্রিড পিএলসির চেয়ারম্যান এম রেজওয়ান খান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা করা হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদা ১৭ হাজার। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে যেতে হচ্ছে। একের পর এক সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সময় ভাবতে হবে, এগুলো উৎপাদনে এলে রাতে বিদ্যুৎ কোথা থেকে আসবে। শুধু রাতের জন্য তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালালে খরচ বেড়ে যায়।
ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বিনিয়োগবান্ধব হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের সময় দেওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র বাতিল করেছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে। দরপত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারী আসেনি। তারা মনে করছে, এ সরকারের সময় কাজ নিলে পরের সরকার আবার তা বাতিল করতে পারে।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের সংগঠন ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিপিএ) সভাপতি ডেভিড হাসনাত বলেন, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে বিদ্যুৎ খরচ হিসাব করতে চান। অথচ নানা রকমের পার্থক্য থাকে। সৌদিতে সূর্যের বিকিরণ বেশি, তাই খরচ কম। নীতিনির্ধারকেরা এটা বুঝতে চান না। সরকারের উচিত বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসে নীতি ঠিক করা।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগে দরপত্র ছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হতো। আগের ব্যবস্থার চেয়ে বর্তমান ব্যবস্থাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। তবে দক্ষতার বিচারে এ প্রক্রিয়া আগের চেয়ে পিছিয়ে। পুনরায় দরপত্রে যাওয়ার আগে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা কমিয়ে ছোট ছোট কেন্দ্র করা দরকার। আর্থিক সক্ষমতাও শিথিল করা দরকার।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ডেপুটি হেড অব মিশন ক্লিনটন পোবকে, বিইপিপিএর সাবেক সভাপতি ইমরান করিম, বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউবেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ, জিসোলারিক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন আখতার, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের উপপরিচালক রাজিয়া সুলতানাসহ অনেকে। জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আতিকুজ্জামান সাজিদ।